যাদের হাত ধরে বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তাদের অন্যতম একজন সালমা খাতুন। লম্বা সময় লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছেন তিনি। নারী টি-টোয়েন্টিতে একসময় বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারও ছিলেন এই বাংলাদেশি। তবে গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলের বাইরে আছেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা না দিলেও তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার কার্যত এখানেই শেষ হচ্ছে। কারণ আজ তাকে নারী দলের নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

বাইশ গজ ছেড়ে নতুন দায়িত্ব পালন করাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন সালমা। নির্বাচকের দায়িত্ব পেয়ে নিজের অনূভুতি, চ্যালেঞ্জ ও পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে কথা বলেছেন সালমা।

ঢাকা পোস্ট : নতুন পেশায় যুক্ত হলেন, আপনাকে অভিনন্দন।

সালমা : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে, অনেক খুশি। ক্রিকেট বোর্ডকে অনেক ধন্যবাদ জানাই যে, নির্বাচক পদের জন্য তারা আমাকে যোগ্য মনে করেছে।

ঢাকা পোস্ট : বিসিবিতে প্রথম নারী নির্বাচক আপনি। ইতিহাসের অংশ হয়ে কেমন লাগছে?

সালমা : আলহামুদিল্লাহ। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন দায়িত্ব পেয়েছি আমি। আসলে এটা ভেবেই খুবই ভালো লাগছে। সঙ্গে এটাও একটা ভালো দিক যে নারী ক্রিকেট দলের জন্য একজন নারী নির্বাচক নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। দায়িত্ব পাওয়ার খবর সবাই যখন জেনেছে, আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সবাই ফোন দিয়েছে, খোঁজ নিয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : নতুন পেশায় কতটা চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

সালমা : সবকিছুতেই কিন্তু চ্যালেঞ্জ থাকে, এখন যেহেতু আমি সিলেক্টার হয়েছি আমার জায়গাটা আমাকে ধরে রাখতে হবে। দলে আমি তো সবার সিনিয়র ছিলাম তো আমাকে সেই ভাবেই ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলতে হবে বা ক্রিকেটারদের সাথে চলতে হবে, এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রেই এমন চ্যালেঞ্জ থাকে।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচক হিসেবে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা অনেক সময় সবার পছন্দ হবে না।

সালমা : সত্যি কথা বলতে আপনি যখন সৎ থেকে ভালোভাবে নিজের কাজ করবেন... কখনো কিন্তু সবার মন জয় করতে পারবেন না। এটা আপনারাও ভালো করেই জানেন। এটা ছেলে কিংবা মেয়ে যে নির্বাচকই হোক না কেন চ্যালেঞ্জ থাকে। তো যখন দেশের জন্য আমাকে দল নির্বাচন করতে হবে তখন সঠিক সিদ্ধান্ত আমি নিতে বাধ্য। তার জন্য যদি কিছু ফেস করতে হয় তাহলে অবশ্যই সেটা করব। নির্বাচক হলে অনেক কিছুই ফেস করতে হবে, সেটার জন্য প্রস্তুত আমি।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচক হলে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়, প্রস্তুত রয়েছেন নিশ্চয়।

সালমা : এখানে সবকিছুই চ্যালেঞ্জিং। যখন ক্রিকেটার ছিলাম তখনো চ্যালেঞ্জিং ছিল, এখনো চ্যালেঞ্জিং। তার ভেতর থেকেই নিজেকে তৈরি করতে হবে, যেন সব জায়গায় ফিট থাকতে পারি, ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারি। এখন থেকে আমার সব প্ল্যানিং করে রাখতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেননি, কোনো ম্যাচ খেলবেন নাকি শুধু ঘোষণা দিয়ে বিদায় নেবেন?

সালমা : আসলে ম্যাচ খেলার কোনো চিন্তা নেই। শুধু ফেয়ারওয়েলটা নিয়েই সবাইকে জানিয়ে দেবো যে ক্রিকেটকে বিদায় জানালাম।

ঢাকা পোস্ট : কখনো কি ভেবেছিলেন যে, নির্বাচক হবেন?

সালমা : যখন শুরু করেছিলাম তখন খেলা নিয়ে চিন্তা ছিল শুধু। এরপর যখন খেলা থেকে একটু দূরত্ব শুরু হলো তখন চিন্তা ছিল যে ক্রিকেট বোর্ডের যেকোনো একটা কিছুতে কাজ করার। বিশেষ করে মেয়েদের সাথে কাজ করতে চাই, যেটাই হোক না কেন। ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচক হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচগুলো মাঠে বসে দেখার পরিকল্পনা আছে?

সালমা: হ্যাঁ, ইনশাআল্লাহ। দেখেন ক্রিকেট বোর্ড যদি চাই যে জেলা, উপজেলা কিংবা বিভাগ সব জায়গায় পাঠাবে তাহলে আমি অবশ্যই যেতে রাজি আছি। দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য সব জায়গায় যেতে চাই, আমার কোনো সমস্যা নেই।

ঢাকা পোস্ট : অনেক সময় ক্রিকেটাররা কেন বাদ পড়ল, তার ব্যাখ্যা দেন না নির্বাচকরা এটাকে কীভাবে দেখেন আপনি?

সালমা : এটা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে তা না ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয়। অবশ্যই চেষ্টা করব যদি এরকম কিছু হয় ক্রিকেটারদের একটা ব্যাখ্যা দিতে। তাদের সাথে কথা বলব, তাদেরকে আরো সাহস জোগাব। সবাইকে তো আসলে নির্বাচিত করা সম্ভব হবে না এটা সবাই জানে। আসলে যখন একজন ক্রিকেটার বাদ পড়বে তখন সেই ক্রিকেটারকে বলতে পারব যে আসলে কেন বাদ পড়ল। এ ছাড়া দেখেন আমি এখনও জয়েন করিনি, এই ধরনের আলোচনা আসলে যারা নির্বাচক ছিলেন তাদের সাথে কথা বলবো। এ নিয়ে সবকিছু তখন বুঝতে পারবো।

ঢাকা পোস্ট : ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো আফসোস আছে?

সালমা : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো জায়গায় গিয়েছিলাম। এখনো খেলা ছাড়ার পর একটা ভালো জায়গায় এসেছি, যে কারণে আমার কোনো আফসোস নেই।  আমি চেয়েছিলাম খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেট বোর্ডে থাকতে। এখন সেটাই হয়েছে, ক্রিকেটের সাথে থাকায় পূর্ণতা পেয়েছে। এটাই আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ। আর ভবিষ্যতে কি হবে আসলে এখনো বলতে পারি না, কোচিংয়ে আসবো নাকি এখানে থাকবো। এখন যেখানে রয়েছি সেটা নিয়ে চিন্তা করছি।

ঢাকা পোস্ট : পরিবার থেকে কতটা সহযোগিতা পান?

সালমা : হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ, পরিবার থেকে সবসময় আমাকে সাপোর্ট করে। আজকে খবরটা যখন আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম, আম্মু অনেক খুশি হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : বাইশগজ ছেড়ে বোর্ডে আসলেন, জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস কবে শুরু করবেন?

সালমা : এটা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবার থেকে পাত্র খোঁজা হচ্ছে, সবকিছু মিলছে না তাই হচ্ছে না। ব্যাটে-বলে মিলে গেলেই হয়ে যাবে।

এসএইচ/এইচজেএস