দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনীর ফুটবল দলে ডাগ আউটে জুটি ভাঙছে। গত কয়েক বছর কোচ হিসেবে ছিলেন পর্তুগিজ ম্যারিও ল্যামোস এবং ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রুপু। আসন্ন মৌসুমে এই দুই পদে কেউ থাকছেন না।

পতুর্গিজ কোচ ল্যামোস ইতোমধ্যে আবাহনীকে চির ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পতুর্গাল থেকে তিনি বলেন,‘ আবাহনী আমাকে এই মৌসুমে কোচের দায়িত রাখছে না। গতকাল রাতে আমাকে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ’ 

রাতে ল্যামোসকে আবাহনীর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ল্যামোসের কোচিং স্টাফ হিসেবে কাজ করা কাজী নজরুল ইসলাম, ‘নজরুলই আমাকে ক্লাবের সিদ্ধান্তটি জানিয়েছে। পাশাপাশি এটিও জানিয়েছে সে ক্লাবের নতুন ফুটবল ম্যানেজার। রুপু আর ম্যানেজার নেই’ পর্তুগাল থেকে বলেন ল্যামোস। 

আবাহনীর ফুটবল মানেই ছিলেন রুপু। আবাহনীর কোচ এবং ফুটবলার সংক্রান্ত বিষয়াদি এক যুগের বেশি সময় দেখভাল করতেন ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপু। একা হাতে রুপুকেই সব কিছু সামলাতে দেখা গেছে এত দিন। সেই রুপুর আবাহনীর ম্যানেজার থেকে সরে যাওয়া ফুটবলাঙ্গনে বেশ বড় খবর। তবে এই বিষয়ে রুপু এবং ক্লাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। 

তবে ক্লাব সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, কালকের সভায় ম্যানেজার হিসেবে আবাহনীতে রুপুর অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে। রুপুকে বর্তমানে ফুটবল কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাকে এখন কাজ বাস্তবায়নের চেয়ে উপদেষ্টা পর্যায়ে রাখা হয়েছে।

রুপুর অধীনে গত এক দশকে আবাহনীর অনেক সাফল্য রয়েছে। পেশাদার লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন সহ সবার্ধিক শিরোপা জিতেছে আবাহনী। ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ, সুপার কাপ, ভারতের বরদলুই ট্রফিতেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রুপু ম্যানেজার থাকাবস্থায়। ২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংস প্রিমিয়ার ফুটবলে আসার পর থেকেই আবাহনীর শিরোপায় ভাটা পড়ে। কিংসের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল গড়ছে গত তিন-চার মৌসুম। দুর্বল দল গড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবল দল গঠনে স্বজনপ্রীতি সহ অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণের অভিযোগ উঠেছিল রুপুর উপর। 

চলতি মৌসুমেও ল্যামোস আবাহনীতে কোচিং করাবেন এমন ধারণাই ছিল বাংলাদেশের ফুটবলাঙ্গনে। আকস্মিকভাবে এর পরিবর্তন ঘটেছে। তবে এটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন পেশাদার কোচ,‘ বাংলাদেশে আমি কোচিং ক্যারিয়ারের অনেক বড় সময় কাটিয়েছি। আমি বেশ খুশি এবং কৃতজ্ঞ সবার প্রতি।’ বাহ্যিকভাবে সন্তোষ প্রকাশ করলেও মৌসুম শুরুর আগ মুহূর্তে আবাহনীর এমন সিদ্ধান্তে খানিকটা চাপা ক্ষোভ তো রয়েছেই।

তবে এরইমাঝে নতুন কোচ ঘোষণা করেছে আবাহনী কর্তৃপক্ষ।  ডাগআউটে আসছেন আবাহনীরই সাবেক আর্জেন্টাইন কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানী। ২০০৫ সালে তাঁর অধীনে বাংলাদেশ সাফের ফাইনাল খেলে। এরপর ২০০৭ সালে আবাহনীতে কোচিং করান এই আর্জেন্টাইন।

ম্যারিও ল্যামোসে বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রথমে জাতীয় দলের ফিটনেস কোচ হিসেবে। এরপর আবাহনী এই পতুর্গিজকে হেড কোচের দায়িত্ব দেয়। আবাহনীতে ল্যামোসের সর্বোচ্চ সাফল্য এএফসি কাপের জোনাল সেমিফাইনাল খেলা। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে আবাহনীকে কোনো ট্রফি এনে দিতে পারেননি ল্যামোস।

১৮ অক্টোবর খেলোয়াড় নিবন্ধনের শেষ দিন। মাত্র কয়েক দিন আগে কোচ ও ম্যানেজার পরিবর্তনে দলের উপর বড় ধাক্কাই। এই মাসের শেষে শুরু হবে স্বাধীনতা কাপ। ইতোমধ্যে অনেক ক্লাবই অনুশীলন শুরু করলেও আবাহনী করেনি। 

এজেড/জেএ