স্মেইকেলের মুখে মারা সেই লেজার বিমার/মার্কা

উগ্র সমর্থনের আলোচনায় একটু আগেভাগেই যেন আসে ইংলিশদের নাম। চলমান ইউরোর সেমিফাইনালেও ইংলিশ সমর্থকরা ঘটিয়েছে এমন কিছু, যাতে রীতিমতো বিতর্কের ঝড় বইছে ইউরোপে। 

জাতীয় সঙ্গীত একটা রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে, ইংল্যান্ডের মাঠে খেলতে গিয়ে সেই জাতীয় সঙ্গীতের সময়ই কিনা ডেনমার্ক শুনল দুয়োধ্বনি! ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ইউরোর সে সেমিফাইনালের পর আতশবাজিও পুড়িয়েছে ইংলিশ সমর্থকরা। 

এর আগে অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইনের পেনাল্টি শট নেওয়ার সময় এক সমর্থক ঘটিয়েছে আরও এক কাণ্ড। ডেনমার্ক গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মেইকেলের চোখে মারা হয়েছে লেজার লাইট। যে কারণে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি ‘ডিসিপ্লিনারি চার্জ’ এনেছে উয়েফা।

ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলিতে বুধবার রাতে ডেনমার্কের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। সেদিন ২-১ গোলের জয় নিয়ে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে থ্রি লায়ন্সরা।

দ্বৈরথ থাকলেও দুই দল শুরুতে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে শুরু করে ম্যাচটি। ইউরোর দ্বিতীয় দিনে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মাঠেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে ফেরা সেই ড্যানিশ মিডফিল্ডারের জন্য এরপর ডেনমার্ক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বেশ সম্প্রীতিই উপহার পেয়েছে। প্রতি ম্যাচের শুরুতে এরিকসেনের প্রতি ভালোবাসাই জানিয়েছে প্রতিপক্ষ দলগুলো।

এর ব্যত্যয় ঘটেনি দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও। এরিকসেনের নামাঙ্কিত ইংল্যান্ডের জার্সি সিমন কাইয়েরের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন।

অধিনায়কের আচরণের ঠিক উল্টো যেন ছিল সমর্থকদের আচরণ। ডেনমার্ক জাতীয় সঙ্গীত যখন বাজছিল, তখন রীতিমতো দুয়োধ্বনিই দেওয়া হচ্ছিল ইংলিশ সমর্থক শিবির থেকে। যেখানে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় নিরবতা পালন করাটাই রীতি! চলতি আসরে এমন কিছু হলো প্রথমবারের মতো।

১০৪ মিনিটে ঘটল আরেক বিতর্কিত ঘটনা। হ্যারি কেইনের সেই পেনাল্টির আগে লেজার বিমার মারা হয় প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক স্মেইকেলের মুখে। ভিডিওতে দেখা যায় তার চোখে, মুখে, কপালজুড়ে ঘুরছে সবুজ আলোর রেখা। এরপরও অবশ্য কেইনের সেই পেনাল্টি আটকে দিয়েছিলেন স্মেইকেল, তবে ফিরতি শটটা আর রুখতে পারেননি। ফলে দারুণ এক ড্যানিশ রূপকথার যাত্রা শেষ হয় শেষ চারে। এরপর গ্যালারিতে পোড়ানো হয়েছে আতশবাজিও। 

ইংলিশ সমর্থকদের এই তিন কাজে চটেছে উয়েফা। তাদের এথিকস ও ডিসিপ্লিনারি বডি এই তিনটি ঘটনা খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনে নামা হবে তদন্তেও, জানিয়েছেন পুলিশের এক মুখপাত্র। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই সব সমর্থক পড়তে পারেন শাস্তির মুখে, হতে পারেন নিষিদ্ধও।

তবে ম্যাচের বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। যে পেনাল্টিতে জয় তুলে নিয়েছে ইংলিশরা, সেটা নিয়েও আছে বিতর্ক। ফুটেজে দেখা যায়, পেনাল্টির আগে বল নিয়ে যখন এগোচ্ছেন রাহিম স্টার্লিং, তখন তার পায়ে ছাড়াও মাঠে ছিল আরেকটি বল। নিয়ম অনুযায়ী মাঠে একাধিক বল থাকলে খেলা তখনই বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা আছে রেফারিদের। কিন্তু ইংলিশ রেফারি সেদিন খেলা বন্ধ করেননি। 

এমনকি পেনাল্টিটা যে পেয়েছে ইংলিশরা সেটা নিয়েও আছে বিতর্ক। জোয়াকিম মায়েহলার সেই চ্যালেঞ্জটা আদৌ ফাউল কিনা, তা নিয়েও রীতিমতো বিতর্ক চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে তাতে কী, ততক্ষণে তো ইউরো পুনরুদ্ধারের স্বপ্নটা বাস্তবে পরিণত হওয়ার পথই বন্ধ হয়ে গেছে ডেনমার্কের!

এনইউ