বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর কোটি টাকার সুপার কাপ দিয়ে দারুণ চমক দিয়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। ২০০৯ সালের পর দ্বিতীয় আসর হয় ২০১১ সালে। সেই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা আবাহনী। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই কোটি টাকার প্রাইজমানি বুঝে পায়নি ঢাকা আবাহনী। 

বাংরাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ আবাহনীর কোটি টাকার সুপার কাপের বকেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আবাহনীর সুপার কাপের অর্থ এখনো পাওনা রয়েছে। মাঝে কোনো এক সময় ১৫-২০ লাখের মতো দেয়া হয়েছিল।  তবে সত্যি বড় অঙ্কই বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়াগুলো আমাদের অডিট রিপোর্টে উল্লেখ থাকে।’

গত দশ বছরে ক্লাবগুলোর কাছে বাফুফের দেনা বেড়েছে অনেক। পাওনাদের তালিকায় আবাহনীর নামটি সবার উপরে। কারণ গত দশ বছরে আবাহনী লিগ, ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ, স্বাধীনতা কাপ সহ সবচেয়ে বেশি ট্রফি জিতেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে অংশগ্রহণ ফিও। সব মিলিয়ে আবাহনী ক্লাবের বাফুফের কাছে  পাওনা ৪-৫ কোটি টাকার মতো। আবাহনীর সুনির্দিষ্ট বকেয়ার পরিমাণ না বললেও তারাই যে সবার্ধিক পাওনাদার সেটা জানালেন সাধারণ সম্পাদক,‘আবাহনীই বেশি অর্থ পাবে আমাদের কাছে। বাফুফে মাঝে মধ্যে পরিশোধ করে। সেই অঙ্কটা ৪-৫ কোটি নয় তবে কয়েক কোটি।’

একটি ফুটবল মৌসুমে দল পরিচালনা করতে বড় দলগুলোর এখন ২০-২৫ কোটির মতো খরচ। বাংলাদেশে কোনো ক্লাবেরই নিজস্ব আয়ের খাত নেই। অনুদানের উপর নির্ভর করেই চলে ক্লাবগুলো। এত অঙ্ক বকেয়া থাকলেও আবাহনী ক্লাব থেকে ফেডারেশনকে সেভাবে চাপ দেয় না। আবাহনীর কয়েক জন কর্মকর্তা আবার বাফুফের নির্বাহী কমিটিতেও রয়েছেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতায় থাকা বাফুফের নানা কর্মকান্ডে তাদেরকেই অনেক সময় অর্থায়ন করতে হয়। ফলে ফেডারেশনের কাছে ক্লাবের বকেয়া আর সেভাবে চাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না।

বাফুফে যে এখনো পেশাদার নয়, সেটার বড় প্রমাণ ক্লাবগুলোর কাছে এই বকেয়া। অংশগ্রহণ ফি, প্রাইজমানি বছরের পর বছর বকেয়া থাকে। প্রাইজমানি যেন বাফুফের কাছে এক প্রকার বোঝা,‘অংশগ্রহণ ফি কম বেশি ক্লাবগুলো নিয়মিত বিরতিতে পেয়ে থাকে। প্রাইজমানিটাই বকেয়া পড়ে বেশি। খেলা আয়োজনের পর অনেক সময় সেটা দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।’ -বলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক।

প্রাইজমানি বকেয়া থাকার পেছনে বাফুফের ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক নীতিমালা অনেকাংশে দায়ী। এক খাতের অর্থ আরেক খাতে ব্যয় হওয়ায় এই বকেয়া থাকে৷ নিয়মানুযায়ী বকেয়া থাকার কথা নয়, কারণ অনেক টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষক থাকে৷ পৃষ্ঠপোষকদের কাছে পেশ করা বাজেটে প্রাইজমানির বিষয়টিও উল্লেখ থাকে। বিশেষ করে ২০১১ সালে সুপার কাপের পৃষ্ঠপোষক ছিল সিটিসেল। যতটুকু জানা গেছে, পৃষ্ঠপোষক সেই সময় প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়েছিল। 

মাঠে এখন যেমন আবাহনী-কিংস দ্বৈরথ চলছে। বাফুফের বকেয়ার খাতাও এই দুই ক্লাবের মৃদু প্রতিযোগিতা চলছে। সেই প্রতিযোগিতায় এখন আবাহনী অনেক এগিয়ে থাকলেও কিংসও পিছু পিছু ছুটছে। গত তিন বছরের মধ্যে তারা দুই বার লিগ, দুটো ফেডারেশন কাপ, একটি স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সঙ্গে রয়েছে রানার্স আপ ট্রফি। এগুলোর কিছু অর্থ বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে। আবাহনী-কিংসের মতো অন্য দলগুলোরও বকেয়া আছে।

এজেড/এটি