বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ২১টি খেলার প্রশিক্ষণ হয়। সেই ২১ খেলার ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) বিকেএসপি এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এই সভায় ফেডারেশনগুলো বিকেএসপির প্রতি চাহিদা আর বিকেএসপি ফেডারেশনগুলোর প্রতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। বিগত সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে এরকম কোনও সভা হয়নি। বিকেএসপি ও ফেডারেশনগুলোর এই মতবিনিময়ের মধ্যস্থতা করেছে এনএসসি।

বর্তমানে ক্রিকেট বাংলাদেশের শীর্ষ খেলা। ক্রিকেট বোর্ডও সবচেয়ে ধনী। নব্বইয়ের দশকে ক্রিকেট ও ক্রিকেট বোর্ড উভয়ের ছিল রুগ্ন চিত্র। সেই সময়ে বিকেএসপির অবদান উল্লেখ করে আজকের সভায় বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই টুর্নামেন্টের পুরো প্রস্তুতিই হয়েছিল বিকেএসপিতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিকেএসপির অবদান অনেক।’

বিসিবির বর্তমান পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের ক্যারিয়ারের বড় সময় কেটেছে বিকেএসপিতে। আগের ও এখনকার বিকেএসপির মধ্যে একটু পার্থক্য ধরা পড়ে তার চোখে, ‘আগে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি তিন শীর্ষ খেলারই ক্যাম্প হতো বিকেএসপিতে। ফেডারেশন ও বিকেএসপি উভয় উভয়কে ধারণ করত। এখন সেটি নেই। আজকের এই উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে ফেডারেশন ও বিকেএসপির মধ্যে আরও সুসম্পর্ক হবে।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপী বলেন, ‘আমাদের জুনিয়র দলগুলো বিকেএসপি নির্ভর। সেই দলগুলো খেলোয়াড়, ক্যাম্প এবং প্রতিভা অন্বেষণে সমন্বয়ের বিষয়ে আমরা আলাপ করেছি।’ 

জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল বিকেএসপির সাবেক ছাত্র। তিনি বিকেএসপির জিমন্যাস্টিক্সে অনুশীলনের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘জিমন্যাস্টিক্স অত্যন্ত অনুশীলন নির্ভর খেলা। বিকেএসপিতে জিমন্যাস্টদের অনুশীলন ঘণ্টা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’

দেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। বিকেএসপিতে কাবাডি ডিসিপ্লিন শুরু হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ নারী কাবাডিও বিকেএসপিতে শুরুর দাবি জানান। সাঁতার, টিটিসহ আরও কয়েকটি ফেডারেশন বিকেএসপিতে ক্যাম্প, কোচ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করেন। আবার কোনো কোনো ফেডারেশন বিকেএসপিতে আরও উন্নত মানের কোচিং ও অনুশীলনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

বিকেএসপি ফেডারেশনগুলোর চাহিদা ও প্রত্যাশা যেমন শুনেছে, তেমনি লক্ষ্য-পরিকল্পনাও জানিয়েছে নিজেদের। বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অলিম্পিক নিয়ে পরিকল্পনা করছি। আগামী ২০২৮, ২০৩২ ও ২০৩৬–এর জন্য। এখনও সেই বাচ্চারা বিকেএসপিতে আসেনি, অনেকে মায়ের কোলে। আমি হয়তো থাকব না, আমাদের কোচরা অনেকে অবসরে যাবে, আবার অনেকে হয়তো মারাও যাবে কিন্তু পরিকল্পনা ও পেপার থাকবে। একদিন দেখবেন আমাদের পরিকল্পনায় অলিম্পিকে একটা ভালো ফলাফল এসেছে।’

বিকেএসপির বর্তমান শিক্ষার্থী সাগর ইসলাম গত প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি নিজ যোগ্যতায় খেলেছেন। এইচএসসি পরীক্ষার পর বিকেএসপি ক্যাম্পাস ছাড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। আরচ্যার সাগর ও আলিফকে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকের জন্য রাখতে চায় বিকেএসপি, ‘আমরা দুই আরচ্যারকে পরবর্তী অলিম্পিক পর্যন্ত পাশে রাখতে চাই। তারা বেশ সম্ভাবনাময়।’ দুই আরচ্যারকে দুই বছর রাখার জন্য ২৮ লাখ টাকার একটি বাজেট করেছে বিকেএসপি। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকার যেকোনো জায়গা থেকে এর সংস্থান হওয়ার আশা করছেন বিকেএসপির মহাপরিচালক। 

শ্যুটিং এবং আরচ্যারি নিয়ে অলিম্পিক পর্যায়ে স্বপ্ন বিকেএসপি মহাপরিচালকের। গেমসের মূল আকর্ষণ অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হয়েও সাঁতারে অনেক পিছিয়ে। তাই সাঁতার নিয়ে ভাবনা রয়েছে মহাপরিচালকের, ‘২০২৮ ও ২০৩২ অলিম্পিকে সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্স আমি দেখছি না। এশিয়ান পর্যায়ে পরিকল্পনা রয়েছে। এক সময় এসএ গেমসের সাঁতারে আমাদের অনেক স্বর্ণপদক ছিল। এখন একটি ব্রোঞ্জ পেলেও খুশি হতে হয়। অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার নিয়ে আমি ভাবছি।’ 

বিকেএসপিতে খেলোয়াড় তৈরি করেন কোচরা। সেই কোচরা অনেকটাই অবহেলিত। বিশেষ করে পদোন্নতি না পেয়ে অনেক কোচই বিকেএসপি ছেড়ে চলে গেছেন। এই সংকটের উত্তরণ না হলে ভালো খেলোয়াড় এবং আন্তর্জাতিক সাফল্য আসবে না। এ নিয়ে বিকেএসপি মহাপরিচালক বলেন, ‘নিঃসন্দেহে কোচদের পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। সাংগঠনিক কাঠামোতে একজন ১৫-২০ বছর কোচিং করানোর পর যখন অভিজ্ঞ হয় তখন আঞ্চলিক বিকেএসপির দায়িত্ব প্রদানের জন্য উপ-পরিচালক করে পাঠাতে হয়। যদিও তারা মাঠেই কাজ করতে চান। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি কাজ করছি।’

এজেড/এএইচএস