অন্তিম সময়ে ইতিহাস গড়া গোল। তাতে হলুদ কার্ডের চোখরাঙানির তোয়াক্কা না করেই জার্সি খোলা উদযাপন দোবভিকের। সঙ্গে যোগ দিলেন সতীর্থ মাকারেঙ্কোও/স্কাইস্পোর্টস

রেফারির ঘড়িতে তখন যোগ করা অতিরিক্ত সময় শেষেও দ্বিতীয় মিনিট চলছে। মিনিট বিশেক আগে দশজনের দলে পরিণত হওয়া সুইডেনের পেনাল্টি শুটআউট ‘অর্জন’কে মনে হচ্ছিল হাতছোঁয়া দূরত্বে। তখনই ওলেকসান্দ্র জিনচেঙ্কোর ক্রস, আর আরতেম দোবভিকের গোল। গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে হাজির গুটিকতেক ইউক্রেনিয়ান সমর্থক ভাসলেন উল্লাসে। ভাসবেনই না কেন? এই যোগ করা অতিরিক্ত সময়েরও ইনজুরি সময়ের গোলে সুইডেনকে ২-১ গোলে হারিয়েই যে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ইউরোর শেষ আট নিশ্চিত করেছে কোচ আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর ইউক্রেন।

প্রথম ৯০ মিনিটে গোল হয়েছে, আক্রমণ হয়েছে, প্রতি আক্রমণ হয়েছে। ওলেকসান্দ্র জিনচেঙ্কোর ২৭ মিনিটের গোল ইউক্রেনকে এগিয়ে দিলেও বিরতির ঠিক আগে এমিল ফর্সবার্গের লক্ষ্যভেদ ম্যাচে ফিরিয়ে আনে সুইডেনকে। তবে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটাই হয়নি। শুরুর ৯০ মিনিট আলাদা করতে পারেনি কোনো দলকেই। 

সুইডেনকে শুরুর ধাক্কাটা দিয়েছিলেন জিনচেঙ্কো/ইএসপিএন

যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে যখন দুই দল অনেকটাই অবসন্ন, তখনই সুইডেন দেখল লাল কার্ড। ড্যানিয়েলসনের এই মার্চিং অর্ডার ইউক্রেনকে দিল বাড়তি একজনের সুবিধা। কিন্তু এরপর সুইডেন ৪-৪-১ ছকে দুই স্তরবিশিষ্ট রক্ষণ নিয়ে অনেকটাই বোতলবন্দি করে রেখেছিল ইউক্রেনকে। তাতে ম্যাচটা আরেকটু হলে ম্যাচটা চলে যাচ্ছিল পেনাল্টি শুটআউটেই। 

ইউক্রেনের শুরুর গোলের জবাব ফর্সবার্গের গোলে দেয় সুইডেন/স্কাইস্পোর্টস

যখনই মনে হচ্ছিল টাইব্রেকারই হতে চলেছে শেষ ষোলর অন্তিম লড়াইয়ের নিয়তি, তখনই আবারও জিনচেঙ্কোর আঘাত। তবে এবার যোগানদাতা হিসেবে। লেফট উইঙ্গার ওলেকসান্দ্র যুবকভ যদি চোটে না পড়তেন নেদারল্যান্ডস ম্যাচে, যদি কোচ শেভা কৌশল বদলে ৩-৫-২ ছকে না নিয়ে আসতেন দলকে, তাহলে যার উপস্থিতি থাকতো না থাকার মতো, সেই জিনচেঙ্কো। তার বাড়ানো বলটা গিয়ে খুঁজে পেল দোবভিককে, আর গোল। তাতেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ইউরোর শেষ আট নিশ্চিত করে ইউক্রেন। 

আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো। ইউক্রেনের ইতিহাস গড়ার নেপথ্য কারিগর/স্কাইস্পোর্টস

ইউরোয় গেল আসরেও খেলেছিল ইউক্রেন। কিন্তু ফ্রান্সে তাদের সে আসর শেষ হয়েছিল কোনো গোল না করেই। ফলে ইউরোর ইতিহাসে ইউক্রেনের একমাত্র গোলদাতা হয়ে ছিলেন শেভচেঙ্কো, এই সুইডেনের বিপক্ষেই। এই শেভচেঙ্কোর নেতৃত্বেই দলটা বিশ্বকাপের শেষ আটে খেলেছিল ২০০৬ সালে, সেটাই হয়ে আছে তাদের ইতিহাসের সবশেষ বিশ্বকাপে উপস্থিতি। সেই শেভচেঙ্কো এবারও আছেন দলের সঙ্গে, তবে কোচ হিসেবে। দল নিশ্চিত করেছে কোয়ার্টার ফাইনাল, নিজেদের ইউরো ইতিহাসে প্রথমবারের মতো। 

এবার শেভচেঙ্কোর সামনে ইতিহাসের পাতায় আরও এক প্রস্থ যোগ করার সুযোগ। আগামী ৩ জুন ওয়েম্বলিতে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, যারা জার্মানদের হারিয়ে ইতিহাস গড়েই উঠে এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। শেভা পারবেন তো?

এনইউ