চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরপরই অবসর নিতে পারেন ভারতের দুই মহাতারা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি-এমন একটা জল্পনা চলছিল। তবে ট্রফি জেতার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অবসর নিয়ে একটা বাক্যও উচ্চারণ করলেন না দু'জনের কেউই। বরং চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক রোহিত যে সব কথাবার্তা বললেন, তাতে অনেকটা স্পষ্ট খেলাটা আরও চালিয়ে যেতে চান। বিশেষত একদিনের ক্রিকেট। তাহলে কী ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও খেলবেন? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলনেই সব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে ৩৭ বছর বয়সী রোহিত বলেন, ‘আমি এই সংস্করণ থেকে অবসর নিচ্ছি না। এ বিষয়ে যেন কোনো গুজব না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতেই কথাটা বললাম।’

দুবাইয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে ভারত। নয় মাসের মাথায় রোহিতের নেতৃত্বে দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় ভারতের। এর আগে গেল বছর আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মুকুটও জিতেছিল ম্যান ইন ব্লুরা।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সঞ্চালক ইয়ান বিশপের প্রশ্নের উত্তরে রোহিত বললেন, “দারুণ লাগছে জিততে পেরে। গোটা প্রতিযোগিতা জুড়েই আমরা ভালো খেলেছি। ফাইনালেও জেতার অনুভূতিটা বাকিগুলোর থেকে আলাদা। যেভাবে খেলেছি সেটা বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে।”

এর পরেই আগ্রাসনের কথা উঠে এল তার মুখে। বললেন, “অনেকেই জানেন, আমার স্বাভাবিক খেলা নয় এটা। কিন্তু এই ধাঁচেই খেলতে চেয়েছিলাম। যখন আপনি আলাদা কিছু করছেন, তখন দল এবং কোচেদের সমর্থন খুব দরকার হয়। আগে রাহুল ভাইয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম। এখন গৌতি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা দু’জনেই আমাকে সমর্থন করেছে। তাই আগ্রাসী খেলা চালিয়ে গিয়েছি। গত কয়েক বছর অন্য ভাবে খেলেছি। এখন অন্য ভাবে খেলে ফলাফল পাচ্ছি।”

কী ভাবে সাফল্য পাওয়া যাবে সেটাও তাঁর কাছে স্পষ্ট। রোহিত বলেছেন, “সবার আগে বুঝতে হবে পিচ কী রকম। সেই অনুযায়ী খেলতে হবে। আজ প্রথম পাঁচ-ছয় ওভার কীভাবে খেলব সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা ছিল। আগে আগ্রাসী খেলতে গিয়ে আউট হয়েছি। তবে শট মারার ধরনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। দলের ব্যাটিং গভীরতা আমাকে আরও স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ করে দেয়। জাদেজার মতো ক্রিকেটার আট নম্বরে খেলতে নামছে। এটাই আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে বাধ্য।”

এক সময় টানা উইকেট পড়লেও যেভাবে কেএল রাহুল শেষ পর্যন্ত থেকে ম্যাচ বার করে দিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন রোহিত। একইসঙ্গে বোলার বরুণ চক্রবর্তীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে তার মুখে। রোহিতের কথায়, “রাহুলের মানসিকতা নিয়ে কী আর বলব। চাপে পড়লে কখনও সেটা দেখাতে ভালবাসে না। আজ একাই ম্যাচটা শেষ করে এলো। চাপের মুখে ঠিক যে শটটা খেলতে হবে সেটাই খেলে। বাকিদের স্বাধীন ভাবে খেলার সুযোগ করে দেয়। আজ যে রকম হার্দিককে খোলা মনে খেলতে দিল।”

রোহিতের সংযোজন, “আগেই বলেছি, বরুণের মধ্যে আলাদা একটা ব্যাপার রয়েছে। এ ধরনের পিচে খেলতে গেলে ওর মতো বোলারদেরই দরকার। শুরুর দিকে খেলেনি। পরের দিকে খেলে অনেক উইকেট নিয়েছে। নিউ জ়‌িল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে পাঁচ উইকেটের কথাই ধরুন। আমাদের সাহায্য করেছে।”

এদিকে, চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোহলির মুখে শোনা গেল তরুণ প্রজন্মের কথা। দলে যে প্রতিভা রয়েছে তাতে নিশ্চিন্ত তিনি। কোহলি বলেন, “ড্রেসিংরুমে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। ওরা ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা খালি ওদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছি। আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছি। ওদের জন্যই এই দলকে এত শক্তিশালী দেখাচ্ছে।”

এই জয়ের কৃতিত্ব দলের সকলকে দিয়েছেন কোহলি। যেভাবে প্রত্যেকে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন তার প্রশংসা শোনা গিয়েছে কোহলির মুখে। তিনি বলেন, “কঠিন পরিস্থিতিতে সকলে মিলে ম্যাচ জিততে হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা সেটাই দেখিয়েছি। প্রত্যেকে নিজের কাজ করেছে। দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা অনুশীলনে পরিশ্রম করেছি। সেটা ম্যাচে দেখা গিয়েছে।”

ক্যারিয়ারে শেষ দিকে পৌঁছেছেন কোহলি। আর কত দিন ভারতের জার্সিতে তাকে দেখা যাবে তা নিয়ে বার বার জল্পনা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলের তরুণ প্রজন্মকে দেখে খুশি কোহলি। দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিন্ত তিনি। কোহলি বলেন, “যখন আপনি ছাড়তে চান, আপনি চেষ্টা করেন দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছাড়তে। দলের ভবিষ্যৎ ভালো হাতে রয়েছে। আমাদের যা দল তাতে আগামী ৮ থেকে ১০ বছর ক্রিকেট শাসন করার জন্য আমরা তৈরি।”

এফআই/এমটিআই