ভোর ছয়টার আগেই সূর্য ওঠে মালেতে। ঘুম ভাঙার কিছুক্ষণ পরেই মালের অনেক নাগরিক বল ও বুট নিয়ে ছুটে চলেন ফুটবলের ফুটসাল টার্ফে। এক দলের খেলা শেষ তো আরেক দলের খেলা শুরু। এভাবে মালের ফুটসাল টার্ফগুলো ব্যস্ত থাকে ফুটবলে।

দিনের চেয়ে রাতে আরো বেশি জীবন্ত হয় টার্ফগুলো। ফ্লাডলাইটের আলোয় চলে ফুটবল। মধ্যরাত পেরিয়ে অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত চলে খেলা। তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা নয়, শুধু মনের আনন্দ ও শরীর ঠিক রাখার জন্যই মালের লোকজনের এই প্রয়াস।

টিসি স্পোর্টসের সভাপতি মোঃ আব্বাস মালের নাগরিকদের এই ফুটবল খেলা সম্পর্কে বলেন, ‘একদম ছোট থেকে বৃদ্ধ আমরা সবাই ফুটবল খেলি। যে যখন সময় সুযোগ পাই টার্ফে চলে যাই ফুটবল খেলি। ফুটবল আমাদের নগরজীবনের অন্যতম অনুষঙ্গও।’ 

সাত কিলোমিটারেরও কম আয়তন মালের। এই ছোট আয়তনের মধ্যেও আট-দশটি ফুটসাল টার্ফ রয়েছে। এই টার্ফগুলো অবশ্য মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশনের অধীনে নয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এলাকার লোকজনের খেলাধুলা ও সুস্থতা চর্চার জন্য এই টার্ফ ব্যবহার হয়। 

এই টার্ফগুলোতে সাধারণত মালদ্বীপের লোকজনই খেলেন। বাংলাদেশি বা অন্য দেশের নাগরিক তেমন খেলেন না। বাংলাদেশি প্রবাসী আহমেদ সাগর বলেন, ‘প্রায় সারাদিনই নানা বয়সের, নানা পেশার মালদ্বীপের লোকজন ফুটবল খেলে। আমরা সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকি। দিন শেষে কাজ করে ক্লান্ত থাকি। সন্ধ্যার পর যতটুকু সময় পাই দেশি ভাইদের সঙ্গে গল্প আড্ডা দিয়ে পার করি অথবা বাড়িতে কথা বলে সময় চলে যায়।’

মালদ্বীপের ফুটবল কাঠামোয় অনেক সীমাবদ্ধতা। সেই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে মালদ্বীপ কিভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে দ্বিতীয় অবস্থানে এটা বোঝা যায় তাদের ফুটবলের প্রতি এই ভালোবাসা ও নিবেদন দিয়ে। ফুটসাল টার্ফে খেলে খেলেই আজ আন্তর্জাতিক তারকা আশফাক, আকরামরা।

টার্ফে খেলার এই চর্চায় মালদ্বীপকে আজকের এই অবস্থানে এনেছে বলে মনে করেন স্থানীয় ফুটবলসংশ্লিষ্টরা, ‘আমাদের শিশুরা বেড়েই উঠে ফুটবল দিয়ে। প্রতিটি স্কুলে একটি টিম গেমে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। অধিকাংশ ছেলেই ফুটবল বেছে নেয়। যারা বেশি মেধাবী ও নিবেদিত তারা বিভিন্ন ক্লাবের একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয়। ধীরে ধীরে আমরা মেধাবী ফুটবলার পাই।’

তরুণদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মাজিয়া স্পোর্টস এন্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব সবার চেয়ে এগিয়ে। তাদের একাডেমীতে সবচেয়ে বেশি তরুণরা প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষকরাও খুব উঁচু মানের। এএফসি এ লাইসেন্সধারী অনেকেই এই বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দেয়। অন্য ক্লাবগুলোর আবাসন, অফিস কক্ষের সীমাবদ্ধতা থাকলেও তরুণদের একাডেমির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ করাতে নেই কোনো কার্পণ্য। এর সুফলই পায় মালদ্বীপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আর এক সময়ের সঙ্গীদের এমন উন্নতি দেখে বাংলাদেশের ফুটবলে বাড়ে একরাশ হতাশা!

এজেড/এটি/এনইউ