বাংলাদেশের হকিতে বিতর্ক পিছু ছাড়ছেই না। দল নির্বাচন নিয়ে হরহামেশাই প্রশ্ন ওঠে। এবার জাতীয় দলের খেলোয়াড় নাইম উদ্দিনকে আপত্তিকর গালি দেওয়ায় যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর তপনের পদত্যাগ দাবি করেছেন কয়েকজন হকি খেলোয়াড়। 

আজ (শুক্রবার) বিকেলে জাতীয় স্টেডিয়ামে পুস্কর ক্ষিসা মিমো, নাইম, আবেদ, নিলয়সহ মোট ১০-১২ জন খেলোয়াড় এসেছিলেন গণমাধ্যমের সামনে। এ সময নাইম উদ্দিন বলেন, ‘দল থেকে খেলোয়াড়রা বাদ পড়বে, এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়কে একজন কর্মকর্তা বাস্টার্ড বলবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বাস্টার্ড গালি দেওয়া যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর তপনের পদত্যাগ চাই।’

এএইচএফ কাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন পুষ্কর ক্ষিসা মিমো। সেই অধিনায়ক এবার এশিয়া কাপের দলে সুযোগ পাননি। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দল নির্বাচন প্রক্রিয়া সঠিক নয়, পাশাপাশি কর্মকর্তাদের আচরণেও অত্যন্ত অসন্তুষ্ট তিনি, ‘আমরা ইন্দোনেশিয়ায় খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাবি-দাওয়া করতাম। সেই রেষেই আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা কেন, একজন জ্ঞানসম্পন্ন মানুষও আরেকজনকে বাস্টার্ড বলে গালি দিতে পারেন না। সেখানে জাতীয় দলের একজন সিনিয়র খেলোয়াড় নাইমকে এটা বলেছেন যুগ্ম সম্পাদক। আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ চাই।’

মিমো-নাইমরা ফেডারেশন সভাপতি বরাবর চিঠি দিয়েছেন। সেখানে ইন্দোনেশিয়ার ঘটনা ও দল নির্বাচন হওয়ার অপ্রীতিকর ঘটনা উল্লেখ করে তপনের পদত্যাগ দাবি করেছেন খেলোয়াড়রা। হকি ফেডারেশনের দায়িত্বে বর্তমানে অ্যাডহক কমিটি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্মকর্তাদের মনোনীত করেছে। তাই এনএসসি’র দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন খেলোয়াড়রা, ‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যিনি খেলোয়াড়কে এভাবে গালি দিতে পারেন, তার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আগামী রোববার আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিবের (নির্বাহী পরিচালক) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চিঠি দেব।’

সাবেক খেলোয়াড় আবু জাফর তপন হকি অঙ্গনে পূর্বে সেভাবে অভিযুক্ত বা সমালোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তবে অ্যাডহক কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক হয়ে আসার পর তার আচরণ ও কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রশ্ন এবং বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। খেলোয়াড়দের পদত্যাগ দাবির প্রেক্ষিতে তপন আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন এভাবে, ‘দল থেকে বাদ পড়ার পর নাইম ফেডারেশন সেক্রেটারির রুমে এসেছিল। খেলোয়াড় হিসেবে বাদ পড়লে স্বাভাবিক ক্ষোভ থাকবেই। এক পর্যায়ে সে আমাকে বলছিল, “তুই আমাকে বাদ দিয়েছিস। তোর কারণে আমি বাদ পড়েছি।” আমি তখন নিজেকে সংযত রাখতে পারিনি। একপর্যায়ে বাজে আচরণ করেছি। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং আমাদের সাধারণ সম্পাদকও তার কাছে আমার হয়ে ক্ষমা চেয়েছে। যারা বাদ পড়েছে এর পেছনে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

সার্চ কমিটির সদস্য মেজর ইমরোজকে নিয়ে হকির একটি পক্ষ সমালোচনা করেছিল। ইমরোজের পক্ষে এক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নিলয়, মিমো ও তপনরা। মিমো-তপনদের সঙ্গে সখ্যতা থাকলেও হঠাৎ বিপত্তি কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নাইম বলেন, ‘আমরা হকির স্বার্থে সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। সাবেকরা অনেকে এসেছিলেন। তিনিও ছিলেন এর মধ্যে।’

এএইচএফ কাপে হকি ফেডারেশন রাসেল মাহমুদ জিমির মতো খেলোয়াড়কে ডাকেননি। হকিসহ পুরো ক্রীড়াঙ্গন জিমিকে বাদ দেওয়ার সমালোচনায় ফেটে পড়েছিল। তখন দলে থাকা খেলোয়াড়রা এ নিয়ে আড়ালে-আবডালেও কিছু বলেননি। এখন অবশ্য জিমি অন্যায়ের শিকার বলে স্বীকার করছেন মিমো, ‘জিমি ভাইকে দলে প্রয়োজন ছিল এবং অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে এটা তো আপনারাই দেখেছেন। তখন আমাদের বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না।’

এজেড/এএইচএস