নির্বাচনী অঙ্কে বদলে যায় ‘অধিনায়কত্ব’
ফুটবল ছাড়া দেশের সকল ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কাউন্সিলর হতে হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাউন্সিলর হয়েও নির্বাচন করার অধিকার নেই জাতীয় দলের পাঁচজন সাবেক অধিনায়ক, আম্পায়ার্স এন্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং কোয়াবের প্রতিনিধির।
বিসিবি’র গঠনতন্ত্রে ৯.৩.১–৯.৩.৯ ধারা পর্যন্ত অন্যান্য প্রতিনিধি (ক্যাটাগরি-৩) বর্ণনা রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি তিনে ৯.৩.১—৯.৩.৬ বর্ণিত ব্যক্তি/সংস্থার প্রতিনিধিদেরই শুধু নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ৯.৩.৭–৯.৩.৯ ধারার মধ্যে থাকায় আম্পায়ার্স এন্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিসিবি সভাপতি কর্তৃক ৫ সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির স্বীকৃতপ্রাপ্ত ক্রিকেট খেলোয়াড় সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রার্থিতার সুযোগ নেই গঠনতন্ত্রে।
বিজ্ঞাপন
সাবেক অধিনায়কদের নির্বাচন করার গঠনতান্ত্রিক সুযোগ না থাকলেও বিগত তিন মেয়াদে ক্যাটাগরি তিন থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। এবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। পাইলট এবং সুজন সাবেক অধিনায়ক হলেও তারা জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলরশিপ পাওয়ায় তারা প্রার্থী। ৯.৩.৩ ধারায় রয়েছে– বাংলাদেশ জাতীয় দল ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী প্রাক্তন খেলোয়াড়দের থেকে ১০ জন মনোনীত করবে বিসিবি।
ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব বাড়তি সম্মান ও মর্যাদার। নির্বাচনী অঙ্ক কিংবা বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অধিনায়করাও সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলর হন। ২০১৩ সাল থেকে অদ্যবধি নির্বাচন বিশ্লেষণে সেটা অনেকটাই স্পষ্ট। ২০১৩ সালে তিন নম্বর ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সাবেক দুই অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও খালেদ মাহমুদ সুজন। দুই জনই অধিনায়ক হলেও তারা সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলর পাওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে সভাপতির কোটায় মনোনীত পাঁচ অধিনায়ক ছিলেন– শামীম কবির, রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরা, ফারুক আহমেদ ও খালেদ মাসুদ পাইলট।
বিজ্ঞাপন
২০১৭ সালের নির্বাচনে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু প্রার্থী হননি। তিনি তখন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক কোটায় কাউন্সিলর হন। তার সঙ্গে অন্য চার অধিনায়ক ছিলেন– যথাক্রমে রকিবুল হাসান, ফারুক আহমেদ, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও খালেদ মাসুদ পাইলট। ২০১৩ সালের নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলর হয়ে পরিচালক নির্বাচিত হন।
২০২১ সালের নির্বাচনেও খালেদ মাহমুদ সুজনকে সাবেক অধিনায়কের পরিবর্তে সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে বিকেএসপির প্রতিনিধি নাজমুল আবেদীন ফাহিম প্রার্থী হলেও সুজনের সঙ্গে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। একইসঙ্গে সেই মেয়াদে সভাপতি কোটায় থাকা পাঁচ কাউন্সিলর হলেন– রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরা, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, ফারুক আহমেদ ও হাবিবুল বাশার।
আরও পড়ুন
২০২৫ সালে চলমান বিসিবি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মিনহাজুল আবেদীন নান্নু নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে কাউন্সিলরশিপেও। ২০২১ ও ২০১৭ সালে তিনি সাবেক অধিনায়ক কোটায় কাউন্সিলর হলেও এবার সাবেক ১০ জাতীয় খেলোয়াড়ের মধ্যে নান্নুর নাম। ২০০৩ বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করা খালেদ মাসুদ পাইলট ২০১৩ ও ১৭ সালে সাবেক অধিনায়ক কোটায় কাউন্সিলর হয়েছিলেন। এবার তিনি জাতীয় খেলোয়াড় কোটায় কাউন্সিলর হয়েছেন এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করছেন।
২০১২ সালের বিসিবির গঠনতন্ত্রে সাবেক ক্রিকেটারদের ক্রিকেট বোর্ডে কাজের সুযোগের জন্য মূলত বিশেষভাবে তিন নম্বর ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এই ক্যাটাগরিতে বিসিবি ১০ জন সাবেক জাতীয় ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মনোনয়ন দিতে পারে। পাঁচ জন সাবেক অধিনায়ককে মনোনয়ন দেন বিসিবি সভাপতি। তারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেও প্রার্থী হতে পারেন না। ২০১৭, ২০২২ ও ২০২৪ সালে তিন দফা বিসিবি গঠনতন্ত্র সংশোধন হলেও পাঁচ অধিনায়ক, আম্পায়ার্স ও কোয়াব প্রতিনিধির প্রার্থিতার সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকেছে।
২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ চার মেয়াদেই সাবেক অধিনায়ক কোটায় কাউন্সিলর রকিবুল হাসান। তিনি অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘একজন ভোটারের অবশ্যই প্রার্থী হওয়ার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনসহ সকল ক্ষেত্রে এটি থাকলেও, দুঃখজনক বিষয় আমাদের বিসিবিতে নেই। আমি বোর্ডের দু’টি এজিএমে সাবেক অধিনায়কদের প্রার্থিতা করার অধিকারের দাবি তুলেছিলাম, বিষয়টি সংশোধন প্রয়োজন বলে সম্মত হলেও সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।’
সাবেক অধিনায়কদের নির্বাচনে গঠনতান্ত্রিক বাধা থাকলেও তারা আবার জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলর হয়ে ঠিকই বোর্ডে আসছেন। সাবেক অধিনায়কদের সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলর হওয়ার বিষয়ে রকিবুল হাসানের পর্যবেক্ষণ, ‘বোর্ড এবং সভাপতি যাকে কাউন্সিলর করবে তার সম্মতি প্রয়োজন হয়। যিনি নির্বাচনে আগ্রহী তিনি সাবেক অধিনায়ক কোটায় কাউন্সিলর হন না। কারণ এখান থেকে হলে তিনি প্রার্থী হবেন না। এজন্য সেই ব্যক্তি খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্সিলর হয়ে আসছেন। সবার যদি নির্বাচনের অধিকার থাকত তাহলে তো আর সাবেক অধিনায়ককে অন্য কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ করতে হয় না।’
রকিবুল হাসান সাবেক অধিনায়কদের প্রার্থিতার অধিকার নিয়ে প্রতিবাদ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে আম্পায়ার্স-স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং কোয়াবের প্রতিনিধিদের এ নিয়ে তেমন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি।
এজেড/এএইচএস