সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। মোহামেডানকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বার এবং সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টটির ২৪তম শিরোপা ঘরে তুলল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। এবারের আসরে আবাহনী দলটি গড়া হয় জুনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে তাদের সমন্বয় করা হয়। তাতেই সাফল্য পেলেন পুরোদমে কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া আবাহনীর কোচ হান্নান সরকার।

শিষ্যদের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি বিসিবির সাবেক এই নির্বাচক। শিরোপা জয়ের পর হান্নান ঢাকা পোস্টকে শিরোপা জয়ের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে দলের পরিবেশ, ক্রিকেটার এবং বোনাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটার।

কতটা স্বস্তির এই ট্রফি জয়...
হান্নান : যেকোনো অবস্থাতেই শিরোপা জেতাটা স্বস্তির। তবে এবারের বিষয়টা একটু আলাদা। এর আগে আমি হয়তো ট্রফি জিতেছি, কিন্তু সেটা প্রধান কোচ হিসেবে নয়। প্রধান কোচ হিসেবে শিরোপা জিততে পারা সবসময় আনন্দের।

আপানার তরুণ দলটা শিরোপা জিতবে এমনটা ভেবেছিলেন শুরুতে?
হান্নান : বিশ্বাস ছিল যে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে ভালো কিছু হবে। যেহেতু আমি নয় বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকে দূরে ছিলাম। শিরোপা জেতার জন্য হয়তো অনেক কিছু করার বা দেখার প্রথম হয়েছে সুযোগ হয়েছে এবার। ৯ বছর পর কোচ হিসেবে ফিরলাম ডিপিএলে। এতদিন না থাকার কারণে একটা গ্যাপ তো ছিল। তবে দলের দুই সদস্য শান্ত-মোসাদ্দেক ছাড়াও বাকিরা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে। 

দলটা জুনিয়র ক্রিকেটারে ঠাসা, মোসাদ্দেক-মিঠুন (শান্ত’র জাতীয় দলের ব্যস্ততা ছিল) ছাড়া…
হান্নান : দল করার ক্ষেত্রে আমার একটা নজর ছিল, আমি যাদের ওপর বিশ্বাস করি তাদেরকে নিয়েছি। কাছ থেকে যাদের দেখেছি এবং আমি চিনি আগে থেকে, তাদের ওপর একটা আলাদা বিশ্বাস ছিল। একসঙ্গে কাজ করলে আসলে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়। যাদের সঙ্গে নাইনটিনে (অনূর্ধ্ব-১৯) কাজ করেছি, তারা অনেকেই আছে দলটাতে। যে কারণে তাদের প্রতি একটা ট্রাস্টের জায়গা আছে।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেললে যে আমার দলে খেলবে বিষয়টা আসলে এরকমও না। যাদের ওপর আসলে আমার বিশ্বাসটা ছিল তারা আমাকে সেভাবেই ফিডব্যাক দিয়েছে।

ফাইনালে মিথুনের ৬৬, মোসাদ্দেকের ৭৮ রানের ইনিংস দুটি কীভাবে দেখেন…
হান্নান : ডিপিএলে ভালো রেজাল্ট করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার বিকল্প কিছু নাই। অভিজ্ঞ প্লেয়ার লাগবে আমি সেটা প্রথম থেকেই বলেছি। আমি সবসময় বলেছি আমার দলে ক্যাপ্টেন্সি করেছে দুইজন। কিন্তু পেছন থেকে আরও দুজন সাহায্য করেছে সব সময়। আজকে মিথুন-মোসাদ্দেক দেখিয়েছে, ঢাকা লিগে তাদের অভিজ্ঞতাটা কেমন। এ ধরনের চাপের ম্যাচে সেটার প্রমাণ করল আবার। এরকম ফাইনাল ম্যাচে তাদের অভিজ্ঞতার অনেক মূল্য রয়েছে।

কোচ হিসেবে জিতলে নাকি নির্বাচক হিসেবে জিতলে আনন্দ বেশি লাগে…
হান্নান : আসলে এগিয়ে রাখার তুলনায় যাব না, দুইটা দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ। একটা বাংলাদেশের হয়ে জিতেছি আর আজকেরটা ডিপিএলের চ্যাম্পিয়নশিপ। কোনোভাবে মেলানোর সুযোগ নেই। বিপিএলেও আমি জিতেছি। চার বছর পর আসলে কোনো দলের সঙ্গে কোচ হিসেবে কাজ করতে পেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এটা আসলে অন্যরকম আনন্দ। 

আপনার দলে পেমেন্ট ইস্যু নিয়ে কোনো বিতর্ক শোনা যায়নি…
হান্নান : গতকালকে অনুশীলনের পর ক্রিকেটারদের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পেমেন্ট ক্লিয়ার হয়েছিল। এরপর আজকে আমরা একটা ডিনারে যাব। সেখানে বাকি যত টাকা আছে সেটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ। রাতে আমাদের একটা দলীয় ডিনার রয়েছে।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দল থেকে বোনাসের কথা বলা হয়েছে নিশ্চয়ই!
হান্নান : বোনাসের কথা আমার মৌখিকভাবে বলা আছে। সেটা হয়তো আজকে হাতে পাবে না ওরা। সেই অ্যামাউন্টের বিষয়ে আজকে সরাসরি কথা বলা হবে ওখানে। আমি সবসময় একটা জিনিস নিশ্চিত করি যে, ক্রিকেটারদের ব্যাসিকটা। ক্রিকেটারদের পেমেন্ট আগে নিশ্চিত হবে, এরপর বোনাস। 

ডিপিএলে ভালো রেজাল্ট করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার বিকল্প কিছু নাই। অভিজ্ঞ প্লেয়ার লাগবে আমি সেটা প্রথম থেকেই বলেছি। আজকে মিথুন-মোসাদ্দেক দেখিয়েছে, ঢাকা লিগে তাদের অভিজ্ঞতাটা কেমন। এ ধরনের চাপের ম্যাচে সেটার প্রমাণ করল আবার। ফাইনাল ম্যাচেও অভিজ্ঞতার অনেক মূল্য রয়েছে।

অনেক বড় স্কোয়াড ছিল, কয়েকজন সুযোগও পায়নি। যারা পেয়েছে তাদের নিয়ে কতটা খুশি?
হান্নান : আমি আসলে প্রথম তিনজন ক্রিকেটারের নাম মেনশন করতে চাই। যাদের জন্য আসলে দুঃখিত। তাদেরকে একটা ম্যাচও আমি খেলাতে পারিনি। বাকি যারা খেলেছে, তাদের কাছে যা যা প্রত্যাশা করেছি পেয়েছি। সবাই সবার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সফলতা অবশ্য সবাই পায় না, তবে চেষ্টা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, আমার কাছে আসলে এটাই প্রাপ্তি। 

ব্যাটে-বলে ভালো করেছেন মোসাদ্দেক, তার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন কি?
হান্নান : ‘এ’ দলে যখন একজন ক্রিকেটার খেলে, তখন তাকে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনায় রাখার কারণে কিন্তু সুযোগ পায়। আমি মনে করি যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে বা নির্বাচক যারা আছেন, তারা তাকে জাতীয় দলের জন্য চিন্তা করেছে বলেই ‘এ’ দলে রেখেছে। এখন ‘এ’ টিমে যদি ভালো খেলতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে জাতীয় চলে খেলার সুযোগ পেতে পারে।

এসএইচ/এএইচএস