ম্যাচ বয়কটে অটল রেফারিরা, হেলদোল নেই ফেডারেশনের
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে আগামীকাল তিনটি ম্যাচ। মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কিংস অ্যারেনায় তিন ভেন্যুতে তিন ম্যাচ পরিচালনা নিয়ে গভীর সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ফেডারেশন থেকে সম্মানী না পাওয়ায় রেফারিরা ম্যাচ পরিচালনা করবেন না এমন সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন। গতকাল রেফারিরা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার পর ফেডারেশন আজ সারাদিনের মধ্যেও কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি, এমনকি দায়িত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি রেফারিদের সঙ্গে আলাপের প্রয়োজন বোধ করেননি। একাধিক শীর্ষ রেফারির মাধ্যমে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ফুটবলের অন্যতম প্রধান অংশ রেফারি। সেই রেফারি বাংলাদেশে বরাবরই অবহেলিত। তবে তাবিথ আউয়ালের বর্তমান কমিটির কাছে যেন আরো বেশি অবহেলিত,' আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। খেলা পরিচালনা না করা ছাড়া আমাদের আর পথ নেই। এমন অবস্থানে যাওয়ার পরও আজ ফেডারেশনের কেউই আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেনি। আসলে তাদের যোগাযোগ করার অবস্থাও নেই। ৯ এপ্রিল সভাপতি আমাদের সাথে বৈঠকে সম্মানী প্রদানের একটা সময় দিয়েছিলেন, সেটা অতিবাহিত হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার সময় দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ বলেছিলেন, বুধবার (গতকাল) যেভাবেই হোক দেবেন। সেটা ব্যর্থ হওয়ার পরই আমরা খেলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রেফারি এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞাপন
বিগত সময়ে রেফারিদের এমন অনেক আন্দোলন হয়েছে। পরবর্তীতে দ্রুত অর্থের ব্যবস্থা করেছেন ফেডারেশন কর্তারা। আজ দিনভর শোনা গেছে, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি সহ নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করেছেন রেফারিদের অর্থ প্রদানের জন্য। একবার শোনা গিয়েছিল, রাত নয়টার মধ্যে রেফারিদের ফেডারেশন কাপের ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। রাত দশটা পার হলেও রেফারিদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই ঢুকেনি। যদিও রেফারিজ বিভাগের প্রধান আজাদ রহমান রেফারিদের আভ্যন্তরীণ গ্রুপে অর্থ প্রদানের রসিদ দিয়ে আগামীকালের ম্যাচ এলটমেন্ট দিয়েছেন। সেই এলটমেন্টে রেফারিরা এখনো কোনো সাড়া দেননি। রেফারিদের সংকট নিয়ে ফেডারেশনের কারো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন।
বিসিএল চলতি লীগের প্রথম পর্বের ৪৫ ম্যাচ, ফেডারেশন কাপ সম্পূর্ণ, চলতি বিপিএল এর প্রথম পর্বের ২০ ম্যাচের বিল একসঙ্গে পরিশোধ করার দাবি ছিল রেফারিদের। চলতি বিসিএল এবং বিপিএলের দ্বিতীয় পর্বের খেলা শেষে ঈদুল আজহার আগে বিল পরিশোধ করার নিশ্চয়তা দিলে রেফারিরা মাঠে ফিরবে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেফারিরা এমন অবস্থানেই আছেন। যদিও ফেডারেশন বিগত সময়ের মতো রেফারিদের ঐক্য ভাঙনের চেষ্টা করছে একেবারে ব্যর্থ হলে তখন নিচের স্তরের রেফারি দিয়ে খেলা পরিচালনা করার বিকল্প ভাবনাও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিদের বকেয়া অনেক পুরোনো ইস্যু। ১৬ বছর বাফুফে সভাপতি থাকা কাজী সালাউদ্দিন তাবিথ আউয়ালের ঘাড়ে এক কোটি টাকার উপর রেফারিজ বিল বকেয়া রেখে গেছেন। তাবিথ আউয়াল দায়িত্ব নেয়ার পরপরই চলতি মৌসুমের অর্থ হালনাগাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটারও বাস্তবায়ন নেই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মাত্র চার রাউন্ডের খেলা বাকি। অথচ শুধুমাত্র প্রথম লেগের পাঁচ রাউন্ডের বিল পেয়েছেন রেফারিরা। ফেডারেশন কাপ পুরোই বাকি, প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশীপ লিগেও অর্থকড়ি পাননি রেফারিরা। বাফুফে নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও অন্যতম সক্রিয় সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম পেশাদারিত্ব ও আধুনিকতার অনেক বুলি আওড়ানো। অথচ ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিদের এই অসহায়ত্ব প্রমাণ করছে তাদের প্রকৃত অবস্থা।
তাবিথ আউয়াল ও ফাহাদ করিমরা ঘরোয়া ফুটবলে বেশ উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। নির্বাচনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো রেফারিজ কমিটি গঠন করতে পারেনি ফেডারেশন। রেফারিদের সমস্যা সমাধানে স্পষ্টত ব্যর্থ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপের স্পন্সর বসুন্ধরা গ্রুপ। স্পন্সর বাফুফেকে অর্থ প্রদান করেছে কিনা নাকি বাফুফে সেই অর্থ পেয়ে অন্য খাতে খরচ করেছে সেটাও ধূম্রজালের তৈরি হয়েছে। হামজা-সামিতকে বাংলাদেশের হয়ে খেলিয়ে তাবিথরা কৃতিত্ব দেখালেও ঘরোয়া ফুটবল ও ফেডারেশনের নানা ইস্যুতে একেবারে হযবরল পরিস্থিতি। এতে অবশ্য তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, আগামীকাল সকালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফাইনাল উপলক্ষ্যে রয়েছে নির্বাহী সভা। এভাবেই চলছে ফেডারেশন।
এজেড/এইচজেএস/এআইএস