এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে আলোচিত তারকা কে? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে যে কেউই বলতে পারেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের নাম। দুদিন আগেই শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে পয়েন্ট হারানোর শঙ্কায় থাকা লিভারপুলকে পথ দেখিয়েছিলেন লিভারপুলের নাম্বার টেন। বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই অলরেড শিবিরে এসেছিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। সেটাও কেবল ৪২ মিলিয়ন পাউন্ডে। 

অথচ তারই ব্রাইটন সতীর্থ ময়সেস কেইসেডোকে ১০০ মিলিয়নের বেশি দিয়ে কিনেছে চেলসি। সেখানে রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু লিভারপুলে বলতে গেলে উড়ছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। শেষ ৯ ম্যাচের ৮টিতেই গোলে-অ্যাসিস্টে রাখছেন অবদান। একাধিকবার লিভারপুলের ত্রাতা বনে গিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন। অনেকেই মেসির পর আর্জেন্টিনার নাম্বার টেনের ভূমিকায় দেখছেন ম্যাক অ্যালিস্টারকে।

কিন্তু লিভারপুলে কীভাবে এমন সফল হলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। মৌসুমের শুরুর দিকে যেখানে অনেকেরই অভিযোগ ছিল তাকে নিয়ে, শেষদিকে ঠিক কোন মন্ত্রে সফল হলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতা এই মিডফিল্ডার? 

মৌসুমের শুরুতে হোল্ডিং মিডফিল্ডার পজিশনে ম্যাক অ্যালিস্টার

গত মৌসুমে ব্রাইটনের জার্সিতে একের পর এক গোল আর অ্যাসিস্ট করেছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। লিভারপুলেও তাই এই মিডফিল্ডারের ওপর ভরসা ছিল বেশি। কিন্তু, দীর্ঘদিনের লিভারপুলের বিশ্বস্ত মিডফিল্ডার ফাবিনহো সৌদি লিগে চলে গেলে দেখা দেয় শূন্যতা। ম্যাক অ্যালিস্টারকে দেয়া হয় হোল্ডিং মিডফিল্ডারের ভূমিকা। শুরুর সেই সময় হার্ভি এলিয়ট এবং ডমিনিক সবোস্লাইকে সামনে খেলিয়েছেন ক্লপ। 

ম্যাক অ্যালিস্টারের সবচেয়ে বড় শক্তি দুর্দান্ত সব ডিফেন্সচেরা পাস। যেকোন জায়গা থেকে ফাইনাল থার্ডে গুরুত্বপূর্ণ পাস দিতে সিদ্ধহস্ত এই আর্জেন্টাইন। নিচের এই হিটম্যাপ থেকে তার কিছুটা নমুনা পাওয়া যেতে পারে। এই চিত্রে দেখানো সবগুলো ফাইনাল থার্ড পাসই ছিল প্রতিপক্ষের জন্য ভীতিজাগানিয়া। 

ফাইনাল থার্ডে ম্যাক অ্যালিস্টারের পাসিং ম্যাপ

মৌসুমে ম্যাক অ্যালিস্টারের পরিবর্তনের বড় কারণ ওয়াতারু এন্ডো। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড পজিশনে রোমিও লাভিয়া এবং মইসেস কেইসোডোকে আনতে ব্যর্থ হয়ে স্টুটগার্ড থেকে উড়িয়ে আনা হয় ওয়াতারু এন্ডোকে। জাপানের এই মিডফিল্ডারের ওয়ার্করেট মাঠে অনবদ্য। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ডাচ তরুণ রায়ান গ্রাভেনবার্গ। ম্যাক অ্যালিস্টারকে এরপর ৬ নম্বর রোল থেকে নিয়ে আসা হয় ৮ নম্বর রোলে। আর ডমিনিক সবোস্লাই পেয়ে যান দারুণ এক সঙ্গী। 

হেন্ডারসন, ফাবিনহো, ওয়াইনাল্ডাম, মিলনারদের হারিয়ে নতুন এক ফর্মেশন পেয়ে যান ক্লপ। তাতে দারুণভাবে ঘুরিয়েও দাঁড়িয়েছে তার দল। ড্রিবল করার সহজাত ক্ষমতা, দারুণ সব পাসের পাশাপাশি সেট পিসেও নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করেছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। সেইসঙ্গে ট্যাকেল করার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে তার। এমনকি লিভারপুল স্কোয়াডে সবচেয়ে বেশি ট্যাকলটাও করেছেন তিনি। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দুই সেন্টার ব্যাক ভার্জিল ভ্যান ডাইক ও জো গোমেজ করেছেন ৬৭ ট্যাকল। যেখানে ম্যাক অ্যালিস্টার একাই করেছেন ৬৪টি। 

সময়ের সঙ্গে নিজের খেলার পরিধিও বাড়িয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার

শুধুমাত্র পরিসংখ্যান বাদ দিলেও নিজের দারুণ প্রেসিং ক্ষমতা দিয়ে প্রতিনিয়ত লিভারপুলের ত্রাতা হয়েছেন। ইংলিশ লিগে চলতি মৌসুমে করেছেন ৪ গোল এবং ৫ অ্যাসিস্ট। মোহাম্মদ সালাহ ইনজুরিতে থাকা অবস্থায় রাইট উইংয়ে হার্ভি এলিয়টকে দিয়েছেন সঙ্গ। মৌসুমের শেষদিকে এসে হিটম্যাপেও তাই এসেছে বড় পরিবর্তন। 

ম্যাক অ্যালিস্টারের পরিসংখ্যানগুলোই প্রমাণ করে এই মৌসুমে অলরেডদের জন্য তার কার্যকরীতা কত বেশি। এখন পর্যন্ত ৮৭.৮ শতাংশ সফল পাস দিয়েছেন এই মিডফিল্ডার। প্রতিম্যাচে গড়ে ৫৮ এর বেশি পাস দিয়েছেন। কি-পাস দিয়েছেন ১.৪টি। বল ইন্টারসেপশন এবং ট্যাকেলেও দারুণ সফল তিনি। প্রতি ম্যাচেই আছে গড়ে ৩টি সফল ট্যাকেল। বলা যেতে পারে মিডফিল্ডের এক কমপ্লিট প্যাকেজ অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার।  

সবকিছু মিলিয়ে চলতি মৌসুমে লিভারপুলের জন্য বড় এক আশীর্বাদই বলা চলে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে। মনোনয়ন পেয়েছেন মাসের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায়। ক্লপের বিদায়ী মৌসুমে তিন শিরোপার সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছে অলরেডরা। সেখানে বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন লিভারপুলের আর্জেন্টাইন নাম্বার টেন।  

জেএ