মুলতানের কান্না, রাওয়ালপিন্ডির হাসি
২০০৩ সাল। টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত নবীন দেশের পাকিস্তান সফর। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে স্বাগতিকের সিরিজ জয়। গুরুত্বহীন শেষ ম্যাচই ছিল নাটকীয়তা ও উত্তেজনায় ভরপুর।
টেস্টের নবীন দল বাংলাদেশ মুলতান টেস্টে জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। চতুর্থ ইনিংসে স্বাগতিক পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ২৬২ রান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা। কিন্তু এক প্রান্তে উইকেট আগলে রাখেন ইনজামাম। তার অসাধঅরণ শতকে পাকিস্তান এক উইকেটে ম্যাচ জিতে। এতে বাংলাদেশ অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন কান্না করে মাঠ ছাড়েন।
বিজ্ঞাপন
ইনজামাম ঐ সময় খুবই অফ ফর্মে ছিলেন। মুলতানের সুলতানের দল থেকে বাদ পড়ার মতো অবস্থাও হয়ে ছিল। নিজ শহরে তাই নিজেকে আবার ফিরে পাওয়ার চেষ্টা ছিল ইনজামামের। প্রথম ইনিংস ১০ রান করা ইনজামাম দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ২৬১ রানের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি রান আসে তার ব্যাট ধরেই। শুধু রানের বিচারে নয়, সময় ও বলের বিচারেও ইনিংসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐ ইনিংস খেলতে ইনজামাম খেলেছেন ২৩২ বল আর ক্রিজে ছিলেন ৩১৭ মিনিট।
ইনজামামের অসাধারণ ইনিংস ছাড়াও মুলতান টেস্টে আরো অনেক ঘটনাই ছিল। ইনজামাম কয়েক দফা লেগ বিফোরের সিদ্ধান্ত থেকে বেঁচে যান। ডিআরএস যুগে থাকলে সেই দিনের গল্প ভিন্ন হতেই পারতো। আম্পায়ার সিদ্ধান্ত ছাড়াও বাংলাদেশের বোলার রফিক একবার মানবিকতাও দেখিয়েছেন। মান কাডিংয়ের সুযোগ পেয়েও করেননি।
বিজ্ঞাপন
মুলতান টেস্ট সবচেয়ে বেশি আলোচিত রশিদ লতিফের ক্যাচ কেলেঙ্কারিতে। অলক কাপালির ব্যাট ছুয়ে বল মাটি স্পর্শ করলেও রশিদ লতিফ ক্যাচের আবেদন করেন। তার আবেদনে আম্পায়ারও সাড়া দেন। টিভি রিপ্লেতে পরবর্তীতে দেখা গেছে বল মাটি স্পর্শ করেছিল। মুলতান টেস্টে লঙ্কান আম্পায়ার অশোকা ডি সিলভা, জিম্বাবুয়ের রাসেল টিফিনের আম্পায়ারিং ছিল চরম প্রশ্নবিদ্ধ।
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৫ সালের জানুয়ারির আগেই বাংলাদেশ টেস্ট জয়ের আনন্দে উল্লাস করতে পারতো। মুলতান ট্র্রাজেডির জন্য অবশ্য হয়নি।
২১ বছর পর বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানে টেস্ট জিতেছে। দুই দলে মধ্যকার ১৪ টেস্টের মধ্যে এটাই প্রথম জয় বাংলাদেশের। গতকাল চতুর্থ দিন পর্যন্ত খেলা ড্রয়ের দিকেই ছিল। আজ নাটকীয়ভাবে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের করে নিয়েছেন। পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান এক প্রান্তে ছিলেন। বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের আশঙ্কা ছিল আরেকটি ইনজামাম ঘটনা হয় কিনা। সেটা অবশ্য হয়নি। বাংলাদেশ রাওয়ালপিন্ডিতে জয়ের উল্লাস করেছে। বন্যা ও নানা বিধ সমস্যার মধ্যে থাকা বাংলাদেশকে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন শান্তরা। সুজন-সুমনরাও খানিকটা প্রশান্তি পেয়েছেন।
এজেড/এইচজেএস