ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে খেলা খন্জনপুর হকি একাডেমির খেলোয়াড়দের সঙ্গে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে মামুন

ক্রীড়াঙ্গনে বেশ পরিচিত মুখ মামুনুর রশীদ। হকির তারকা খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে সর্বমহলেই স্বীকৃতি আছে মামুনের। এই দুই পরিচয়ের পাশাপাশি সংগঠক হিসেবেও সফলতার পথে হকির অন্যতম এই কিংবদন্তি।
 
রাজশাহী বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটের সন্তান মামুন। ২০০৮ সালে জয়পুরহাটে নিজ এলাকা খঞ্জনপুরে গড়ে তোলেন হকি একাডেমি। বিদ্যালয়ের মাঠকে হকির পাঠশালায় রুপান্তর করেন মামুন। সেই খঞ্জনপুর হকি একাডেমি থেকে জাতীয় দলে খেলেছেন বিকেএসপির শিক্ষার্থী হুজায়ফা হোসাইন। 

একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হুজায়ফা গত বছর বিকেএসপির সেরা ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। চলমান প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা আবাহনীর হয়ে খেলছেন তিনি। এত স্বল্প বয়সে তার এই অবস্থানের জন্য খঞ্জনপুর হকি একাডেমিকেই অবদান দিলেন, ‘আমার হকির হাতেখড়ি খঞ্জনপুরেই। খঞ্জনপুর হকি একাডেমিতে না গেলে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া, জাতীয় দলে খেলা কোনো কিছুই হতো না।’

কোচিং ও পেশাগত কাজে ঢাকায় থাকলেও মামুনের সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধায়ন ও নির্দেশনায় পরিচালিত হয় খঞ্জনপুর হকি একাডেমি। এই একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের কোনো ব্যয় করতে হয় না। স্টিক, বলসহ সব সরঞ্জাম মামুন ঢাকা থেকে নিজ জেলায় পাঠান। ১৬ বছর ধরে তিনি এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন, ‘নান্নু ভাই (সাবেক হকি খেলোয়াড় ও ক্রীড়া  পরিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমাকে সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করেছেন মাঝে মধ্যে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নিজের অর্থ দিয়ে সরঞ্জাম কিনেছি নিজ একাডেমির জন্য। ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু সময় রাখি আমার একাডেমির জন্য। স্থানীয় সাবেক দুই তিন খেলোয়াড় রয়েছে। তারা অনুশীলন করায়। অনুশীলন সূচি, ধরন সব কিছু আমি তত্ত্বাবধায়ন করি।’

সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা নিজ এলাকার সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত থাকেন না। তবে মামুন ভিন্ন চিন্তা থেকে একাডেমি শুরু করেছিলেন , ‘আমাদের এলাকাটা সীমান্তবর্তী। নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি। হকির মাধ্যমে এলাকার সামাজিক চিত্র বদলানোর লক্ষ্যেই মূলত আমার এই একাডেমি করা।’

খঞ্জনপুর হকি একাডেমি থেকে রিপন কুমার মহন্ত, হাবিব হোসেন, মেহেদি ইসলাম, রাকিব হোসেন সেনাবাহিনীতে, রাব্বী, রাকিবুল ও কামরুল ইসলাম বিমানবাহিনীতে রয়েছেন। এই একাডেমি থেকে প্রিমিয়ার লিগ হকি খেলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা বিশের কাছাকাছি। অ-২১ দলে খেলেছেন ৬ জন। জাতীয় দলের ক্যাম্পে হুজায়ফার সঙ্গে ছিলেন আরো তিন জন। হকির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও খেলেছেন খঞ্জনপুর একাডেমির খেলোয়াড়রা। 

বাংলাদেশের হকি এখন অনেকটাই বিকেএসপি নির্ভর। সেই বিকেএসপি সাম্প্রতিক সময়ে জয়পুরহাটের এই একাডেমির উপর নির্ভরশীল। বিকেএসপিতে এখন দিনাজপুর, রাজশাহী ও জয়পুরহাট থেকে খেলোয়ড়রাই বেশি আসছে। জয়পুরহাটের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই খঞ্জনপুর একাডেমির। বিকেএসপিতে খন্জনপুর একাডেমি থেকে আসা  সংখ্যাটা বিশের কাছাকাছিই হবে৷

জয়পুরহাটে একাডেমিতে মামুন

ফুটবল, ক্রিকেট ছাপিয়ে জয়পুরহাট এখন হকির জেলা হিসেবেই গণ্য। এর পেছনে মামুনের একাডেমিকে বড় কৃতিত্ত্ব দিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও হকি ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য মোরশেদুল আলম লেবু, ‘প্রতিদিন বিকেল হলেই বল, স্টিক হাতে ৪০-৫০ জন বালক , ১০-১৫ জন বালিকা খঞ্জনপুরে হকি খেলে। এই চর্চার ফলেই জাতীয় স্কুল হকিতে জয়পুরহাটের খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে এখন আমাদের জেলার ছেলে-মেয়েরা লিগ ও জাতীয় দলে খেলছে। অন্য খেলার তুলনায় আমরা হকিতে অনেকটাই অগ্রসর।’

বাংলাদেশের হকির অন্যতম সেরা তারকা মামুনুর রশীদ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এশিয়ান হকি একাদশে জায়গা করে নিয়েছিলেন মামুন। খেলোয়াড় হিসেবে যেমন ছিলেন তারকা, কোচ হিসেবেও তেমনি। খেলোয়াড় তৈরির কারখানা বিকেএসপি’র কোচ ছিলেন। দেশের অন্যতম তারকা হকি খেলোয়াড় মামুনুর রহমান চয়ন, এই মামুনের হাতেই গড়া। বিকেএসপি ছেড়ে ক্লাব কোচিংয়েও সফল মামুন। মেরিনার্সকে ২০২১ সালে ক্লাব কাপ ও লিগ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। 

সংগঠক হিসেবেও সফলতার দিকে হাঁটা মামুনের ভালো লাগাটা অবশ্য বেশি কোচিংয়েই, ‘ক্রীড়াঙ্গনের তিন ক্ষেত্রেই আমার বিচরণ হয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবে কেমন ছিলাম সেটা দর্শক ও ক্রীড়াঙ্গনের লোকজন মূল্যায়ন করবে। আমার ভালো লাগার জায়গাটা কোচিং। ২০০১ সাল থেকে আমি কোচিং নিয়ে কাজ করি। কোচিংয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কোর্স, ডিগ্রির সঙ্গে সব সময় নিজেকে আপডেট করি। যত দিন বাঁচব নিজ জেলার হকি ও ক্রীড়ার জন্য কাজ করব।’

এজেড/জেএ