সুর বদল বাটলারের, ‘ভুল’ আড়ালের চেষ্টা
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মূল পর্বে খেলবে। সেই লক্ষ্যে বাফুফে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দু'টি প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করেছিল। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে থাইল্যান্ডকে হারানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন বৃটিশ কোচ। দুই ম্যাচেই হারের পর এখন সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন ঋতুপর্ণা-আফিদাদের কোচ।
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে আজ দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৫-১ গোলে হেরেছে। এমন হারের পর কোচ বাটলার বাফুফের এক ভিডিও বার্তায় বলেন, 'থাইল্যান্ডে এই টার্ফে আমরা দশবার খেললে নয়বারই হারব। আর এটা শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই নয়, অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন ভারত যদি থাইল্যান্ডকে হারায়, তার মানে এই নয় যে সবাই পারবে। আমরা নিজ মাঠে থাইল্যান্ডকে টক্কর দিতে পারি, কিন্তু এখানে এই পরিবেশে খুব কঠিন।'
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ খেলেছে। নিয়মিত এশিয়া কাপ খেলা দল। এবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে হারায় খেলতে পারছে না। বাংলাদেশের র্যাংকিং যেখানে ১০৪ সেখানে থাইল্যান্ডের ৫৩। অনেক সূচকে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অন্তত খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু দুই ম্যাচে সেই রকম কিছু দেখা যায়নি।
যেখানে কোচ জয়ের লক্ষ্যে গিয়েছিলেন সেখানে এখন দুই ম্যাচ হেরে আত্নতুষ্টি খোজার চেষ্টা করছেন এভাবে, 'তবুও আমি আমাদের মেয়েদের নিয়ে গর্বিত। তারা যেভাবে খেলেছে, যেভাবে লড়েছে, আমি খুশি। আমি মনে করি না থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা উচিত। তারা একেবারেই ভিন্ন স্তরের দল, সম্পূর্ণ আলাদা পর্যায়ে আছে। আগেও বলছিলাম, শারীরিক দিক থেকেও তারা আমাদের মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ফিট। কিন্তু আমাদের মেয়েরা দারুণ সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, এটা স্বীকার করতেই হবে।'
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রথম প্রীতি ম্যাচ লাইভ সম্প্রচার হয়নি। আজকের লাইভ সম্প্রচার হওয়ায় খেলোয়াড়, কোচের ভুল-ত্রুুটি অনেক কিছুই দেখা গেছে। বাংলাদেশের পাঁচটি গোল হজমের অন্যতম প্রধান কারণ হাই লাইন ডিফেন্স। বাংলাদেশ নিজেদের অর্ধের সেন্টারের সামনে ডিফেন্স করেছে। থ্রু পাস, উড়ন্ত বলে প্রায় সময়ই বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করেছেন থাই ফরোয়ার্ডরা। খুব সহজেই গোলের সুযোগ পেয়েছেন তারা। গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা কয়েক দফা পোস্ট থেকে বেরিয়ে এসেও দলকে গোল হজম থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
লাওসে এএফসি অ-২০ নারী টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এক গোলে এগিয়ে ছিল। এরপরও কোচ বাটলার দলকে হাই লাইন ডিফেন্স খেলান। পরবর্তীতে ১-৬ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেননি বাটলার। আজকের ম্যাচেও সেই একই কাণ্ড দেখা গেছে। থাইল্যান্ডে ম্যাচ কাভার করতে কোনো সাংবাদিক না যাওয়ায় তার কৌশলে এত বড় ব্যবধানে হার কি না এই প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের। বাফুফের দেয়া ভিডিও বার্তায় অবশ্য তিনি সুকৌশলে নিজের পরিকল্পনা/কৌশলের ভুলটি এড়িয়ে বলেন, 'তবুও আমি হতাশ নই। কিছু গোল আমরা যেভাবে হজম করেছি, সেটা নিয়ে আফসোস আছে। কিন্তু আমি সামনো এগিয়ে চলার ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক। আমি জানি আমাদের সমস্যাগুলো কী এবং সেগুলোর সমাধান করা যায়।'
প্রথম ম্যাচ হারের পর কোচ কয়েকজন খেলোয়াড়দের মানসিকতা, আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কোনো অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলা হলে তিনি সেটা গ্রহণ করবেন না এমন হুশিয়ারীও দেন। আবার ২৪ ঘন্টা পর সেই অবস্থান থেকে সরে এসে মন্তব্য করেন, 'তাদের চিন্তাধারায় আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে এক-দুজন আছেন, যাদের আমি সত্যিকারের ম্যাচ উইনার মনে করি। আগের ম্যাচে তারা তাদের সামর্থ্যটা মেলে ধরতে পারেনি।'
কোচ হচ্ছেন খেলোয়াড়দের অভিভাবক। মাঠে-মাঠের বাইরে ফুটবলারদের একদিন খারাপ যেতেই পারে। একজন পেশাদার কোচ সেটা ড্রেসিংরুম, টিম হোটেলে ফুটবলারদের শাসন কিংবা সংশোধন করবেন। ওটা করার আগেই ফুটবলারদের গণমাধ্যমের কাছে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
বাটলারের অধীনে বাংলাদেশ সিনিয়র ও অ-২০ নারী দল এশিয়া কাপে উঠেছে। এতে বাফুফে বেশ তৃপ্ত বৃটিশ কোচের উপর। এত বড় ব্যবধানে হার, খেলার কৌশল ও ফুটবলারদের সম্পর্কে কোচের প্রায়ই বেফাস মন্তব্য নিয়ে ফেডারেশনের কর্তারা তাকে তেমন জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে দেখা যায় না।
এজেড/এইচজেএস