ভারতের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে হামিদের ‘ফেরার’ লড়াই
অর্ধশতকের পথে হাসিব হামিদ/ক্রিকইনফো
ভারত প্রথম ইনিংস ৭৮ (রোহিত ১৯; অ্যান্ডারসন ৩-৬, ওভারটন ৩-১৪)
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ১২০-০ (হাসিব ৬০*, বার্নস ৫২*)
প্রথম আর দ্বিতীয় স্লিপের মাঝের দূরত্বটা যেন প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ছিল। হাসিব হামিদের রান তখন ৪৭, যশপ্রীত বুমরাহর বেরিয়ে যেতে থাকা বলটা তার ব্যাটের কোণা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল সেই স্লিপ দিয়ে, ৪ রান এল তাতে। মাত্রই একটা ফিফটি হলো তার, কিন্তু পাঁচ বছর পর দলে ফেরা হাসিব হামিদের কাছে যেন এর মাহাত্ম্য ‘মাত্রই একটা ফিফটি’র চেয়ে বেশি কিছু, আগের টেস্টে ফেরাটা যে নিদারুণ দুঃস্মৃতি বয়ে এনেছিল তার জন্য!
ফিফটির আগ পর্যন্ত অবশ্য খেলেছেন প্রায় নিখুঁত এক ইনিংস, তার সঙ্গী রোরি বার্নসও। যার পুরোটা দেখলে আপনার মনে হতেই পারে নিখাদ ব্যাটিং স্বর্গে হচ্ছে খেলা, যেখানে বোলারদের জন্য নেই খুব বেশি কিছু। অথচ এর কিছু আগে এই হেডিংলিই যেন হয়ে উঠেছিল ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি। জেমস অ্যান্ডারসন আর ক্রেইগ ওভারটনের তোপে পুড়ে ভারত গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৭৮ রানেই!
বিজ্ঞাপন
লর্ডসের শেষ দিনটা ইংল্যান্ডের জন্য যদি ‘হরর’ গোছের কিছু হয়, তাহলে হেডিংলির প্রথম দিনটাকে ‘ফ্যান্টাসিই’ বলতে হবে। ‘জিমি’ অ্যান্ডারসন শুরুতে সুইং বিষ মেশানো এক ‘স্পেল’ করলেন, তাতে ‘স্পেলবাউন্ড’ হয়েই যেন ভেঙে গেল ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড।
তার কুশলী বোলিং দিনের শুরুতেই ছোবল দেয় ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে। প্রথম চার বল ইনসুইংয়ের পর পঞ্চম বলটা আর ভেতরে ঢুকল না। ফুলার লেন্থের বলটা সোজা লোকেশ রাহুলের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ল উইকেটরক্ষক জস বাটলারের হাতে।
বিজ্ঞাপন
রোহিত শর্মা ভালোভাবে সামলাচ্ছিলেন তা, পারেননি চেতেশ্বর পূজারা। তাকেও সেই ইনসুইং দিয়েই বশ করলেন ‘জিমি’; যে বলে বিদায় নিলেন পূজারা, সেটা ভেতরে ঢুকল না, গুডলেন্থে পড়ে অনেক দেরিতে সুইং নিয়ে বেরিয়ে গেল পূজারার ব্যাট ছুঁয়ে। অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন আরও এক ভারতীয় ব্যাটসম্যান।
পরেরটা বিরাট কোহলির ‘বিরাট’ উইকেট। এবারও সেই পুরোনো কৌশলেই মাত দিলেন অ্যান্ডারসন। অফস্টাম্পের একটু বাইরে ‘করিডর অফ আন্সার্টেইন্টি’তে করা বলটা কোহলির ব্যাট ছুঁয়ে গেল বাটলারের হাতে।
ভারত কাঁপছে তখনই। তবে এরপর ৪৫ রানের জুটিতে সেটা সামলানোর একটা চেষ্টাই চালিয়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে আর ওপেনার রোহিত। কিন্তু অলিভার রবিনসনের বলে রাহানের বিদায়ে শেষ হয়ে গেল সেটাও। ভারতের আশাও বৈকি! এরপর থেকে যে কেবল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলই কেবল দেখে গেছে হেডিংলি! রবিনসন আর ওভারটনের তোপে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ২২ রানে।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তটা যে ভাল ফল বয়ে আনেনি তা ততক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি। বিস্মরণযোগ্য একটা ইতিহাসও তাতে গড়ে ফেলেছে ভারত। ৭৮ রানে অলআউট, টসে জিতে কোনো টেস্টে ব্যাট করতে নেমে এর চেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার ‘কীর্তি’ যে ভারতের আছে আর মাত্র দুটো!
ভারতের কাছে যে উইকেট দুর্বোধ্য মনে হচ্ছিল, হামিদ আর বার্নসের ব্যাটিংয়ে সেটাকেই যেন মনে হচ্ছিল ব্যাটিং স্বর্গ। ভারতীয় ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রোহিতকে যেখানে ১৯ রানের জন্য খেলতে হয়েছিল ১০৫ বল, সেই ১০৫ বল খেলেই হামিদ করে ফেলেছেন; ভারতীয় দুই সর্বোচ্চ ইনিংসের চেয়েও যা ৬ রান বেশি! এরপর তিনি ফিফটি ছুঁয়েছেন। ভুলেছেন লর্ডসে পাঁচ বছর পর ‘প্রত্যাবর্তন’ ম্যাচের দুঃস্বপ্ন। অপরাজিতও আছেন ৬০ রানে, স্বাগতিকদের আশা দেখাচ্ছেন বড় কিছুর। সঙ্গে বার্নসও অপরাজিত আছেন ৫২ রানে। তাতে দশ উইকেট অক্ষত রেখে ভারতকে বড় লিডে চাপা দেওয়ার চোখরাঙানিও দিচ্ছে ইংলিশরা।
এনইউ