ফিফার নির্দেশে বড় পরিবর্তন আসছে বাফুফের কমিটিতে
দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী কমিটির আকারে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। বর্তমানে বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বমোট সদস্য সংখ্যা ২১। ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী বিদ্যমান সংখ্যার ৫০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ এসেছে।
বর্তমান কমিটির অনেকেই ফিফার গাইডলাইনের বিষয়টি স্বীকার করলেও আগামীকাল নির্বাহী কমিটির সভার আগে কেউ এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে চাননি। আগামীকাল নির্বাহী কমিটির প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচিই ফিফার নির্দেশনায় বাফুফের গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটিই সবচেয়ে বড়। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারতের কার্যনির্বাহী কমিটি ১৭ জনের। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও এশিয়ার বড় দেশগুলোর কার্যনির্বাহী কমিটির পরিধি সংক্ষিপ্ত।
বাফুফে নীতি নির্ধারকরা ইতোমধ্যে কমিটি সংক্ষিপ্ত করার একটি রূপরেখা তৈরিও করেছে। নতুন সংক্ষিপ্ত কমিটিতে একজন সভাপতি, দুই/তিন জন সহ-সভাপতি, সাত/আট জন নির্বাহী সদস্য থাকবে। নতুন রূপরেখা অনুযায়ী ১১/১৩ বেজোড় সংখ্যার কমিটি হবে। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদটি বাফুফেতে আগে ছিল না। গত পাঁচ মেয়াদে এই পদ সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ নিয়ে একটু দোদুল্যমান অবস্থায় বাফুফের নীতিনির্ধারকরা।
বিজ্ঞাপন
বাফুফে নির্বাহী কমিটি ফিফার নির্দেশনা পর্যালোচনা করে একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করবে। সেটির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিশেষ সাধারণ সভা ডাকতে হবে। গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হলে ইজিএম প্রয়োজন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আগামী ২০২৪ নির্বাহী কমিটি নির্বাচন থেকে সংশোধিত গঠনতন্ত্র কার্যকর হবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ফিফা-এএফসি’র গাইডলাইনে বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটির আসন বিন্যাস পরিবর্তন হয়েছিল। বাফুফেতে আগে যুগ্ম সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদ থাকলেও ২০০৮ থেকে এই পদ নেই। ২০০৮ থেকে বাফুফে সভাপতি একজন, সিনিয়র সহ-সভাপতি একজন, সহ-সভাপতি চার জন, কার্যনির্বাহী সদস্য ১৫ জন। ২০০৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন এভাবে হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামোতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বনিম্ন স্তর পাইওনিয়ার লিগ, এরপর তৃতীয়-প্রথম বিভাগ, এরপর পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশীপ লিগ ও শীর্ষ স্তর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। প্রথম-তৃতীয় বিভাগ পর্যন্ত আলাদা তিনটি লিগ হয়। বাফুফের আগামীকালের সভায় তিনটি লিগের পরিবর্তে দুইটি লিগ করার আলোচনা হবে। সেক্ষেত্রে ঘরোয়া ফুটবলে একটি স্তর কমে যাবে।
কমিটির আকার, স্তর পরিবর্তনসহ ভোটাধিকার/কাউন্সিলরশিপেও আসছে পরিবর্তন। চতুর্থ মেয়াদে সভাপতি হয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভোটাধিকার নিয়ে ফিফা বাফুফেকে প্রশ্ন করে। ফিফা ভোটার সংখ্যাও কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। নির্বাহী কমিটির আকার ২১ থেকে কমে যদি ১১/১৩ তে হয় সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরশিপ/ভোটার সংখ্যাও কমতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, নেপালে ১৭ সদস্যের কমিটি আছে, সেখানে বাংলাদেশে ফিফার অতি সংক্ষিপ্ত করার গাইডলাইন নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নীতি নির্ধারকদের ১১/১৩ সদস্যের রূপরেখা কালকের সভায় কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পায় সেটা দেখার বিষয়। নির্বাহী কমিটির পর আবার সাধারণ পরিষদের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে।
গত নির্বাচনের আগে বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিশেষ বিধি প্রণয়ন করতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সমালোচনায় সেটি হয়নি। ফুটবল ফেডারেশনের নানা কর্মকান্ডে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের আস্থা দিনদিন কমছে। কমিটি সংক্ষিপ্ত করার প্রস্তাবনা থাকলেও সেটা আদৌ ১১/১৩ করার কি না এই প্রশ্ন ওঠা মোটেও অমূলক নয়। আগামীকাল নির্বাহী কমিটির সভার পরই মূলত এই বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার হবে।
এজেড/এনইউ/জেএস