সাকিব-তামিমদের গায়ে তিন তরুণের জার্সি
আধুনিক ক্রিকেট যেমন রঙ ছাড়িয়েছে, তেমনি মাঠের ক্রিকেটও হয়েছে বেশ রঙিন। ক্রিকেটের রঙ আর রোমাঞ্চের পালে বাড়তি হাওয়া দিয়েছে ক্রিকেটারদের গায়ে চাপানো পোশাক। বর্তমান সময়ে যেটা দেখা যায়, রঙিন পোশাকের প্রতিটি সিরিজের আগেই নিত্যনতুন ডিজাইনের জার্সি গায়ে চাপিয়ে বাইশ গজে যুদ্ধে নামে দলগুলো। ব্যত্যয় হয়নি বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজে। তিন ম্যাচের এই সিরিজে নতুন ডিজাইনের জার্সি বাংলাদেশ দলের গায়ে।
এবার বাংলাদেশ দলের জার্সির ডিজাইন করেছেন মোহাম্মদ সাজীম, জাওয়াদ নাফি আর ইরতিজা তাহমিদ নামে তিন তরুণ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের মার্কেটিং বিভাগের শেষ বর্ষে পড়ুয়া এই তিন বন্ধুর দীর্ঘ প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা তাদের ডিজাইন করা অনুশীলন জার্সি এর আগে গায়ে চাপিয়েছেন। এবার তাদের ডিজাইন করা জার্সি দেখল গোটা বিশ্ব। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের গায়ে যে জার্সি সেটি সাজীম, জাওয়াদ, ইরতিজার ডিজাইনে।
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে সবুজকে আধিক্য দিয়ে লালের কম্বিনেশনে করা এই জার্সি। জার্সির দুই হাতার নিচের অংশ আর জার্সির একদম নিচের দিকের অংশে কিছুটা লাল রাখা হয়েছে, বাকিটা ডিজাইন করা হয়েছে গাঢ় সবুজে।
এর আগে জার্সির জন্য বেশ সমালোচিত হতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। এবার এজন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ব্যতিক্রম কিছু করার প্রস্তাব দেয় বিসিবি। সেটি দেখভাল করেছেন ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন এবং ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তাদের চাহিদা মেনেই এবারের জার্সিটি তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস বলছিলেন, ‘এবারের আফগানিস্তান সিরিজের জার্সি তৈরি করতে অনেক সময় নিয়েছি আমরা। প্রায় মাস খানেকের মতো আমরা শুধু জার্সির ডিজাইন নিয়েই কাজ করেছি। আমাদের ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান, সিইও, অধিনায়কের সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এই জার্সিটি নির্বাচন করি।’
যোগ করেন শাহরিয়ার, ‘আমরা যাদের কাছ থেকে জার্সি নিই, তাদেরকে আমাদের চাহিদার কথা জানাই। তারা বেশকিছু ডিজাইন জমা দিলে আমরা কিছু সংযোজন-বিয়োজন করি। এরপর এই জার্সিটি নির্বাচন করা হয়।’
টাইগারদের এই জার্সির ডিজাইনার দলের সদস্য মোহাম্মদ সাজীম বলছিলেন, এর আগে পাকিস্তান সিরিজের অনুশীলনের জার্সি তার ডিজাইনে করা। এবার মূল জার্সির ডিজাইন করতে পেরে বেশ রোমাঞ্চিত তারা
সাজীম বলেন, ‘আমরা এর আগে বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিস কিটের ডিজাইন করেছি। এবার আমাদের অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল যাতে আমরা আফগানিস্তান সিরিজের জন্য জার্সি ডিজাইন করি। আমি আর আমার দুই জন বন্ধু মিলিয়ে আমাদের ট্রায়ো নামের একটি টিম আছে। এই তিনজন মিলেই আসলে এই ডিজাইনটি করা।’
যোগ করেন সাজীম, ‘আমাদের কাছে চেয়েছিল যেন আমরা কিছু ডিজাইন দিই। আমরা আমাদের মতো কিছু ডিজাইন দিলাম। সেখান থেকে কিছু কারেকশন দিয়েছিল। মূলত তাদের চাহিদা ছিল যে সবুজের আধিক্য থাকবে, লাল একটু কম থাকবে।’
এবারের জার্সি প্রশংসিত হলেও এটির নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তু (থিম) নেই। মূলত সবুজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এই জার্সিতে।
নাফীস বলেন, ‘আমরা চেয়েছি বরাবরের মতো লাল-সবুজের প্রাধান্য দিয়ে জার্সি করতে। তবে দেখবেন এবার তুলনামূলক লাল রঙটা একটু কমানো হয়েছে। প্রতিবারই জার্সি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। এবারের জার্সি ভালো হয়েছি নাকি খারাপ হয়েছে সেটি সমর্থকরাই মূল্যায়ন করবে।’
ডিজাইনার সাজীম বললেন, ‘আমাদেরকে এবার কোনো কনসেপ্ট বলে দেয়নি। আমরা কোনো কনসেপ্ট দাড় করিনি। কালারের উপরেই বেশি ফোকাস ছিল এবার। যেহেতু বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে একটা থিম নিয়ে করা হয়েছে, সেহেতু এবার স্পেশাল কোনো ভাবনা ছিল না। মর্ডান আর ক্ল্যাসিকে যেতে চেয়েছিল, আমরা সেবভাবেই চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ দলের অনুশীলন জার্সি আর জাতীয় দলের মূল জার্সি তৈরি করা টিম ট্রায়ো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট টি-টেনের দল বাংলা টাইগার্সের জার্সিরও ডিজাইন করে। সুযোগ পেলে আরো বড় পরিসরে কাজ করার ভাবনা আছে তাদের।
টিআইএস/এমএইচ/এটি