বাফুফের অনুরোধের পর রেফারিরা কি ফিরবেন?
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের তিনটি ম্যাচ। সেই তিন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় আরও গভীর হয়েছে। গতকাল রাতে এই তিন ম্যাচের জন্য রেফারি, সহকারী রেফারিরা এখনও খেলা পরিচালনা করতে চান না বলে জানিয়েছেন। তিন ম্যাচ কমিশনারও ভেন্যুতে উপস্থিত হননি। ফলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
রেফারিরা চলমান মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বের ছয়-নয় রাউন্ড, ফেডারেশন কাপের সম্পূর্ণ বিল ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর বিসিএলের প্রথম পর্বের অর্থ বুধবারের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়েছিলেন। রেফারিদের এই দাবির প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র ফেডারেশন কাপের ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছে ফেডারেশন। বৃহস্পতিবার ব্যাংকিং সময়ের শেষে জমা হওয়ায় সেই অর্থ রেফারিদের অ্যাকাউন্টে সোমবারের আগে প্রবেশ করবে না।
বিজ্ঞাপন
রেফারিদের অ্যাকাউন্টে কালই অর্থ ঢুকছে না এটা জেনেও বাফুফে কর্তারা কোনো উদ্যোগ নেননি। রেফারিজ বিভাগের প্রধান আজাদ রহমানের ওপরই বাফুফে কর্তারা ভরসা রেখেছিলেন– তিনি রেফারিদের বুঝিয়ে মাঠে নামাতে পারবেন। গতকাল রাতভর সেটা ব্যর্থ হওয়ায় সকালে ফেডারেশন কর্তাদের হুঁশ ফিরেছে। আজ সকালে ফর্টিজ জলসিড়িতে বাফুফের নির্বাহী সভায় রেফারিদের সঙ্গে নির্বাহী কমিটির দুই কর্মকর্তা সরাসরি মুঠোফোনে আলোচনা করেন। সোমবারের মধ্যে ফেডারেশন কাপের বিল তাদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ এবং চলমান মৌসুমের বিলও দ্রুত সময়ে পরিশোধের আশ্বাস দেন তারা। এতে রেফারিরা অবশ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেননি। এখন ফেডারেশন নিচের স্তরের রেফারি দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার শেষ চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
ফর্টিজ জলসিড়িতেই ইন্টার স্কুল সিটির ফাইনাল ছিল। সেই ফাইনাল শেষে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফুটবলের কয়েকটি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেখানে রেফারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ফুটবল বড় পরিবার। রেফারিরা আমাদের পরিবারের অংশ। রেফারিদের সেক্রিফাইসকে আমরা সম্মান করি। তারা অনেক সময় অর্থ দেরিতে পায়। খেলা পরিচালনায় তারা অনেক কষ্ট করে। রেফারিদের বিষয়ে আমরা সমাধানের পথে চলে এসেছি।’
রেফারিদের বকেয়া তো থাকেই, পাশাপাশি রেফারিরা নিজের ঘাটের পয়সা খরচ করে ভেন্যুতে গিয়ে খেলা পরিচালনা করেন মাসের পর মাস। আর ফেডারেশনের দিকে তাকিয়ে থাকেন বিলের জন্য। এই বিষয়ের পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত তাবিথের কণ্ঠে, ‘আমরা স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে চাই। আমরা শর্টটাইম অনেক সমাধান দিতে পারি, পরে যদি সেই সমস্যা–ই থাকে তাহলে আর লিগ্যাসি থাকল না। আমরা রেফারিদের ফিউচ্যার পেমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছি।’
রেফারি ফুটবলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের ফুটবলে রেফারি বরাবরই অবহেলিত থেকেছেন। তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে বাফুফের নতুন কমিটিও রেফারি নিয়ে চরম উদাসীন। এখন পর্যন্ত রেফারিজ কমিটিই করতে পারেনি, অথচ তিন সপ্তাহ পর মৌসুম শেষ। রেফারিদের এই আন্দোলনকেও হালকাভাবে দেখেছেন ফেডারেশন কর্তারা। গতকাল সারাদিন সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি বা কোনো এক সহ-সভাপতিও রেফারিদের আশ্বস্ত করা কিংবা জরুরি কোনো বৈঠকের প্রয়োজনবোধ করেননি। তারা সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ও রেফারিজ বিভাগের প্রধান আজাদ রহমানের ওপরই ভরসা রেখেছেন। রেফারিরা সাধারণ সম্পাদকের ওপর এতটাই বিরক্ত যে ফোন, মেসেজ কোনো কিছুরই জবাব দেননি। আজ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ফেডারেশন কর্তারা ফোন করেছেন।
ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিদের বকেয়া অলিখিত নিয়ম। বাফুফের সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তাবিথ আউয়ালের ঘাড়ে এক কোটি টাকার ওপর রেফারিজ বিল বকেয়া রেখে গেছেন। পুরোনো অনেক বকেয়া তো রয়েছেই, চলতি মৌসুমে রেফারিরা এখন পর্যন্ত মাত্র প্রিমিয়ার লিগের ২৫ ম্যাচের বিল পেয়েছেন। ঈদের আগে রেফারিদের বিল প্রদান ঘরোয়া ফুটবলের রীতি। তাবিথ আউয়ালের কমিটি এবার সেটাও পারেনি। চাপের প্রেক্ষিতে ফেডারেশন কাপের বিল দিয়েছে, যেটা রেফারিদের পকেটে ঢুকেনি এখনও।
এজেড/এএইচএস