জালাল আহমেদ চৌধুরী দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও গণমাধ্যমের খুবই প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় এক ব্যক্তিত্ব। দেশের পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার প্রয়াণে নিজস্ব কার্যালয়ে বিএসজেএ আজ (শনিবার) এক স্মরণসভা আয়োজন করে। 

এই স্মরণসভায় বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের প্রথম অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু তার শ্রদ্ধেয় জালাল আহমদ চৌধুরীকে স্মরণ করে বলেন,‌‌ ‌খেলোয়াড়, কোচ ও ব্যক্তিগত জীবনের অভিভাবক হিসেবে আমি তাকে পেয়েছি। জালাল ভাইকে ধানমন্ডিতে খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছিলাম। জালাল ভাই এক বছর পর পাতিয়ালায় গেলেন কোচিং প্রশিক্ষণ নিতে। আমি তখন আমার ব্যাটিংয়ে ২১টি সমস্যা পয়েন্ট আউট করে দিয়েছিলাম। 

লিপু বলছিলেন, ‘সেই ’৭৯-৮০ সালের পয়েন্টগুলো তিনি উপস্থাপন করেছিলেন ৯৭ সালে আইসিসি ট্রফির ক্যাম্পের সময়। আমি ৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি দলের ম্যানেজার ছিলাম। গর্ডন গ্রিনিজকে সাহায্য করার জন্য জালাল ভাই ছিলেন। ক্যাম্পের প্রথম দিনই তিনি আমার ৭৯ সালের চিরকুট বের করে বলেন, তখন লিপুর এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে সময় লেগেছিল এক বছরের বেশি। তোমরা খুবই ভাগ্যবান গর্ডন গ্রিনিজকে পাচ্ছো। যিনি ব্যাটিংয়ের যে কোনো সমস্যা এখনই সমাধান করতে পারবে।’

জালাল আহমেদ চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন দেশের আরেক বিশিষ্ট ক্রীড়া লেখক সানাউল হক খান। প্রায় অর্ধশতাব্দী তাদের বন্ধুত্ব। বছর দু’য়েক আগে সানাউল হক স্ট্রোক করেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও বিএসজেএ কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি বন্ধুকে স্মরণ করলেন এভাবে, ‘ওর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে আমরা ঘনিষ্ঠ ছিলাম।’ 

দেশের বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক কাশীনাথ বসাক জালাল আহমেদ চৌধুরী সম্পর্কে বলেন,‌ ‘জালাল ভাই আমার অনেকটা পথপ্রদর্শকের মতো। আমি সাংবাদিকতা শুরুর আগে আম্পায়ারিংও করেছি। সেখানে জালাল ভাই আমাকে অনেক উৎসাহ দিতেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি অনেক পরামর্শ দিতেন।’ 

দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক মোস্তফা মামুন জালাল আহমেদ চৌধুরীর লেখক স্বত্ত্বা সম্পর্কে বলেন, ‘জালাল ভাই লেখক হিসেবে ছিলেন অনন্য উচ্চতার। জালাল ভাইয়ের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হবে না। কারণ আমরা এখন তারকা, শেয়ার, লাইকের পেছনে ছুটি। উনি ছিলেন এই ঘরণার বাইরে।’ 

জালাল আহমেদ চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠজন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। তিনি জালাল আহমেদ চৌধুরীর সব লেখার সংকলন সংগ্রহের প্রস্তাব দেন,‌ জালাল ভাইয়ের অনেক ভালো ও সুন্দর লেখা রয়েছে। সেগুলো একত্রিত করে একটি সংকলন করা যায়।  

দাবা ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ জালাল আহমেদ চৌধুরীর বন্ধু ছিলেন। জালাল আহমেদ চৌধুরির স্মরণ সভায় তিনি বলেন,‌ জালাল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। হাজা মনির (মার্শাল আর্ট কনফেডারেশনের সেক্রেটারি) বাসায় আমাদের সপ্তাহে একটি আড্ডা হতো। স্ত্রী বিয়োগের পর সে কিছুটা একাকীত্ব বোধ করতো। আমরা বন্ধুরা তাকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করতাম।

বিএসজেএ কার্যালয়ে জালাল আহমেদ চৌধুরী স্মরণসভায় অনেক ক্রীড়া সাংবাদিক,লেখক উপস্থিত ছিলেন। স্মরণসভার আগে সকালে জালাল আহমেদ চৌধুরির আত্নার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন পাঠ হয়। স্মরণসভার পর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এজেড/এমএইচ