প্রথমবারের মতো নারী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররা অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন। তাতেই সীমাবদ্ধ নয়, যার যার রাজ্যে অভ্যর্থনা, অর্থ পুরস্কার, এমনকি সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক জয়েরও নজির দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রথম বাঙালি নারী ক্রিকেটার হিসেবে এবার বিশ্বকাপ জিতেছেন রিচা ঘোষ। ফাইনালে তার করা প্রতিটি রানের জন্য ১ লাখ রুপি করে পেয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশের ডিএসপি এবং বঙ্গভূষণ পদকও দেওয়া হয়েছে তাকে।

অস্ট্রেলিয়াকে ৫২ রানে হারিয়ে নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল জয়ের পথে ৩৪ রানের ঝোড়ো ক্যামিও খেলেছিলেন রিচা। যার জন্য ক্রিকেট অব বেঙ্গল (সিএবি) তাকে দিয়েছে ৩৪ লাখ রুপি পুরস্কার। ভারতীয় এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার গতকালই (শনিবার) জন্মভূমি শিলিগুড়িতে পা রাখেন। নিজ শহরে স্থানীয়ভাবে অভ্যর্থনা তো ছিল–ই, এরপর সিএবি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তার জন্য ইডেন গার্ডেনে রাজসিক সংবর্ধনার আয়োজন করে।

সম্প্রতি রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ জানিয়েছিলেন, তার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। পরবর্তীতে গন্তব্য পাল্টে গেলেও, তারা পুলিশে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। কাল সংবর্ধনায় রিচাকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিএসপি পদের সম্মানজনক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার হাতে তুলে দিয়েছেন রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘বঙ্গভূষণ’ ও ডিএসপি’র নিয়োগপত্র। এ ছাড়া রাজ্য সরকার একটি স্বর্ণের চেইনও দিয়েছে ২২ বছর বয়সী ভারতীয় এই ক্রিকেটারকে।

এর আগে ২০১৭ আসরের ফাইনালে খেললেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি পশ্চিমবঙ্গের আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামির। উত্তরসূরী রিচার হাত ধরে স্পর্শ করলেন সেই শিরোপা। রিচার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ঝুলন বলেন, ‘২০১৩ সালে জেলা থেকে প্রতিভা তুলে আনার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলাম সিএবিকে। সেই বছর ট্যালেন্ট হান্ট শুরু হয়েছিল। সেখানেই রিচাকে প্রথম দেখি। আমার দেখা সেরা প্রতিভা। ওকে যখন বাংলার সিনিয়র দলে খেলাতে চাই, অনেকে বলেছিল, ওর বয়স কম। কিন্তু সিএবি ও কর্মকর্তারা পাশে ছিল। সবাই বুঝতে পেরেছে– আমার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। তবে এখান থেকে রিচার নতুন লড়াই শুরু।’

সিএবি’র সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি রিচার প্রশংসা করে বলেন, ‘রিচা ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে যে কাজটা করে সেটা সবচেয়ে কঠিন। কারণ সে বল কম পায়। বিপরীতে রান করতে হয় অনেক বেশি। সেখানে ও রান করেছে। জাতীয় দলে ওর স্ট্রাইকরেট–টাই তফাত গড়ে দিয়েছে (বিশ্বকাপে রিচারই সেরা স্ট্রাইকরেট ১৩৩.৫২)। একদিন যেন বলতে পারি রিচা ঘোষ ভারতের অধিনায়ক। সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি। তোমার বয়স এখনও ২২ বছর, তার মানে অনেক সময় পাচ্ছ।’

প্রসঙ্গত, ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটার এখন পর্যন্ত ভারত জাতীয় দলের হয়ে ৫১ ওয়ানডে, ৬৭ টি-টোয়েন্টি এবং ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৩৬৩ রান করেছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ভারতের পক্ষে ৮ ম্যাচে ৩৯.১৬ গড়ে করেন ২৩৫ রান। এমনকি রিচার স্ট্রাইকরেট টুর্নামেন্টের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৩৩.৫২। এ ছাড়া তার ব্যাট থেকেই এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১২টি ছক্কা এসেছে।

এএইচএস