কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বিশ্বকাপের মেইন প্রেস সেন্টার। দিনব্যাপী হাজারো সাংবাদিকের পদচারণায় মুখরিত। আজ মঙ্গলবারের বিকেলটি ছিল একটু ভিন্ন। ৮ বা এর বেশি বিশ্বকাপ কাভার করেছেন এমন সাংবাদিকদের সম্মাননা জানিয়েছে বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা (আইপিএস)। সেই কৃতি সাংবাদিকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ব্রাজিলের কিংবদন্তিতুল্য ফুটবলার রোনালদো দ্যা ফেনোমেনন। 

বেশ সাদাসিধে পোশাক- একটি কালো গেঞ্জি, বাদামি রঙয়ের প্যান্ট, সঙ্গে কালো কেডস। খেলোয়াড় থাকা অবস্থা যেমন ছিলেন, তার চেয়ে আরো অনেক মুটিয়ে গেছেন এখন। স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হলেও গোলের পর সেই ট্রেডমার্ক মুচকি হাসি ঠিকই রয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে সেই আগের রোনালদোকেই যেন পাওয়া গেল।

প্রবীণ অনেক সাংবাদিক পেলে, ম্যারাডোনা থেকে শুরু করে হালের মেসি-রোনালদোর খেলাও কাভার করেছেন। ক্যারিয়ারের বিশেষ এই স্বীকৃতির মুহূর্তে কীর্তিমান রোনালদোর সঙ্গে সেলফি তুলতে ভোলেননি অনেকে। 

কৃতি সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি বেশ উপভোগ করেছেন দীর্ঘদিন বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড নিজের করে রাখা রোনালদো। কখনো পর্তুগিজ ভাষায় বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের সঙ্গে খুনসুটি করেছেন আবার কখনো এআইপিএস সভাপতি মারলোর সঙ্গেও খোশগল্পে মেতেছেন। স্মারক গ্রহণ করে সবাই মঞ্চের এক কোণে দাঁড়াচ্ছিলেন। সবচেয়ে বেশি ১৭তম বিশ্বকাপ কাভার করা আর্জেন্টিনার মার্কোজের হাতে স্মারক তুলে দিয়ে সবাই এক ফ্রেমে বন্দি হলেন। সেখানেও রোনালদো সবার মধ্যমণি। 

আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরপরই রোনালদোকে নিয়ে ভিড়। 

কৃতি সাংবাদিকদের অনুষ্ঠান কাভার করতে এসেছিলেন কয়েক শ সাংবাদিক। মুহূর্তের মধ্যে অনেকে মঞ্চে উঠে পড়লেন। সবাই রোনালদোর সঙ্গে ছবি তোলার চেষ্টা করলেন। প্রথম কয়েকজন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই তুলতে পেরেছেন।

এক মিনিটের ব্যবধানে রোনালদোকে ঘিরে তৈরি হলো বড় জটলা। কেউ চলমান বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করলেন, আরেক পাশ থেকে প্রশ্ন হলো নেইমারকে নিয়ে। সেই প্রশ্ন শেষ না হতেই আরেক জন জিজ্ঞেস করলেন কাতারের আয়োজন নিয়ে। ইতোমধ্যে মঞ্চে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা এবং বুমও হাজির। ‘নো ইন্টারভিউ, এনাফ পিকচার’ কয়েক বার উচ্চারণ করে কয়েক কদম হাঁটলেন রোনালদো। 

বক্সের বড় জটলার মধ্যে ডিফেন্সের সামান্য ফাঁক দিয়ে গোলরক্ষককে বোকা বানানো রোনালদো সাংবাদিকদের দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করলেন। প্রশ্নের অথৈ সাগরের মধ্যেও তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। খুব বেশি দূর এগুতে পারলেন না। সাংবাদিকদের জটলা আরও বড় হয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতেই পর্তুগিজ ভাষায় দুই-একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। 

ব্রাজিল ও পর্তুগিজভাষী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, সাংবাদিকদের এই আয়োজনে থাকতে পেরেও তিনি বেশ গর্বিত। ব্রাজিলের এই দলকে নিয়ে ভালো কিছু আশা করছেন ২০০২ সালে গোল্ডেন বুট জয়ী এই ফুটবলার। ১৪ গোল করে রোনালদোই ছিলেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা পরে সেই রেকর্ড ভেঙেছেন। 

বিশ্বকাপে নিজের রেকর্ড হাতছাড়া হলেও স্ট্রাইকার ও ফুটবলার রোনালদো যে অনন্য। এখনো বিশ্বকাপ এবং ফুটবলের আলোচনায় তিনি থাকেন ঘুরে ফিরে। সাবেক হলেও এখনো ফুটবলপ্রেমী ও মিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও তিনি- রোনালদো, দ্য ফেনোমেনন।

এজেড/এটি/এনইউ/জেএস