ছবি: সংগৃহীত

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সেদিন ইতিহাস রচনা করেছিল অধিনায়ক আকবর আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ঠিক এক বছর আগে আজকের এই দিনেই দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে শক্তিশালী ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ। এক বছর পরেও দেশকে গৌরবে ভাসানোর সেই স্মৃতি টাটকা আকবর আলি, রকিবুল হাসানদের কাছে।

জাতীয় দল হোক বা বয়সভিত্তিক, বাইশ গজে ভারতের মুখোমুখি হলেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই বৃত্ত ভাঙে বাংলাদেশ নারী দল। এশিয়া কাপের মঞ্চে ভারতীয় মেয়েদের হারিয়ে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক শিরোপার স্বাদ এনে দেন সালমা খাতুন, জাহানারা আলমরা।

তবে ভারতীয় যুবাদের বিপক্ষে কিছুতেই পেরে উঠছিল না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল হারের পাশাপাশি ঘরের মাঠে যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে খুব কাছে গিয়েও আশাহতের বেদনায় পুঁড়তে হয় আকবরদের।

অবশেষে বড় মঞ্চে বাজিমাত যুব টাইগারদের। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, এক বছর আগে ঠিক আজকের এই দিনেই দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বজয় বাংলাদেশের। এরপর দেশে ফিরে ক্রিকেট বোর্ডের রাজকীয় অভ্যর্থনা পায় বিশ্বকাপজয়ী দল। আনন্দ উদযাপনের মঞ্চ তৈরি ছিল আরো। তবে সে সব ভেস্তে দিয়েছে করোনাভাইরাস। তাতে কিছুই এসে-যায়নি বিশ্বকাপজয়ী দলের। ঠিক এক বছর পরেও সেই স্মৃতি মনে করে তৃপ্তির ঢেকুর আকবর আলিদের কণ্ঠে।

বিশ্বজয়ের বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকা পোস্টকে নিজের অনুভূতি জানিয়ে আকবর বলেন, ‘দেখতে দেখতে এক বছর চলে গেল। স্মৃতি টাটকা এখনো। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। অনেক ভালো একটা অনুভূতি। দেশের হয়ে কিছু জয় করা অন্য কোনকিছুর সঙ্গে তুলনা হয় না। এমন অর্জন এনে দিতে পেরে গর্বিত। আমাদের জন্য এই দিনটি বিশেষ ছিল। বিশেষ হয়েই থাকবে।’

সেদিন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন অধিনায়ক আকবর। দলের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ৭৭ বলে ৪৩ রানে হার না মানা এক ইনিংস উপহার দেন তিনি। ১৭৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও বৃষ্টির আগে কপালে চিন্তা ভাজ পড়েছিল ৭ উইকেট হারিয়ে। তবে ক্রিজে আকবরকে যোগ্য সঙ্গে দেন অলরাউন্ডার রকিবুল হাসান। বাঁহাতি এই স্পিনারের ব্যাটেই এসেছিল ম্যাচ জেতানো শট। নিয়ম করে সেই ভিডিও চিত্র দেখেন রকিবুল। এক বছর পরেও অনুভূতি প্রকাশের ভাষা হারিয়েছেন রকিবুল।

এই অলরাউন্ডার জানান, ‘এই অনুভূতি আসলে কোনও ভাষা দিয়েই প্রকাশ করা যাবে না। ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় বিশেষ কিছু ছিল আমাদের জন্য। ওদের সঙ্গে আমরা এশিয়া কাপ হেরেছিলাম, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল হেরেছিলাম, তবুও বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামার আগে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল না আমাদের। আমরা দেশ ছেড়েছিলাম প্রতিজ্ঞাবন্ধ হয়ে, শিরোপা জেতার লক্ষ্য ছিল আমাদের। আজ গর্ব হয়, সে লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছিলাম আমরা।’

এক বছর পর নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে আকবর বললেন, ‘এক বছর পর যদি বলনে, আমি আমার নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট। যেখানে আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এর থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না। জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ায় আক্ষেপ নেই। দেখেন, করোনার কারণে তো দীর্ঘদিন খেলাই ছিল না। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ আর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছি। সবেমিলিয়ে ভালো একটা অনুভূতি।’

রকিবুলের ভাষায়, ‘আমি এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তা নিয়ে খুশি। আক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বলতে পারেন জাতীয় দলের এখনো সুযোগ আসেনি। তবে এসব নিয়ে এখনই কোনও ভাবনা নেই আমার। আমি আমার কাজটা ঠিকমতো করতে থাকলে, সুযোগ ঠিকই একদিন আসবে।’

টিআইএস/এটি