দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দল থেকে একপ্রকার হারিয়েই গেছেন দেশটির সাবেক অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। বলা যায়, বর্তমানে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দিয়েই নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রথমবারের মতো এই প্রোটিয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে আসেন। তবে খালি হাতে ফেরেননি, দলকে পাইয়ে দিয়েছেন শিরোপার স্বাদ। প্রায় ১ মাসের এই যাত্রায় নিজে যেমন শিখেছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে। 

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ফাফ জানিয়ে গেছেন, বিপিএল থেকে বাংলাদেশের অনেক প্রাপ্তি আছে। এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন- মাহমুদুল হাসান জয়, লিটন দাস, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ অবস্থানসহ নানান বিষয় নিয়ে।

প্রশ্ন: প্রথমবার মতো বিপিএল খেলতে বাংলাদেশে এলেন, নিজের প্রথম আসরেই কুমিল্লার হয়ে শিরোপার স্বাদটাও পাওয়া হলো। সময়টা কেমন ছিল?

ডু প্লেসি: আমি খুবই খুশি। দারুণ ক্রিকেট হলো। আমি প্রথমবার বিপিএল খেললাম, ট্রফি জিতলাম। কুমিল্লা তাদের তৃতীয় শিরোপা জিতল। তারা দারুণ এক ফ্র্যাঞ্চাইজি।

প্রশ্ন: বিপিএলে স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটারদের কেমন দেখলেন?

ডু প্লেসি: এই টুর্নামেন্ট থেকে অনেক প্রাপ্তি আছে। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ আছে বাংলাদেশে। ছেলেরা ভয়হীন ক্রিকেট খেলেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন ক্রিকেটারদের প্রয়োজন। তাহলে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।

প্রশ্ন: আপনার দল কুমিল্লার হয়ে তো মাহমুদুল হাসান জয় দারুণ খেললো...

ডু প্লেসি: জয় টেস্ট দলে খেলেছে। তবে সাদা বলের ক্রিকেটেও নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের পাঁচজন সিনিয়রকে দেখেছেন, তাদের সঙ্গে খেলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান প্রজন্ম কেমন?

ডু প্লেসি : বিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারা (জুনিয়র) সিনিয়রদের সাথে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদেরও পাচ্ছে। সুনীল নারাইন, মঈন আলী, ডোয়াইন ব্রাভোর মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলছে। তরুণরা এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে। তাদের ভয়হীন ক্রিকেট চালিয়ে যেতে হবে, অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। আমি তাদের দেখতে মুখিয়ে আছি।

প্রশ্ন : সামনেই তো বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। এই প্রসঙ্গে আপনার কুমিল্লা দলের সতীর্থ লিটনের সঙ্গে কথা হয়েছে?

ডু প্লেসি : আমরা অনেক কথা বলেছি। সে দারুণ। দক্ষিণ আফ্রিকায় পারফর্ম করতে হলে কী করতে হবে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেছে আমাকে। আমি যতটা পেরেছি সহায়তা করেছি। তারা যে দুই ভেন্যুতে খেলবে (ডারবান ও পোর্ট এলিবাজেথ) সেখানে উইকেট একটু ধীর। এটা উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য সহায়ক হবে। সেঞ্চুরিয়ন, জোহানেসবার্গ, কেপটাউনের উইকেট অনেক দ্রুতগতির। উইকেটের দিক থেকে তাই বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। স্পিনাররাও সহায়তা পেতে পারে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্পিনারদের কেমন দেখলেন?

ডু প্লেসি : বিপিএলের মান অনেক ভালো। এখানে মানসম্পন্ন স্পিনারে ভর্তি। প্রতি দলেই ভালো ভালো বাঁহাতি ও অফ স্পিনার আছে। তবে লেগ স্পিনার নেই দেখে অবাক হলাম। উপমহাদেশে খেলতে আসার সময় অনুমান করা হয় এখানে হয়ত অনেক লেগ স্পিনার লাগে। কিন্তু এখানে তেমনটা দেখিনি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের উইকেট তো বেশ আলোচিত। আপনার মূল্যায়ন কী?

ডু প্লেসি : টুর্নামেন্টের শেষভাগে উইকেট অনেক ভালো ছিল। শুরুতে উইকেট একটু ভেজা ছিল। স্পিনাররা অনেক সহায়তা পেয়েছে। রানও বেশি হচ্ছিল না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনটা দেখা যায় না। তবে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয়াংশে উইকেট ব্যাটারদের পক্ষে ছিল। সাদা বলের ক্রিকেটে এটাই লোকে দেখতে চায়। আসলে প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই উইকেট অনেক ভালো ছিল।

প্রশ্ন : বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোথায় দেখেন? 

ডু প্লেসি : উত্থানপতন আছে। বিশ্বকাপে তারা অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। দারুণ খেলেছে। সর্বশেষ আইসিসি ইভেন্ট তাদের ভালো যায়নি। এখানকার উইকেট টি-টোয়েন্টির জন্য ভালো নয়, এটা অন্যতম একটা কারণ। রান হতে হবে, এতে আত্মবিশ্বাসী হবে ছেলেরা। ১৮০-১৯০ রান স্কোর, এমন উইকেটে খেলে আদর্শ প্রস্তুতি হয়।

প্রশ্ন : আপনাকে ভবিষ্যতে কী আবার বিপিএলে দেখা যাবে?

ডু প্লেসি : আমি যত বেশি সম্ভব টুর্নামেন্টগুলো খেলতে চাই। বছরে ৫-৬টি টুর্নামেন্ট খেলতে চাই। আমরা এখনো বিপিএলের আগামী মৌসুমের সূচি জানি না। তবে পরিকল্পনা থাকবে আবারও এখানে আসার।

প্রশ্ন : বিপিএলের পারফরম্যান্স আইপিএলে কতটা সাহায্য করবে? 

ডু প্লেসি : ক্রিকেট খেলা মানেই আমার জন্য সেটি সহায়ক। এখন খুব একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলি না। ভালো বোলারদের মোকাবেলার বিষয়টা অব্যাহত রাখা জরুরী। তাই বিপিএলে খেলা আমার অনেক কাজে আসবে। হ্যাঁ, এটা আইপিএলের প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

টিআইএস/এমএইচ/এটি