লামিনে ইয়ামাল : বিতর্ক এড়িয়ে মেসি হবেন নাকি নেইমার?
লামিনে ইয়ামাল, বয়সটা এখনও সবে ১৮ বছর। কিন্তু এখনই তার দশাটা হয়েছে এমন– ছেলের ফটোগ্রাফি করার শখ, প্রতিভার প্রমাণটাও ক্যামেরা হাতেই দিচ্ছেন। কিন্তু বাবা-মায়ের চাপে বাধ্য হয়ে পড়তে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং! ফুটবল ভক্তদের কেউ জোর করে ইয়ামালকে লিওনেল মেসি বানাতে চান, আবার কেউবা বলছেন তার গতিপথ নেইমার জুনিয়রের মতো ‘বিপথে’! কিন্তু কেউই বলছে না যে– ‘ওহে লামিনে, নিজের স্বভাবসুলভ প্রতিভায় তুমি ইয়ামাল হয়ে উঠো!’
ফুটবল মাঠে বার্সেলোনার এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড কী করতে পারেন, তা ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কিছুটা আড়ালেই ছিল। তবে স্পেনের বয়সভিত্তিক দল ও লা মাসিয়া একাডেমির হয়ে খেলা কিছু ফুটেজ আড়াল ভেঙে এসেছে কখনও কখনও। যেখানে ইয়ামালের ড্রিবলিং, পাসিং আর গোল করার দক্ষতা জানান দিচ্ছিল– ‘অ্যা রাইজিং স্টার ইজ কামিং’। পরবর্তীতে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে ইয়ামালের অভিষেকটা হয় ২০২৩ এর ২৯ এপ্রিল, বয়সটা তখন স্রেফ ১৫ বছর ২৯০ দিন। যা ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ। অথচ আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি মেসি বার্সার জার্সিতে অভিষেক ম্যাচটি খেলেন ১৭ বছর বয়সে।
বিজ্ঞাপন
কী হয়েছিল ইয়ামালের অভিষেক ম্যাচে? রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচটিতে স্প্যানিশ বিস্ময় বালককে নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল বটে। যদিও তাকে নামানো হয় গাভির বদলি হিসেবে, ম্যাচের আয়ু তখন ৮৩ মিনিট। ৪১ নম্বর জার্সি গায়ে খুব বেশি কিছু হয়তো হয়নি, দুয়েকটা পায়ের নাচন আর গোলের দ্বারপ্রান্তে থাকা একটি শট। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বার্সেলোনা ও স্পেনের এই বিস্ময়বালক ইউরো এবং লা লিগা জিতেছেন, সেমিফাইনাল খেলেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে ফুটবলের দুনিয়ায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সেনসেশনও বনে গেছেন।
ক্লাবের মতো স্পেন জাতীয় দলেও সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় (১৬ বছর ৫৭ দিন) হিসেবে অভিষেক ম্যাচ খেলেছেন ইয়ামাল। গোল করে স্মরণীয় করে রাখেন বিশেষ দিনটি। ব্যক্তিগত রেকর্ডের খাতায় ইয়ামাল একে একে লিখেছেন– সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় গোল, স্পেনের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক ও গোল, ইউরোতে সবচেয়ে কম বয়সে গোল, ইউরোর ফাইনালে খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, বার্সার হয়ে ১০০টি ম্যাচ খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। সেই তালিকা ক্রমাগত লম্বা হয়ে চলেছে!
বিজ্ঞাপন
গত ১৩ জুলাই ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে ইয়ামালের। এই সময়ের ভেতর তিনি যা অর্জন করেছেন, হাল আমলের রথী-মহারথীরা তার দ্বারেকাছেও নেই। তবে মনে রাখতে হবে ওই বয়সে লামিনের মতো ম্যাচ খেলা হয়নি তাদের। বাঁ পায়ের ছন্দময় কারিকুরি আর প্রতিপক্ষের রক্ষণ নিয়ে ছেলেখেলা করা এই তারকা ১৮ বছরের আগেই খেলেছেন ১২৭ ম্যাচ। যেখানে অসংখ্য ট্রফির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গোল রয়েছে ২৫টি। একই বয়সে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার খেলছিলেন স্বদেশি ক্লাব সান্তোসে, ততদিনে করেন ১৯ গোল। এ ছাড়া ১৮তম জন্মদিনের আগে আর্লিং হালান্ড ১২, কিলিয়ান এমবাপে ৭, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ৫ এবং মেসি স্রেফ একটি গোল করেন। অদূর ভবিষ্যতের কথা আঁচ করতে পারা লা মাসিয়ার কোচরা বলেছিলেন– ‘মেসির পর লামিনের মতো এমন প্রতিভা আর দেখিনি।’
যে কারণে মেসির সঙ্গে তুলনা
জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় মেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল ইয়ামালের। ২০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন তারকা সবে বৈশ্বিক ফুটবলে নিজের ক্যানভাস রাঙাতে শুরু করেছেন। তেমনই এক সময়ে ২০০৭ সালে বার্সার খেলোয়াড়রা দাতব্য সংস্থার অনুষ্ঠানে ছবি তোলেন বেশ কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে। সেখানে ইয়ামালকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন বাবা-মা মোনির নাসরাউই এবং শেইলা ইবানা। তারই এক ফাঁকে বিস্ময়করভাবে তখন মেসি ইয়ামালকে কোলে নেন এবং গোসল করান, সেই ছবি স্প্যানিশ তারকার উড়ন্ত সময়ে এসেও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। যার সঙ্গে তুলনাটা করা হয়, সেই মেসির কাছে ছোট্ট ইয়ামাল অদৃশ্য দীক্ষা পেয়েছিলেন হয়তো!
তবে বার্সেলোনার সর্বকালের রেকর্ড গোলদাতা মেসির সঙ্গে ইয়ামালের তুলনা করা হয় খেলার ধরনসহ কিছু প্রাসঙ্গিক কারণে। দুজনই রাইট উইংয়ে বাঁ পায়ে জাদু দেখান। আবার আর্জেন্টাইন মহাতারকাও ইয়ামালের মতো বার্সার আঁতুড়ঘর ‘লা মাসিয়া’য় বেড়ে উঠেছেন। মেসি যেমন দীর্ঘ সময় ধরে বার্সেলোনার পোস্টারবয় হয়ে ছিলেন, ইয়ামালও তেমনই হতে চলেছেন কিংবা সেই যাত্রাটা শুরু করেছেন ইতোমধ্যেই। সন্দেহাতীতভাবে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডও তার উত্তরসূরীকে ‘ইতিহাসের সেরা’ বলে দাবি করেছেন, পাশাপাশি ‘অনেক দূরের বস্তু’ মেসি কিংবা কারও সঙ্গে তিনি তুলনা করা পছন্দ করেন না। অবশ্য ইয়ামাল যাই বলুন না কেন, তার পজিশনিং–পাসিং–সৃষ্টিশীল স্পর্শ–ড্রিবলিং কিংবা গোল করার ধরন বারবার মেসিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
নেইমারের গুণ পেলেন যেভাবে
ইয়ামাল বড় হয়েছেন ‘এমএসএন’ যুগে— যখন বার্সেলোনার আক্রমণভাগে ছিলেন মেসি, লুইস সুয়ারেজ এবং নেইমার। কারও কারও মতে, তার খেলায় মেসি ও নেইমার উভয়েরই ছাপ রয়েছে। বার্সা এখন তার ওপর নির্ভরশীল, দলও তাকে ঘিরেই খেলে, যেমনটা মেসির সময় ছিল। তার মতো করে ইয়ামালও কঠিন কাজগুলো সহজ করে ফেলেন। তবে তিনি আদর্শ মানেন নেইমারকে। ব্রাজিল তারকার মতো খেলাকে উপভোগের মঞ্চ বানিয়ে নেওয়ার মানসিকতাও লামিনের মাঝে আছে। তার ড্রিবলিং, মাঠে আনন্দ খোঁজার তীব্র ইচ্ছে, গোল উদযাপন– সবই যেন নেইমারের আনন্দময় ফুটবলের প্রতিফলন।
মিল রয়েছে তাদের ব্যক্তিত্বেও। লামিনের চুলের ধরন, পোশাক, নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরার আত্মবিশ্বাস– যেভাবে নিজের যৌবনটা ব্লুগ্রানা শিবিরে কাটিয়েছেন নেইমার। এমন চাঙা স্বভাবের মাঝেও অবশ্য বেখেয়ালী নন, কঠোর পরিশ্রমও যে অব্যাহত আছে, তা তো ইয়ামালের মাঠের খেলা–ই প্রমাণ। নইলে কি আর প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান কোচ সিমোন ইনজাগির কাছ থেকেও শোনেন– ‘তার মতো খেলোয়াড় ৫০ বছরে একবারই জন্মায়!’
সর্বশেষ গ্রীষ্মের ছুটিতে নেইমারের কাছে ব্রাজিলে ছুটে গিয়েছিলেন ইয়ামাল। কাটিয়েছেন আনন্দঘন সব মুহূর্ত, ফুটভলি, সুইমিং পুলে খুনসুটি কিছুই নজর এড়ায়নি। তবে এসবের মাঝে কেউবা শঙ্কা করছেন, নেইমারের মতোই আনন্দময় সময় কাটানোর অভ্যাস ইয়ামালকে বেপরোয়া করে তোলে কি না। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক রোমান্টিক সম্পর্কের গুঞ্জন সেই হাওয়ায় জোর বাড়ায়। শেষমেষ অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে আর্জেন্টাইন গায়িকা নিকি নিকোলকে প্রেমিকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন বার্সা ফরোয়ার্ড।
এল ক্লাসিকোর পর রীতিমতো তুলোধুনা
ব্যক্তিগত নানা ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছেন ইয়ামাল। কিন্তু তার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিপত্তিটা বেধেছে এবারের এল ক্লাসিকোয়। তিনি নিজেই অবশ্য এখানে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এল ক্লাসিকোতে জিততে এমনিতেই মরিয়া ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কারণ গত মৌসুমে ৪ বারের দেখায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে প্রতিবারই হেরেছে। পাশাপাশি হজম করেছে ১৬টি গোল। ফলে তাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো হয়ে উঠতে পারে। সেটি না বুঝেই ক্লাসিকোর আগমুহূর্তে ইয়ামাল এক অনুষ্ঠানে বলে বসেন, ‘তারা (রিয়াল) সব সময়ই চুরি এবং অভিযোগ জানাতে অভ্যস্ত।’
ইয়ামালের সেই মন্তব্যে আলোচনার টেবিলে ঝড় আর ধোঁয়া উড়তে থাকে উত্তপ্ত কড়াইয়ে। সেই পরিস্থিতিতে গত রোববার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গড়ায় দুই স্প্যানিশ জায়ান্টের রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ। ম্যাচজুড়ে বলের পজেশন কাতালানদের দখলে থাকলেও, আক্রমণে আধিপত্য দেখায় জাবি আলোনসোর দল। বিপরীতে বার্সা সুযোগ হাতছাড়া তো করেছে–ই, প্রয়োজনমতো জ্বলে উঠতে পারেননি ইয়ামাল। মার্কাস রাশফোর্ডকেও রিয়াল ডিফেন্ডাররা উল্লেখযোগ্য সুযোগ দেয়নি। প্রতিপক্ষের দুর্গে বার্সা খুব করে মিস করেছে রাফিনিয়ার মতো ফর্মে থাকা উইঙ্গার ও রবার্ট লেভান্ডফস্কির ফিনিশিং সামর্থ্য। অন্যদিকে, লস ব্লাঙ্কোসরা খেলেছে ফুল-প্যাকেজে, প্রতিটি বিভাগেই সক্রিয় ছিল তাদের লাইনআপ। কিলিয়ান এমবাপে ও জুড বেলিংহ্যামের গোল তাতে পূর্ণতা দিয়ে ২–১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করেছে।
ক্লাসিকো-জুড়ে উন্মাদনা ছিল, রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর পর উত্তেজনার পারদ আরও উঁচুতে পৌঁছায়। হাত মিলিয়ে ফেরার সময় দানি কারভাহাল আঙুলের ইশারায় ইয়ামালকে জানিয়েছেন ‘এবার কথা বলা কমাও’! তাতে ক্ষেপে যান বার্সা ফরোয়ার্ড, জাতীয় দল সতীর্থের দিকে তেড়ে যাওয়ার পথে ইয়ামালকে বাধা দেন রিয়ালের কামাভিঙ্গা। এরপর একে একে যোগ দেন আরও কয়েকজন। বার্সার ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বসেন থিবো কোর্তোয়া। হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন ইয়ামাল, তখন কিছুটা দূরে থাকা ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ফের বেধে যায় তার। যেন সবার ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ১৮ বছরের এক তরুণ। মেসি-রোনালদোদের যুগেও এমন আগুনে উত্তাপ ছিল এল ক্লাসিকোয়; কিংবা আরও আগে থেকে। রামোস-পিকে-পুয়োলদের মাঝে কম হাতাহাতি হয়নি। কিন্তু ‘চোর–ছিঁচকাঁদুনে’ ডাকার মতো প্রতিপক্ষকে হেয় করেননি কেউ–ই।
ইয়ামাল যাবেন কোন পথে
এল ক্লাসিকোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার রেশ হয়তো সামনেও দেখা যাবে। তবে বার্সা সংশ্লিষ্ট অনেকের কাঠগড়ায় এখনও ইয়ামাল। হারের ক্ষত শুকানোর আগেই তার ম্লান পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। যেন এর আগের এল ক্লাসিকোতেও বিস্ময়বালক জাদু দেখাননি। অথচ মাত্র এক ম্যাচ আগেই অল্প সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার ইনজুরি থেকে ফিরেছেন তিনি। ম্যাচটিতে ঠিক কী সমস্যায় ভুগছিলেন ইয়ামাল সেটাই জানা গেল ট্রমাটোলজিস্ট লুইস রিপোলিও’র কণ্ঠে, ‘এটা এমন এক চোট, সত্যি বলতে এর চিকিৎসা বেশ কঠিন। এই ব্যথার কারণে খেলোয়াড়ের মুভমেন্ট ও শট নেওয়ার সামর্থ্য ৫০ ভাগ কমে যায়, ক্লাসিকোয় সেটাই আমরা দেখেছি।’
এর বাইরে বিতর্কিত মন্তব্যের দায়ভার কি ইয়ামাল একাই নেবেন? অথচ ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল বার্সার সাবেক ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের কিংস লিগের (স্পেনের একটি প্রীতি ও বিনোদনমুখী ফুটবল লিগ, যা প্রচলিত পেশাদার লিগের চেয়ে কিছুটা আলাদা নিয়মে খেলা হয়) রিচ বাড়ানোর লক্ষ্যে। তাই চাঞ্চল্যকর মন্তব্যই তার জন্য শাপে-বর হবে। সেই লক্ষ্যে সঞ্চালক ইবাই লানোচ এক ফাঁকে ইয়ামালকে প্রশ্ন করেন, কিংস লিগের দল ‘পোরকিয়নস’ রিয়াল মাদ্রিদের মতো কি না? কিছু না ভেবেই উত্তরে ইয়ামাল বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই, তারাও এরকমই চুরি আর অভিযোগ করে।’ তখন পুনরায় তাকে আবারও জিজ্ঞেস করা হলে ইয়ামাল বলে ওঠেন– ‘থামুন, এক মিনিট…’ ঘুরে-পেছিয়ে তিনি প্রসঙ্গ এড়াতে চাইলেও যা হওয়ার হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে ইবাই অবশ্য স্প্যানিশ তারকাকে বিপদে পড়তে দেখে ক্ষমা চেয়েছেন। একইসঙ্গে ওই প্রশ্নের দায়ভারও নেন নিজের কাঁধে। কিন্তু পিকে? জাতীয় দল ও ক্লাবের এই পূর্বসূরী ইয়ামালকে বিপদে ফেলেছেন যেন ইচ্ছা করেই, রিয়াল শিবিরে সমালোচনা উঠতেই তিনি তাতে আরও ঘি ঢেলেছেন। খেলোয়াড়ী জীবনেও পিকে এমন অনেক অসততার আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি স্প্যানিশ সাংবাদিক গ্রাহাম হান্টারের। এ ছাড়া হ্যান্সি ফ্লিকের সামনে এই প্রসঙ্গ তোলা হলে ‘এটা তার বিষয় নয়’ বলে এড়িয়ে যান। যে কারভাহাল কিছুদিন আগেও ইয়ামালের মতো প্রতিভার যত্ন ও ভালো নির্দেশনা দিয়ে পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন, তিনিও বদলে ফেলেছেন সেই অবস্থান। দুজন একসঙ্গে জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম শেয়ার করবেন, তা ভুলে মাঠে উত্তপ্ত পরিস্থিতির শুরুটা হলো রিয়ালের এই রাইটব্যাকের মাধ্যমে।
ইয়ামাল এখন ১৮ বছরের টগবগে যৌবনে দাঁড়িয়ে, অভিষেকের মাত্র দুই বছরেই তিনি খেলে ফেলেছেন দেড়শ’র (বার্সার হয়ে ১৩০) বেশি পেশাদার ম্যাচ। যা ওই বয়সে অধিকাংশ ফুটবলারের জন্য স্বপ্নের মতো। এটি যেমন তার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টে প্রভাব ফেলছে, তেমনি রয়েছে মানসিক চাপও। স্পেনের কোচ কিছুদিন আগেও বলেছিলেন এমন বিস্ময়বালকের ‘মাঠের খেলা–ই গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিগত বিষয় যেন বেশি আলোচনা না করা হয়।’ একই ভূমিকায় থাকতে হবে তার অভিজ্ঞ সতীর্থ এবং স্বয়ং বার্সা কোচকেও। ইয়ামাল মেসি-রোনালদোর কাতারে পৌঁছাবেন নাকি তাদের ছাড়িয়ে যাবেন সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে সেই সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে ইয়ামালকেও বুঝতে হবে এই জার্নিটা অনেক লম্বা। চলতে হবে মাটিতে পা রেখে–বিতর্কের কাঁটা এড়িয়ে খুব সাবধানী হয়ে!
এএইচএস/এফআই