গত পাঁচ-ছয় বছর ধরেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের অন্যতম ভেন্যু মুন্সীগঞ্জ। আবাহনী, মোহামেডান, বসুন্ধরা কিংসের মতো দলগুলোর খেলা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই থাকে। জাতীয় দলের ফুটবলার ও বিদেশি তারকা থাকলেও গ্যালারী প্রায় খালিই থাকে। আজ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিজ জেলার খেলা দেখতে তপ্ত রোদে স্টেডিয়ামের প্রায় অর্ধেক গ্যালারী ছিল পরিপূর্ণ। 

তিন বছর পর আজ থেকে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিক মুন্সীগঞ্জ ২-১ গোলে মাদারীপুরকে হারিয়েছে। ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র ছিল। ইনজুরি সময়ের একদম শেষ মিনিটে মাদারীপুরের ডিফেন্ডার মুন্সীগঞ্জের ফরোয়ার্ডকে জার্সি ধরে টানেন। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। মাদারীপুর আপত্তি জানায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়া ফেডারেশনের তিন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন, ছাইদ হাসান কানন ও কামরুল হাসান হিল্টন টাচ লাইনের পাশে দাড়িয়ে মাদারীপুরকে নিবৃত্ত করে। মিনিট সাতেক পর খেলা শুরু হলে মুন্সীগঞ্জ পেনাল্টি থেকে গোল করলে গ্যালারীতে আনন্দ উৎসব হয়। 

আশি-নব্বইয়ের দশকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। পুরো দেশই ফুটবল উন্মাদনায় মেতে উঠত। সময়ের বিবর্তনে বাফুফে এই আসরটি নিয়মিত করতে পারেনি। বাফুফের নতুন কমিটি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবার বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। আজ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়ালও ছিলেন।

হামজা-সামিত আসায় বাংলাদেশের ফুটবলের উন্মাদনা বেড়েছে। ঋতুপর্ণা চাকমারা এশিয়ান পর্যায়ে খেলায় নারী ফুটবলও অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। আগামী দিনের ঋতুপর্ণা-জামালদের তৈরি করাই এখন বাফুফের বড় চ্যালেঞ্জ। জেলা লিগের মাধ্যমে ফুটবলার সরবারহের ক্ষেত্র দেখছেন বাফুফে সভাপতি, ‘আন্তঃজেলা ফুটবলের মাধ্যমে জেলাতেও লিগগুলো অনেক শক্তিশালী হবে। আল্টিমেটলি আমাদের ঘরোয়া লিগ শক্তিশালী হবে। এই লিগগুলো থেকে যেন আন্তর্জাতিকভাবে কিছু না কিছু খেলোয়াড় বাইরে খেলার সুযোগ পায়। এরকম খেলা থেকে জাতীয় দলকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা একটা স্ট্রং পাইপলাইন নিশ্চয়ই পাব।’

বাফুফের আর্থিক সীমাবদ্ধতা অনেক। আগের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রায়ই অর্থ সঙ্কট সামনে আনলেও বর্তমান সভাপতি অবশ্য সেটা খুব বেশি সমস্যা দেখছেন না। তার কাছে অবকাঠামো সংকটটাই এখন বড়। গত মৌসুমে আলোকস্বল্পতার জন্য ফেডারেশন কাপ ফাইনাল অসমাপ্ত ছিল। সাত দিন পর সেই খেলার বাকি ১৫ মিনিট হয়েছে। যা ফুটবল বিশ্বেই বিরল ঘটনা। এটাকে খানিকটা বাধা মনে করে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের অবকাঠামোগত দিক দিয়ে ঘাটতি আছে। অনেক স্টেডিয়ামে দেখেন ফ্লাডলাইট নেই। তাই খেলাগুলো সূর্য ডোবার আগে শেষ করতে হচ্ছে। ফ্লাডলাইট থাকলে আমরা রাতেও ম্যাচ আয়োজন করতে পারি। বাফুফে, মন্ত্রনালয় ও ফিফার সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যেতে পারব আশা করি।’

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ফুটবলের অবকাঠামো বিষয়ে বলেন, ‘আমি আসার পর দেখেছি যে অবকাঠামো না থাকার কারণে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচগুলো হচ্ছে বসুন্ধরায়। জাতীয় স্টেডিয়ামের কাজ আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করেছি। চট্টগ্রাম, নীলফামারি ও এর বাইরেও কোন কোন স্টেডিয়াম ডেডিকেটেডলি বাফুফেকে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করছি। যাতে করে ফুটবল কোনো ভাবে আটকে না থাকে অবকাঠামোগত কারণে। সীমিত সম্পদে সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।’ জেলা চ্যাম্পিয়নশিপের মাধ্যমে স্টেডিয়াম ও মাঠ সচল হওয়ার আশাবাদ তার, ‘নিয়মিত খেলা না হলে মাঠগুলো পরিত্যক্ত হয়। মেগা প্রজেক্ট নেওয়ার চেয়ে আমরা সারা দেশে যত স্টেডিয়াম সেখানে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘ভঙ্গুর ক্রীড়াঙ্গন থেকে আমরা একটা স্ট্রাকচারে আসতে পেরেছি। বিকেন্দ্রীকরণের যে কথা বলছি সেটাও বাস্তবায়নের পথে। বিসিবি মিনি অফিস হচ্ছে, ফুটবলও বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে। ৯০ দশকে ফুটবল নিয়ে যে উন্মাদনা ছিল, সেটা ফিরিয়ে আনা গেছে। বাফুফে সেটা নিয়ে কাজ করেছে কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য। এটা আসলে দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এক বছরে করে ফেলার মতো কাজ না। আমরা এমন পলিসি নেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে করে ক্রীড়াংগন দীর্ঘমেয়াদে ভালো করতে পারে।’

এজেড/এএল