বাংলাদেশ দলে একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। আসলে আক্ষেপ বলা উচিৎ হবে না, উপেক্ষা বলা যায়। লেগ স্পিনার যে নেই এমনটিও না। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলে না। এবার টেস্ট খেলুড়ে একমাত্র দল হিসেবে লেগ স্পিনার ছাড়াই টি-য়োয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিল টাইগাররা। আমিনুল ইসলাম, যুবায়ের হোসেন লিখন, মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদির সঙ্গে উপেক্ষিত রিশাদ হোসেনও।

রিশাদকে নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিনের। উপরের বাকি ৩ জন লেগ স্পিনার, যার মধ্যে আমিনুলই শুধু ব্যাটিংটা টুকটাক পারেন। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতে বাকিদের থেকে ঢের এগিয়ে রিশাদ। নিজের সামর্থ্য প্রমাণ দিলেন চলমান বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ফাইনালে। যেখানে ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন অনবদ্য একটি ইনিংস। ১ রানের আক্ষেপে পুড়ে আউট হন ৯৯ রানে।

অথচ এ ম্যাচেও তার সুযোগ হতো না। কিছুদিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কড়া ভাষায় জানিয়েছেন, এখন থেকে বোর্ডের সব টুর্নামেন্টের দলগুলোতে একজন করে লেগ স্পিনার খেলানো হবে। পরে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে মাঠে নামেন রিশাদ। খেলতে নেমেই ইনিংসে ৫ উইকেটের পাশাপাশি ম্যাচে ৭ উইকেট পান। এবার বাজিমাত করলেন ব্যাট হাতে। এতে বিসিএল ফাইনালে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল।

মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (৫ জানুয়ারি) চতুর্থ দিন শেষে ২১৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মধ্যাঞ্চলের সংগ্রহ ৩ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান। ভরসা হয়ে ক্রিজে আছেন সৌম্য সরকার (৮) ও সালমান হোসেন ইমন (৫)। 

পাঁচদিমের ম্যাচে ৫১ রানে পিছিয়ে থেকে দক্ষিণাঞ্চল গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে, দিন শেষ করে ১ উইকেটে ৪৩ রান তুলে। পিনাক ঘোষ ২২ ও অমিত হাসান ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন। 

আজ চতুর্থ দিনে দুজনে অবশ্য বেশি দূর যেতে পারেননি। পিনাক ২৭ ও অমিত ফিরেছেন ৪১ রান করে। আবু হায়দার রনির পেস বোলিং তোপে পরের ব্যাটাররাও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ১১৯ রানেই হারায় ৭ উইকেট। 

তবে সেখান থেকে রিশাদ হোসেনের ব্যাটে লেখা হয় পরের গল্প। নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৮ম উইকেট জুটিতে ৪৪ রান যোগ করেন। নাসুম ৭৩ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় ৪১ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন। এরপর ৯ম উইকেট জুটিতে মেহেদী হাসান রানাকে নিয়ে রিশাদ যোগ করেন আরও ৬১ রান, যেখানে রানার অবদান মাত্র ১১ রান। এরপর শেষ উইকেট জুটিতে  কামরুল ইসলাম রাব্বিকে নিয়ে রিশাদ তোলেন আরও ৪৪ রান, যেখানে রাব্বির ছিলেন রানশূন্য।

৬৩ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে রিশাদ ছিলেন সেঞ্চুরির পথেই। কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেছেন সেঞ্চুরির থেকে মাত্র ১ রান দূরে থেকে। ততক্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের স্কোরবোর্ডে ২৬৮ রান।  

শেষ ৩ উইকেটে তোলা ১৪১ রানের ৯৯ রানই এসেছে রিশাদের ব্যাট থেকে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের লিড দাঁড়ায় ২১৭ রানের। মধ্যাঞ্চলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির। চলতি বিসিএলে এটি তার দ্বিতীয় ৫ উইকেট শিকার। 

২১৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে এদিন মাত্র ৯ ওভার ব্যাট করতে পারে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল। তবে তাতেই নাসুম আহমেদের স্পিন ঘূর্ণিতে কাবু হতে হয়েছে, ২৬ রানেই হারায় ৩ উইকেট। আউট হওয়া ৩ ব্যাটসম্যানের কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। সৌম্য সরকার ৮ ও সালমান হোসেন ইমন অপরাজিত আছেন ৫ রানে। নাসুম ২ ওভারে ২ মেডেনসহ নেন ২ উইকেট।

টিআইএস