খুব বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকানো যাক, বিরাট কোহলির নেতৃত্বে তাদের মূল দল এ মুহূর্তে ইংল্যান্ডে। জো রুটদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হওয়ার আগে ইংলিশ আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে লম্বা সফরে গেছে তারা। আরেকটি দল শ্রীলঙ্কায়। খেললো সীমিত ওভারেই দুই ফরম্যাট। শুধু কি দুটো দলই? 

ইংল্যান্ডে টেস্ট স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যা ২১ জন। এও তো দুটো একাদশের সমান বৈকি! ৩ ক্রিকেটার দেশে ফিরেছেন ইনজুরি নিয়ে। শ্রীলঙ্কায় রঙিন পোশাকের দুই ফরম্যাটে নেতৃত্ব দিলেন শেখর ধাওয়ান। লঙ্কা দ্বীপে প্রায় প্রতি ম্যাচেই একাধিক ক্রিকেটারকে অভিষেকের স্বাদ দিয়েছে দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ভাগ্য ফেরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও ওয়ানডে সিরিজটা ঠিকই জিতেছে সফরকারী ভারত।

এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ করে বাংলাদেশে এসেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। এই দুই সফর থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছেন অজিদের মূল দলের ৬ ক্রিকেটার। সাদা  বলের দুই ফরম্যাটের নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চসহ ইনজুরিতে আছেন আরও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। তবুও ২০ সদস্যের স্কোয়াড নিয়ে টাইগার ডেরায় পা রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। 

বাংলাদেশ? তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস; এই তিন ক্রিকেটার না থাকায় অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অথৈ সাগরে পড়েছে টাইগাররা। মুস্তাফিজুর রহমান সিরিজের আগে চোট থেকে সেরে না উঠলে বিপদ গাঢ় হবে আরও। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ১৭ সদস্যের স্কোয়াড দিয়েও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। একাধিক ক্রিকেটার লড়ছেন নিজেদের ফর্ম ফিরে পেতে।

বাংলাদেশ দলের পাইপলাইন তৈরির কাজও চলছে ধীর গতিতে। করোনাভাইরাসে কারণে সেটিও থমকে আছে দীর্ঘদিন। এ মাসের গোড়ার দিকে হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) ক্যাম্প শুরুর কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি চলমান লকডাউনের কারণে। দেশে যেভাবে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি আর মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, তাতে ঠিক কবে আবার পাইপলাইন সমৃদ্ধের কাজ শুরু হবে সেটি জানেন না খোদ নীতিনির্ধারকরা।

জুলাই মাসে এইচপির ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। স্থগিত থাকা পাইপলাইন তৈরির কার্যক্রম আবার কবে গতি পাবে জানতে চাইলে বিসিবির গেম ডেভলপমেন্টের ম্যানেজার আবু এনাম মোহাম্মদ কায়সার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত হবে। আমাদের একটি কমিটি মিটিং আছে, এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এ বিষয়ে। এটা এখনই বলা যাচ্ছে না, দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তীতে আমরা একটা সিদ্ধান্ত।’

জাতীয় দলের উপযোগী করে খেলোয়াড় প্রস্তুতের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবছর ধরে হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্প পরিচালনা করছে বিসিবি। তবে কারণে-অকারণে বাধা পড়ছে এই কার্যক্রম। প্রায় এক বছর পর গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয় এইচপি ক্যাম্প। ২৬ সদস্য নিয়ে ৭ অক্টোবর ক্যাম্প হলেও খুব বেশিদিন চলেনি তৎকালীন বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপের জন্য। যে কদিন ক্যাম্প চলেছে, সেখানেও পাওয়া যায়নি বিদেশি সাপোর্ট স্টাফদের।

প্রেসিডেন্টস কাপের পর ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর আবার শুরু এইচপি ক্যাম্প। এবার চলে সর্বসাকুল্য ২ সপ্তাহ। ২৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরুর প্রাক্বালে আবার বন্ধ হয়ে যায় এইচপির কার্যক্রম। পরে ইমার্জিং দলের সিরিজ আর ডিপিএলের মারপ্যাঁচে এইচপির কার্যক্রম আড়ালে পড়ে যায়। 

ডিপিএল শেষ হলে বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, ৪ জুলাই থেকে বিকেএসপি, মিরপুর ও সিলেটে আয়োজন করা হবে এইচপি ক্যাম্প। তবে করোনার কারণে থমকে আছে সে কার্যক্রমও।

২৬ সদস্যের এইচপি দলের বেশিভাগ ক্রিকেটারই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। আছেন দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ অনেক ক্রিকেট। আফিফ হোসেন, নাঈম শেখ, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, শফিফুল ইসলাম; হাতে গোনা চার-পাঁচজন এইচপির ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বাকিদের খোঁজ জানেন না কেউই! আকবর আলী, মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয়, শফিকুল ইসলামরা কোথায় আছেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলে জোর আলোচনা।

পাইপলাইনের খেলোয়াড়দের ফিটনেস আর স্কিল নিয়ে চিন্তা থাকলেও নিরাপত্তাকেই বেশি গুরুত্ব দিছে বিসিবি। কায়সার বলছিলেন, ‘আমাদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট কিছু যদি না থাকলে যেমন, কোন সফর বা ঘরের মাঠে কোন সিরিজ, সামনে এমন কিছু (সূচি) না থাকলে নিরাপত্তার বিষয়টি (গুরুত্ব দেওয়া হবে)। যদি মনে হয় দেশের পরিস্থিতি (করোনা) এখনো ভালো হয়নি, তাহলে কোভিড সংক্রমণ কমার উপর নির্ভর করবে আবার ক্যাম্প শুরুর বিষয়টি।’

চলমান লকডাউন শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। এরপর যদি বিধিনিষেধ উঠেও যায়, তবে সহসা এইচপি ক্যাম্প শুরু হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত দিলেন কায়সার। নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর আকবর, তামিম, রিশাদ, অভিষেক, মৃত্যুঞ্জয়, অঙ্কন, ইমনদের নিয়ে ভাববে বিসিবি।

কায়সার বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে ক্যাম্প শুরু করতে দেরি হতে পারে। কারণ, লকডাউন না থাকলেও বর্তমানে আক্রান্ত ও মৃতের গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী। এটা ঠিক যে খেলোয়াড়দের অনুশীলনটাও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার থেকে বেশি নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। আমরা যখন নিশ্চিত হতে পারব, শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারব, তখনই আমরা ক্যাম্প শুরুর পরিকল্পনা করব।’

করোনাভাইরাস হোক বা সদিচ্ছা, দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন তৈরির কার্যক্রম যে গতি পথ ধরে এগুচ্ছো, তাতে ভবিষ্যত ভালো বার্তা দিচ্ছেন না মোটেও। দিন শেষে এর ফল ভোগ করতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকেই।

টিআইএস