লর্ডসে ভারত ও ইংল্যান্ডের চলমান তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ডিউক বল। ভারতীয় ক্রিকেটাররা বলের গুণমান নিয়ে বারবারই আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুই অনফিল্ড আম্পায়ার শরফুদ্দৌলাহ ইবনে শহীদ সৈকত ও পল রাইফেলের সঙ্গে বারবার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়াতে দেখা যায় শুভমান গিল ও মোহাম্মদ সিরাজদের। 

গতকাল (বৃহস্পতিবার) টেস্টের প্রথম দিনে ৮০তম ওভারের মাথায় দ্বিতীয় নতুন বল দেওয়া হয় ফিল্ডিংরত ভারতকে। তবে আজ (শুক্রবার) সিরাজ-আকাশ দীপরা নতুন ওই বলের অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন। আকৃতি পরিবর্তন ও বল নরম হয়ে যাচ্ছে বলে মাত্র ১০ ওভার পরই সেটা পরিবর্তনের দাবি তোলে ভারতীয় ক্রিকেটাররা। যার প্রেক্ষিতে আম্পায়ার ‘হুপ টেস্ট’ করার পর বলটি বদল করেন।

কিন্তু অধিনায়ক শুভমান গিল নতুন বলের আকারেও সন্তুষ্ট নন। ফলে তিনি আম্পায়ার সৈকতের সঙ্গে সরাসরি তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি তিনি আম্পায়ারের হাত থেকে বল কেড়ে নেন, যেটা টেলিভিশন সম্প্রচারে স্পষ্ট ধরা পড়ে। স্টাম্প মাইকে শোনা যায় সিরাজ বলছেন, ‘এটা ১০ ওভার পুরোনো বল? সিরিয়াসলি?’ এই মুহূর্তে ধারাভাষ্যে থাকা গিলদের সঙ্গে একমত হন সুনীল গাভাস্কারও। তিনি বলেন, ‘এটা ১০ ওভারের বল? দূর থেকেও দেখলে বোঝা যায় বলটা কমপক্ষে ২০ ওভারের মতো দেখাচ্ছে।’

এর আগে সিরিজ শুরুর আগেই ভারতের সহ-অধিনায়ক ঋষভ পান্ত ডিউক বলের গুণগত মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এত খারাপ মানের বল তিনি আগে দেখেননি—প্রায়ই বলের আকার পাল্টে যাচ্ছে, যা ভারসাম্য নষ্ট করছে ম্যাচের। পান্তের মতে– ‘গেজটা (বল মাপার যন্ত্র) একই হওয়া উচিৎ, ডিউক হোক কিংবা কুকাবুরা বল। কিন্তু হালকা ছোট হলে ভালো। বলগুলো এত ঝামেলা করছে, এটা বড় সমস্যা। বল বারবার ডি-শেপড (আকৃতি বিকৃত) হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন বলটা নরম হয়ে যায়, তখন সেটা বোলারদের একদম সাহায্য করে না। আবার বল পাল্টানোর পর আচমকা অনেক বেশি সুইং বা মুভমেন্ট শুরু হয়। একজন ব্যাটারের পক্ষে বারবার মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর। এটা শুধু খেলোয়াড়দের জন্য নয়, ক্রিকেটের জন্যও ভালো নয়।’ এদিকে, চলমান টেস্টে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ডিউক বল নিয়ে বারবার অভিযোগের বিষয়টি মানতে পারছেন না সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন। এ ছাড়া বল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাবেক ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড।

সাবেক তারকা পেসার ব্রড এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এটি অগ্রহণযোগ্য। ক্রিকেট বল দেখতে ভালো একজন উইকেটরক্ষকের মতো হতে হবে, খালি চোখে যা স্পষ্ট দেখা যায়। আমরা ডিউক বল ইস্যুতে অনেক বেশি কথা বলছি, কারণ তেমন ঘটনা ঘটছে এবং প্রতিটি ইনিংসেই বদলে যাচ্ছে বলের ধরন। অগ্রহণযোগ্য, মনে হচ্ছে এর ৫ বছর হয়ে গেছে।’

অন্যদিকে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে নাসের হুসেইন বলেন, ‘ভারতের এভাবে ঘন ঘন বল পরিবর্তনের দাবি বিরক্তিকর। বল পরিবর্তনে দুটি কারণ থাকতে হবে– হয় বলের আকার পরিবর্তন অথবা বলের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে মনে হলে। তখন আম্পায়ারকে বললে তারা তা পরিবর্তন করবেন। এই বলটি দিয়ে মাত্র ৬৩ ডেলিভারি করা হলো। বুমরাহ দারুণ স্পেলও করলেন। অন্যদিকে ক্যাচ হাতছাড়া করছেন সিরাজ। যদি উইকেটরক্ষকের হাতে ভালোভাবেই বল যাচ্ছিল। টেস্ট ম্যাচে যেমনটা হয় সেভাবেই বলের আচরণ ছিল।’

এএইচএস