পেছনের দিকে ছুটছে বাংলাদেশ ক্রিকেট, কোচদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের প্রধান কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপজয়ী কোচ ফিল সিমন্স। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম জনপ্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে করা হয় সিনিয়র সহকারী কোচ। দুঃখজনক হলে সত্য, ওই সময় থেকেই দেশের ক্রিকেটে ছন্দপতন শুরু।
সিনিয়র সহকারী কোচ সালাউদ্দিন বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগ দেখভাল করছেন। কিন্তু ব্যাটারদের অধারাবাহিকতা থেকে বের করার পথই যেন খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন ও জাকের আলি অনিকরা নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন। এক ম্যাচে রান করেন তো বাকি দুই ম্যাচে ছন্দপতন। এশিয়া কাপে ব্যর্থতার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ছিল শোচনীয় পরাজয়। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে কীভাবে জিতেছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার!
বিজ্ঞাপন
মিরপুরের সেই স্পিন-নির্ভর কালো উইকেট নেই চট্টগ্রামে। ফলে যথারীতি ফেইল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। দলের তরুণ-অভিজ্ঞ যেকোনো ব্যাটারেরই টানা দু’দিন রান পাওয়া যেন অসম্ভবের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত আগ্রাসী খেলার নজির দেখা গেলেও, বাংলাদেশ ছুটছে উল্টো পথে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দুটি টি-টোয়েন্টিতে হেরে ইতোমধ্যে সিরিজ ফসকে গেছে লিটন-মুস্তাফিজদের হাত থেকে।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় ম্যাচে বোলারদের কল্যাণে ক্যারিবীয়দের ১৪৯ রানে আটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এক তানজিদ তামিম ছাড়া আর কেউই লক্ষ্য তাড়া করার মতো মানসিকতা দেখাতে পারলেন না। ৪৮ বলে ৬১ রান করে দলকে জেতাতে ব্যর্থ তানজিদ তামিম। ধীরগতির খেলায় ক্রিজে সেটেল হয়েছেন ঠিক–ই, তবে ১৭ বলে ৩৩ রান তাড়ায় যখন স্ট্রাইক রোটেট করার কথা তখনই তিনি আউট। পরে অবশ্য নিজের কাঁধে দায়টা নিয়েছেন–ও। এই ম্যাচেও প্রশ্নের মুখে জাকের। ১৮ বলে ১৭ রান করা এই ব্যাটারের স্ট্রাইকরেট দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায়, এমনকি আউট হয়েছেন অফসাইডের বল লংঅনে টেনে নিয়ে দৃষ্টিকটু শটে।
ধারাবাহিক এই ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটাতে বিসিবি চেষ্টা করছে নতুন করে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ নিয়োগের জন্য। কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে, তবে এখনও চূড়ান্ত নয়। বিসিবির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন ভালো ব্যাটিং কোচের সন্ধান চলছে। এর আগে বাংলাদেশের সাবেক এক কম্পিউটার অ্যানালিস্ট জানালেন, ক্রিকেটারদের উচিত সিরিয়াসলি নিজেদের ডাটা চেক করে সমস্যার সমাধান করা। অর্থাৎ, ব্যাটিং কোচ আসার আগে নিজেদেরকেও সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
এদিকে, দলের এমন ভরাডুবির পেছনে যথারীতি ব্যাটিংয়ের সমস্যাকে দায়ী করলেন সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘সমস্যা তো একটাই– ব্যাটিং। দলের মিডল অর্ডার ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারছে না। এটাই মূল বিষয় আসলে। আপনি যখন দেখেন দলের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করে না, তখন ভালো করা কঠিন হয়ে যায়। মিডল অর্ডারকে ভালো শেপে আনা টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ। ব্যাটসম্যানরা কেন ভালো করতেছে না সেটা দেখতে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খারাপ হচ্ছে কেন সেই বিষয়টাও বুঝতে হবে ক্রিকেটারদের।’
কোচদের দিকে আঙুল তুলে নান্নু আরও বলেন, ‘যিনি হেডকোচ আছেন উনি তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালো ব্যাটসম্যান ছিল। ওর কাছ থেকে তো অনেক কিছু শিখতে পারে। এখানে বিষয়টা হলো টিম ম্যানেজমেন্ট কীভাবে কাজ করছে। খেলোয়াড়রা যদি ভালো না করে দোষ কিন্তু কোচদের হবে, এটাই স্বাভাবিক। ক্রিকেটে ব্যাটারদের অফফর্ম যাবেই, সেখান থেকে কীভাবে কামব্যাক করা যায় এটাই মূল বিষয়। আমরা যেভাবে ব্যাট করছি এটা আসলে ঠিক না, এখান থেকে ফিরতে হবে।’
জাকের আলির টানা লেগ লাইডে খেলার চেষ্টা পাড়ার ক্রিকেটারদের মতো বলেও মনে করেন সাবেক এই নির্বাচক, ‘ক্রিকেটে ব্যাটারদের খেলাটা হচ্ছে ব্যক্তি-বিশেষ। কোন বলটা কখন কোথায় খেলতে হবে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তাকে দায়িত্বটা নিতে হবে, ঠিকমতো প্ল্যান করে ব্যাটিং করতে হবে। বাকিটা টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব।’
এসএইচ/এএইচএস