বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের দায়িত্বে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে আরও দুই বছর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফুফে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সাবিনা খাতুনদের কোচ থাকবেন। ব্রিটিশ এই কোচকে ফেডারেশন দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব দেওয়ায়, নারী ফুটবলারদের মধ্যে খানিকটা অস্বস্তি কাজ করছে। 

পিটার বাটলারের সঙ্গে কয়েকজন নারী ফুটবলারদের সঙ্গে দূরত্ব ছিল। বিশেষ করে নেপালের কাঠমান্ডু সাফে সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কোচের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। নানা সংকট পেরিয়ে সাবিনারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কোচ-খেলোয়াড় দূরত্ব খানিকটা ঢাকা পড়ে। বাটলার-বাফুফের নতুন চুক্তি আবারও সামনে এসেছে সেই সংকট।

সাবিনারা সাফ খেলতে কাঠমান্ডু যান সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের মেয়াদের একেবারে শেষদিকে। মেয়েরা ৩০ অক্টোবর যখন চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরে, তখন বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দীর্ঘমেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার আগে বাফুফে সভাপতির সঙ্গে সাবিনাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও কোচের বিষয়টি আলোচনা হয়নি। পরে তারা প্রায় দুই মাস ছুটিতে থাকায় ফেডারেশনেরও খেলোয়াড়-কোচ দ্বন্দ্ব ইস্যু সমাধানের চেয়ে কোচের চুক্তি নবায়নেই বেশি মনোযোগ ছিল।

পিটার বাটলার কোচ হিসেবে তুলনামূলক উন্নত মানেরই। লাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল ও শীর্ষ পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন তিনি। বাটলার উঠতি ফুটবলারদের বেশি প্রাধান্য দেন। এতে অনেক ফুটবলার মনে করেছেন, তারা কোচের কাছ থেকে যোগ্য সম্মান পাননি, উল্টো অবমূল্যায়িত হয়েছেন। তাদের মতে, নারী ফুটবলের এই অবস্থানের পেছনে তাদের অনেক ত্যাগ-অবদান রয়েছে, কোচ সেটি ধর্তব্যেই আনেন না। অন্যদিকে, কোচের কাছে অতীতের চেয়ে বর্তমান পারফরম্যান্স ও ফিটনেসই মূখ্য।

সাফ চলাকালীন সময়ে নারী ফুটবল কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ দুই পক্ষকে সাময়িকভাবে শান্ত করলেও নারী ফুটবলারদের অনেকে এই কোচের অধীনে পুনরায় নিয়মিত থাকতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী ফুটবলার ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা মাঠে খেলে চ্যাম্পিয়ন করেছি। আমাদের কিছু ইস্য ছিল। সেগুলো সমাধান না করেই, ফেডারেশন এমন সিদ্ধান্ত নিলো।’ ২০২৬ সালে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। যেখানে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। অনেকে ভাবছেন, পিটার বাটলার থাকলে তারা সাফ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন না!

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পিটার বাটলারকে নারী দলের কোচ হিসেবে রেখে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরই ফুটবলারদের ক্যাম্প-অনুশীলন বর্জনের একটি খসড়া পরিকল্পনা ছিল। গতকাল বাফুফে অফিসিয়ালি ঘোষণা দিলেও নারী ফুটবলাররা এখনও নীরব। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতোমধ্যে ক্যাম্পে কয়েকজন এসেছেন, আগামীকাল-পরশু’র মধ্যে বাকিরাও আসবেন। কোচের সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে তারা ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চান। সভাপতি এখন একটি বিশেষ সফরে দেশের বাইরে রয়েছেন। কবে নাগাদ ফিরবেন নিশ্চিত নয়। সভাপতি দেশে ফেরার আগে বাটলার ফিরে অনুশীলন শুরু করলে দোটানায় থাকবেন ফুটবলাররা।

এদিকে, সভাপতির সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে ফুটবলারদের। এক যুগেরও বেশি সময় নারী ফুটবল উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ থাকলেও নারীরা এই সংকট দূরীকরণে শুধু সভাপতির ওপরই আস্থা রাখতে চান। 

এজেড/এএইচএস