‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারা সবচেয়ে আনন্দের’
চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) প্রথম পর্বে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন নাঈম শেখ। আবাহনীর হয়ে খেলা এই ওপেনার এবারের আসরে ১১ ইনিংসে ৮৯.৮৭ গড়ে ৭১৯ রান করেছেন। এর মধ্যে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে সাতটি অর্ধশতক। যেখানে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৫.২৩। প্রথম রাউন্ড শেষে কিছুটা বিরতি পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। ফলে ঈদ করতে ফরিদপুরে পরিবারের কাছে ছুটে গিয়েছেন নাঈম শেখ।
ঢাকা থেকে নিজেই ড্রাইভ করে নাঈম বাড়িতে গিয়েছেন। সেখান থেকেই তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। জানিয়েছেন ঈদ উদযাপন, ডিপিএলে ধারাবাহিক ব্যাটিং নিয়েও। নাঈমের সেই সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
বিজ্ঞাপন
প্রথমত ঈদের শুভেচ্ছা...
নাঈম : আপনাকেও শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।
বাড়িতে ঈদ আর বাড়ির বাইরের ঈদ কতটা তফাৎ মনে হয়?
নাঈম : আমি সবসময়ই বাসায় ঈদ করি। তবে বাইরে দুইটা ঈদ করেছি। পরিবারের সঙ্গে থাকলে কিন্তু মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অধিকাংশ সময় কিন্তু আমরা পরিবারের চেয়ে দূরে থাকি। সেই কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা পারা অন্যরকম আনন্দের। যা আসলে মুখে বলে বোঝানো যাবে না। ঈদের সময় অন্যান্য কাজিনরাও থাকে বলে সবমিলিয়ে ঈদটা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
ছোট বেলার ঈদকে নিশ্চয়ই মিস করেন?
নাঈম : অবশ্যই (চোখেমুখে হাসি নিয়ে)। অনেক বেশি মিস করি। বেশি মিস করি সালামি নেওয়াটা। এখন উল্টো হয়ে গেছে, বড় হয়ে গেছি বলে আমার দিকেই সবাই চেয়ে থাকে। যদিও এটা ভালো লাগে।
আমি সবসময়ই বাসায় ঈদ করি। তবে বাইরে দুইটা ঈদ করেছি। পরিবারের সঙ্গে থাকলে কিন্তু মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অধিকাংশ সময় কিন্তু আমরা পরিবারের চেয়ে দূরে থাকি। সেই কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারা অন্যরকম আনন্দের। যা আসলে মুখে বলে বোঝানো যাবে না। ঈদের সময় অন্যান্য কাজিনরাও থাকে বলে সবমিলিয়ে ঈদটা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
ঈদের দিন কিভাবে সময় কাটালেন?
নাঈম শেখ : নরমালি সকালে নামায পড়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছি। এরপর বাসার মধ্যে আড্ডা এবং বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছি।
ক্রিকেটে ফেরা যাক, ডিপিএল কেমন উপভোগ করছেন?
নাঈম : আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ১১ ইনিংসে খেলা হয়েছে। মোটামুটি সব ম্যাচে চেষ্টা করেছি ধারাবাহিকতা ধরে রাখার।
আসর শুরুর আগে ভেবেছিলেন কি এতো ভালো করতে পারবেন?
নাঈম : ডিপিএলে সবসময় আমার চাওয়াটা একটু বেশিই থাকে। আমি ভালো করব, নিজের উপর এরকম কনফিডেন্স থাকে। সেদিক থেকে প্রতিবারের ডিপিএলে আমার ফোকাস থাকে যে, আমাকে অন্যরকম কিছু করতে হবে। আমার প্রস্তুতি সবসময় ভালো থাকে ডিপিএলে, আমি এনজয় করি। অনেক সময় এনসিএল বা বিসিএলের জন্য প্রস্তুতি পাওয়া যায় না। তবে আমি প্রত্যেকবারই ডিপিএলের সময় প্রস্তুতির সময় পাই।
আপনার স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক কথা হয়, সেটা নিয়ে আলাদা কাজ করছেন কিনা?
নাঈম : ওয়ানডে নিয়ে আমার ওরকম চোখে পড়েনি। লিস্ট এ ক্রিকেটে আমার স্ট্রাইক রেটটা দেখলে বোঝা যাবে। আমার ৮৮ বা ৯০ আছে, এটা খারাপ না। তবে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যেটা বলছেন সেটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হতে পারে। টি-টোয়েন্টি নিয়ে ডিপিএলের মধ্যে আসলে কাজ করা হয়নি। এসব নিয়ে চিন্তা করছি না, আমি শুধু ম্যাচ ধরে ধরে চিন্তা করছি। যাতে আরও ভালো করা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে ট্রলের বিষয়টা কিভাবে দেখেন?
নাঈম : সত্যি কথা বলতে অনেক কিছুই সামনে পড়ে। তবে ওভাবে চিন্তা করার কিছু দেখি না। কিছু মানুষের কাজই এরকম যে ট্রল করা। আবার কিছু মানুষ আছে এসবে উৎসাহ দেয়। ট্রলের ব্যাপারটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না, আমি শুধু ভালো খেলে যেতে চাই। আমি এনজয় করার চেষ্টা করি এগুলো, গায়ে লাগাই না আরকি।
প্রধান কোচ হয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ফিরেছেন, তার সঙ্গে কোনো আলাপ হয়েছে?
নাঈম : আমাদের একটা কনফারেন্স হয়েছিল পুলের সকল ক্রিকেটারকে নিয়ে। তবে সেখানে আমি ছিলাম না, বিসিএলে ছিলাম। তবে ২ টা ম্যাচ পায়ের সার্জারির জন্য মিস করেছি। পরবর্তীতে দেখা হলে ডিপিএলের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন এবং বলেছিলেন পরে কথা হবে। এরপর আর দেখা হয়নি। তবে সুজন স্যার বলেছেন তিনি খোঁজ রাখছেন, যারা ভালো করছে তাদের বলেছেন আরও ভালো খেলতে।
আরও পড়ুন >> ডিপিএলে ব্যাটারদের শীর্ষে নাঈম-বিজয়
ভারত বিশ্বকাপে নিজেকে বাংলাদেশ দলে দেখছেন?
নাঈম : ডিপিএলটা ভালোভাবে শেষ করি আগে। তারপর চিন্তা করব ইনশা-আল্লাহ।
কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে আলাদা করে কি কথা হচ্ছে নিয়মিত?
নাঈম : প্রত্যেক ম্যাচেই কথা হচ্ছে, ৫০-৬০ বা ৭০ যত রানই করছি। কোচদের তো আশা সবসময় বেশি থাকে খেলোয়াড়ের ওপরে। ভালো হলেও বলেন আরেকটু ভালো করতে। আমি সেঞ্চুরি করলেও বলেন আরো ভালো করতে হবে, ফিফটি বা ৭০ করলেও বলেন ১০০ করতে পারতি। এরকম প্রতি ম্যাচেই উনি ভালো করার তাগিদ দেন। দলে আমার রোল স্যার প্রথমেই ক্লিয়ার করে দিয়েছেন। আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমি যেন আমার মতো খেলি।
এমন ধারাবাহিক রানের কারও টোটকা কাজ করছে কি?
নাঈম : লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটটা আমার কাছে অনেক স্বচ্ছ। কিভাবে ওয়ানডে খেলতে হবে এটা আমি ক্লিয়ার, এরপর নিজেকে কিভাবে সেরা পারফর্মার বানানোর কাজ। তবে জাতীয় দলের সাবেক কিছু ক্রিকেটার আমাকে সাহায্য করেছেন। বিপিএলে রংপুরে খেলেছি, সে সময় কিংবা তার আগে-পরে তারা অনেক বেশি সাহায্য করেছেন।
দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে আছেন, এই সময়ে সিনিয়র কোনো সতীর্থের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছেন কিনা?
নাঈম : ওরকম না, তবে সামনাসামনি দেখা হলে সবসময় বলেছে যে সমস্যা নেই, শক্তভাবে ফিরে আসবা। ভালো প্রস্তুতি নাও।
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী যারা রয়েছেন, তাদের উদ্দেশে কি বলবেন?
নাঈম : ভালো খারাপ সব সেক্টরেই রয়েছে। তো কিছু মানুষের কাজই এমন ট্রল বা হেট করা। তাদের উদ্দেশে আসলে কিছু বলার নেই। শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য বলব যে খারাপ ভালো সবসময় যারা পাশে ছিলেন, এভাবে পাশে থকবেন। আমি নিজেকেও ছাড়িয়ে যেতে চাই, ইনশা-আল্লাহ।
এসএইচ/এএইচএস