বাংলাদেশ জাতীয় দলের পারফরম্যান্স সবশেষ কয়েকটি সিরিজ বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, ফলাফল ভালো না। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও হেরেছে মুশফিকুর রহিম-নাজমুল হোসেন শান্তরা। তবে বাংলাদেশ হাই পারফরম্যান্স দল (এইচপি) দক্ষিণ আফ্রিকা হাই পারফর্মম্যান্স দলকে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়েছে।

রাজশাহীতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে আজ মাঠে নেমেছিল দুই দল। যেখানে ২২৫ রান করেও জয় তুলে নিয়েছে আকবর আলির দল। তিন ম্যাচ দেখে অবশ্য দলকে বিবেচনা করা বা বড় কিছু অনুমান করা কঠিন। তবে বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, 'সকালের সূর্য দেখলেই দিনের বাকিটা অনুমান করা যায়।' তেমনি বর্তমান এইচপি দলের ক্রিকেটারদের নিবেদন বা চেষ্টা দেখে ভালো কিছুর আশা করাই যায়।

হার না মানার লড়াকু মানসিকতাই দেখা গিয়েছে সবকটি ম্যাচেই। জাতীয় দলের ক্ষেত্রে অবশ্য দেখা যায় ইদানিং কমিটমেন্টের বড় অভাব! কমিটমেন্ট বলতে দায়িত্ব নিয়ে খেলার যে ব্যাপারটা সেটা এইচপির জুনিয়ররা তিন ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছেন।

আজকের ম্যাচের চিত্রই দেখুন ১১৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর কে ভেবেছিল বাংলাদেশ ২২৫ রান করবে? তবে সেটি করে দেখিয়েছেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার রাব্বি-রাকিবুলরা। পরে বোলাররাও বল হাতে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। ২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়া ব্যাটারদের টাইগার স্পিনাররাই ধসিয়ে দেন। এর আগে দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৩৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করেছিল ৩২২ রান। স্রেফ ১০ রানের পরাজয়, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল আকবররা।

সিরিজজুড়ে নিজেদের সক্ষমতার জানানই দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ২০২০ সাল থেকে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা চ্যাম্পিয়ন মন মানসিকতার ছাপ দেখা যায়। যে কারণে তরুণ এসব ক্রিকেটারদের কাছে ভবিষ্যতের জন্য দেশের হয়ে একটি ট্রফি আশা করাই যায়।

সিরিজ জয়ের পর বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন, 'আমি আসলে হার না মানা বলবো না। স্পিরিট অব দ্য গেম বলবো, এটা গুরুত্বপূর্ণ। এইচপি একটা উন্নতির জায়গা খেলার জন্য আসলে। তবে যে তিনটা খেলা হলো খুব ভালো লাগছে, একটা দুর্দান্ত সিরিজ হয়েছে বলব।'

দলের সবাইকে সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়ে লিপু বলছিলেন, 'আমরা চেয়েছিলাম সবাইকে খেলাতে। আজকে দেখেন জিসান কিন্তু খেলেনি। আমরা চাইছি সবাই অভিজ্ঞতা অর্জন করুক ম্যাচ খেলার। এখানে খেলার পরে তো সাদা বলে কিছু খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। সামনে লাল বলে খেলা সেখান থেকে কিছু খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে এমনটা প্রত্যাশা।'

পরে স্পিরিট অব দ্য গেম প্রসঙ্গে লিপু আবারো ব্যাখা দিলেন আজকের ম্যাচ নিয়ে, 'আজকে দেখেন যে একটা সীমিত পুঁজি নিয়ে যে একটা লড়াকু মনোভাব সেটা কিন্তু ফিরে এসেছে। তাই স্পিরিটের গেম এটাকে বলা হয়ে থাকে। এখানে আমার মনে হয়েছে যে ভবিষ্যৎ আমাদের পেসারদের দায়িত্ব নিতে হবে যে, কিভাবে ভালো বল করতে হবে এমন উইকেটে। আজকে আমাদের মাত্র এক জন পেসার খেলেছে, সাদা বলে কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে পেসারদের জানতে হবে।'

এইচপি দলের প্রধান কোচ ডেভিড হেম্পও স্বীকার করে নিয়েছেন সিরিজের সবকটি ম্যাচই প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ খেলা হয়েছে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলছিলেন, 'এক কথায় বলব দারুণ খেলা হয়েছে। রেজাল্ট নিয়ে অবশ্যই খুশি বলব। আজকের ম্যাচে স্পিনাররা দারুণ করেছে।'

এদিকে জাতীয় দলের সবশেষ খেলায়ও দর্শক নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। তবে রাজশাহীতে তিনটি ম্যাচেই ছিল দর্শকদের উন্মাদনা। এ নিয়ে এইচপি এবং গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম ঢাকা পোস্টকে জানান, 'আমি তো খেলা দিতেই চাই, তবে মাঠের কিছু সংস্কার দরকার। কিছু ফ্যাসিলিটিজ দরকার আছে। আমি একটা ডিজাইনও করে দিয়েছিলাম, বাকিটা যদি বোর্ড এবং সভাপতি এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে আরো বেশি ভালো। 'এ' টিম বা অন্যান্য খেলাও দেয়া যাবে রাজশাহীতে। এখন রাজশাহী অনেক এগিয়ে রয়েছে, এখানকার ক্রিকেট প্রেমী অনেক। মাঠ এবং ফ্যাসিলিটিজ উন্নয়ন করলে আরো বড় খেলা দেওয়া যাবে।'

এইচপি দলের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জানতে চাইলে মাহবুব আনাম বলেন, 'আপনি একটা জিনিস দেখবেন এবার কিন্তু আমরা প্রত্যেকটা প্লেয়ারকে খেলানোর চেষ্টা করেছি। সবাইকে দেখার লক্ষ্য ছিল সবাইকে একটা দুইটা করে ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় বের করার চেষ্টা থাকবে। অবশ্যই তাদের সুযোগ সুবিধার দিকে নজর রয়েছে, সারা বছরই তাদের ক্যাম্প হবে। খেলার ভিতরে থাকবে, আগামী মাস থেকে ট্রেনিং করবে। এরপর আবার ট্যুর থাকবে।'

এসএইচ/এইচজেএস