কুমিল্লায় রেফারি সায়মন সানির শেষ বাঁশি। মতিঝিল মোহামেডান ক্লাবে খেলোয়াড়-কোচিং স্টাফদের উল্লাস। পেশাদার লিগে মোহামেডানের প্রথম শিরোপা আর ঘরোয়া ফুটবলে ২০০২ সালের পর। তাই সবার বাঁধভাঙা উল্লাসই ছিল। সমর্থকরাও কিছুক্ষণের মধ্যে এসে হাজির। সব মিলিয়ে এক বড় আনন্দের উপলক্ষ্য। 

মোহামেডানের বর্তমান ফুটবল ম্যানজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব। তিনি ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যও ছিলেন। তাই নকীবের প্রতিক্রিয়া একটু অন্য রকমই, ‘১৯৮৯-৯৪ পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেছিলাম। ১৯৯৪-৯৮ মুক্তিযোদ্ধায় এরপর ১৯৯৯-০৭ মোহামেডান থেকেই অবসর নিয়েছি। খেলোয়াড় হিসেবে মোহামেডানের অনেক শিরোপাই জিতেছি। ২০০২ সালে খেলোয়াড় হিসেবে ছিলাম এবার ম্যানেজার হিসেবে। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল মোহামেডান পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে। অবশেষে হয়েছে।’

২০০৭ সাল বাফুফে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে পেশাদার লিগ আঙ্গিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রুপান্তর করেছে। প্রথম তিন মৌসুম রানার্স আপ হয়েছিল। এরপর আর মোহামেডান শিরোপা দৌড়ে থাকতে পারেনি। শেখ রাসেল, শেখ জামাল ও পরবর্তীতে বসুন্ধরা কিংসের দাপটে লিগ টেবিলে নিচের দিকেই ছিল। 

২০১৯ সালে ক্যাসিনো কান্ডের পর মোহামেডান ক্লাব অস্তিত্বের সংকটের মধ্যেই পড়ে। সাবেক ফুটবলার ও কয়েকজন সংগঠকের চেষ্টায় ক্লাবটি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। তাই আজকের এই সাফল্যকে গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টার সফলই বললেন নকীব, ‘২০১৯ সালে ক্লাবটি বেশ সংকটে পড়েছিল। আমরা সেখান থেকে প্রতি বছরই ধীরে ধীরে এগিয়েছি। গত বছর রানার্স আপ হয়েছিলাম। এর আগে তৃতীয়। এবারই চ্যাম্পিয়ন হব ভাবিনি, শেষ পর্যন্ত হয়ে যাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে।’

২০২১ সাল থেকে মোহামেডানের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালকই চার বছরের বেশি সময় মোহামেডানের ফুটবল দল দেখাশোনা করছেন। এই শিরোপা জয়ের পেছনে দুই জনকে বিশেষ ধন্যবাদ দিলেন নকীব, ‘আমাদের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আলমগীর ভাই সব সময় দলের জন্য যা প্রয়োজন তাই করেছেন। ক্লাব সভাপতিও দলকে সার্বক্ষণিক উৎসাহ জুগিয়েছেন। এই দুই জনের অবদান অনেক। ’

মোহামেডান ক্লাবের অন্যতম পরিচালক ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর দলের এই সাফল্যে বলেন, ‘এটা মোহামেডান ক্লাবের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ট্যাকনিক্যাল কমিটির সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সাফল্য। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এই দলের খেলোয়াড়দের নাম ক্লাব প্রাঙ্গনে বিশেষভাবে খোদাই করে রাখার। কারণ পেশাদার লিগের প্রথম শিরোপা ও দীর্ঘ দুই দশক পর লিগ চ্যাম্পিয়ন।’ 

লিগ শিরোপা উদযাপনের জন্য মোহামেডান দিনক্ষণ ঠিক করবে শীঘ্রই, ‘আমাদের আরো তিন ম্যাচ রয়েছে। ক্লাবের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এটি ঠিক হবে। সেখানে খেলোয়াড়দেরও সম্মানিত করা হবে। ’

মোহামেডানের সাফল্যের অন্যতম কারিগর অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। গত ছয় বছর যাবৎ তিনি সাদা কালো দলে খেলছেন। তার গোলে চলতি লিগেও একাধিক ম্যাচ জিতেছে মোহামেডান। আজ মোহামেডানের শিরোপা জেতায় তার বাংলাদেশ জার্নি অনেকটাই তৃপ্ত, ‘অনেক ক্লাব থেকে আমার অফার ছিল। আমি যাইনি, মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করতে চেয়েছি। আল্লাহর রহমতে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটাই আমার তৃপ্তি।’

মোহামেডান চলতি মৌসুমেও অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে ছিল। ফুটবলারদের বেতন বকেয়া পড়েছিল কয়েক মাস। এ নিয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও আজ খুশির দিনে সেগুলো স্মরণ করতে চান না গোলরক্ষক সুজন হোসেন, ‘এই বছর অনেক ক্লাবেই বকেয়া আছে। আমরা ক্লাবের জন্য খেলেছি, চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ক্লাবও আমাদের বিষয়টি দেখবে নিশ্চয়ই। এ নিয়ে কোনো আফসোস নেই।’

মোহামেডান দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও সমর্থকপুষ্ট ক্লাব। দীর্ঘদিন পর লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দুর দুরান্ত থেকে সমর্থকরা হাজির হয়েছেন অল্প সময়ের মধ্যে। মোহামেডানের সমর্থকদের বিশেষ গ্রুপ মহাপাগলের অন্যতম কর্মকর্তা টি ইসলাম তারিক আবাহনীর হারে মোহামেডানের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে বলেন, ‘আমরা মাঠেই শিরোপা উৎসব করতে চেয়েছিলাম। আবাহনীর হারে আজই চ্যাম্পিয়ন হলাম। এটা অনেকটা ৩০ রমজানের জন্য অপেক্ষা করে ২৯ রমজানে ঈদের চাদ উঠার মতো। ’

এজেড/জেএ