কোথায় নেপালের একাডেমি, কোথায় বাফুফে!
কাঠমান্ডুর খানিকটা দূরে লালিতপুর সাদ্যবাদো শহর। এই শহরের মহাসড়ক থেকে চোখে পড়ে অল নেপাল ফুটবল এসোসিয়েশনের সাইডবোর্ড। প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে সুন্দর ছিমছাম এক ফুটবল আবহের। ছোট্ট একটা তিন তলা ভবনে আনফার কার্যালয়। এর কয়েক গজ সামনেই আনফা একাডেমির চার তলা ভবন। ভবনের সামনে মিনি টার্ফ। টার্ফের পাশেই গ্যালারি। এক কথায় ফুটবল কমপ্লেক্সের খন্ডচিত্র।
করোনার জন্য আনফা একাডেমির কার্যক্রম এখন বন্ধ। ওই কমপ্লেক্সে তৃতীয় বিভাগ ফুটবল চলতে থাকায় একাডেমিতে রেফারিরা একটা কক্ষ ব্যবহার করছিলেন। এর সুবাদে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে দেখা গেল একাডেমি ভবনটি। চারতলা ভবনের নিচ তলায় ডাইনিং রুম, স্টাডি রুম ও মেডিক্যাল কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দুই-তিনটি প্রশাসনিক রুম ও সাধারণ রুম।
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মূলত ফুটবলারদের আবাসন ব্যবস্থা। একটি কক্ষে প্রবেশ করে দেখা গেল চারটি খাট, ছোট্ট ফ্রিজ, টিভি, এসি। সুন্দর আবাসন ব্যবস্থা। সিলেটে ফিফার অর্থায়নে চালু হওয়া বাফুফে একাডেমির সুযোগ-সুবিধা এর ধারের কাছেও ছিল না।
আনফা একাডেমীতে মূলত অ-১৩ ফুটবলারদের দিয়ে শুরু হয়। প্রতি বছর পুরো নেপাল জুড়ে উন্মুক্ত ট্রায়াল হয়। শহর, প্রদেশ থেকে বাছাইকৃত হয়ে কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে আসে দুই শতাধিকের বেশি ফুটবলার। এদেরকে সপ্তাহ খানেক দেখে চূড়ান্তভাবে ৩০-৩৫ জনকে বাছাই হয়। এদের তত্ত¡বধায়নে থাকেন চার জন কোচ। চার জনই দেশি কোচ। একজন প্রধান কোচ, দুই জন সহকারি কোচ ও আরেকজন গোলরক্ষক কোচ রয়েছেন আনফা একাডেমিতে।
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছরই অনূর্ধ্ব ১৩ ফুটবলারদের নিয়ে ট্রায়াল হয়। প্রতি ব্যাচকে আনফা তিন-চার বছরের মতো পরিচর্যা করে। অনুর্ধ্ব ১৬ তে গিয়ে আবার একটি ছোট্ট ট্রায়াল হয়। জাতীয় অনূর্ধ্ব দলে খেলার মতো যোগ্যতা না থাকলে একাডেমিতে থাকা ফুটবলাররা বাদ পড়ে যান একেবারে। আবার মেধাবী কেউ থাকলে সেখান থেকে ৩-৪ জন একাডেমিতে সুযোগ পেয়ে যান। অনূর্ধ্ব ১৭র পরে আনফার সেভাবে পরিচর্যা করতে হয় না। ফুটবলার তখন বিভিন্ন পর্যায়ে ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করেন।
বর্তমান জাতীয় নেপাল দলের কোচ বিকাশ মাল্লা আনফা একাডেমির প্রথম ব্যাচ। ২০০৪-০৫ সালের দিকে আনফা একাডেমি যাত্রা শুরু করলেও গণেশ থাপার নেতৃত্বে ২০১১-১২ সাল থেকে একাডেমি মূলত বিকশিত হয়। আলাদা বড় ভবন ও সুযোগ সুবিধা বাড়তে থাকে। বর্তমান নেপাল দলের প্রায় ৮০ ভাগ ফুটবলারই আনফা একাডেমির। বর্তমান দলই নয় শুধু গত এক দশকে জাতীয় দলের অধিকাংশ ফুটবলারই এসেছে আনফা একাডেমি থেকে।
জাতীয় দলে খেলোয়াড় জোগান দেওয়া ছাড়াও অনূর্ধ্ব পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অনেক ট্রফিও এনে দিয়েছে এই একাডেমি। সাফ অ-১৯, অ-১৬ শিরোপা জয় ছাড়াও এএফসির অ-৬, ১৯ এ মূল পর্বে খেলেছে নেপাল কয়েকবার।
আনফার সভাপতি শেরপা বলেন, ‘একাডেমিকে আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। একাডেমির মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। করোনার জন্য একাডেমির ফুটবলাররা এখন বাড়িতে। তারা কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে। ইতোমধ্যে আমরা নতুন ব্যাচের জন্য ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছি।’
আনফা ভবনে ঢুকতেই চোখে পড়বে নেপালের ফুটবলের অর্জনগুলো। জাতীয় দলের অর্জন ছাড়াও যুবাদের ট্রফিও সাজিয়ে রেখেছে অল নেপাল ফুটবল এসোসিয়েশন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে অবশ্য এ রকম কোনো ট্রফি কর্ণার নেই। ট্রফি কর্নার না থাকলেও বাফুফে কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি রুম রয়েছে। অন্যদিকে নেপালে তিন তলা আনফা দালানের মধ্যে শুধু দ্বিতীয় তলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আলাদা আলাদা একটি কক্ষ রয়েছে। নির্বাহী কমিটির সবাই তৃতীয় তলায় একটি কমন কক্ষ ব্যবহার করেন।
মাত্র কয়েক মাস চালু ছিল সিলেটে বাফুফে একাডেমি। এতেই সাফ অ-১৫ চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। বাফুফে সেই একাডেমী চালিয়ে যেতে না পারায় অনেক মেধাবী ফুটবলার ঝরে গেছেন। এখন আবার একাডেমির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নেপালে চলমান ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট দেখতে এসেছেন বাফুফের ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান। জাতীয় দলের অনুশীলন ও ম্যাচ দেখেছেন। আনফা একাডেমী পরিদর্শন করবেন কি?
এজেড/এমএইচ