মুরহাদ যেখানে সবার চেয়ে আলাদা
বাংলাদেশের অলিম্পিক হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ গেমস। দেশের প্রায় সকল ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদরা এই গেমসে অংশ নেন। চলমান নবম বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে সবার চেয়ে আলাদা একজন ক্রীড়াবিদ টেবিল টেনিসের মুরহাদ হোসেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডন প্রবাসী মুরহাদ বাংলাদেশ গেমসে খেলছেন বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী ক্রীড়াবিদ এবারের গেমসে একমাত্র মুরহাদই। এর আগে প্রবাসী ক্রীড়াবিদ জিমন্যাস্ট সাইক সিজার অলিম্পিকেও খেলেছেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও ডেনমার্ক প্রবাসী। তাদের অবশ্য বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নেই।
বিজ্ঞাপন
জন্মের কিছুদিন পরই পরিবারের সঙ্গে লন্ডন যান মুরহাদ হোসেন। বাবা-মা দুই জনই সিলেটি। দুজনেই লন্ডনে প্রায় দুই দশক। চার ভাই বোনের মধ্যে তিন জনই বধির। একমাত্র মুরহাদ হোসেনই স্বাভাবিক। লন্ডন থাকলেও বাংলাদেশের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চান মুরহাদ। এজন্য বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে এসেছেন।
লিগে পাললিকের হয়ে খেলেছিলেন মুরহাদ। এখন খেলছেন বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে বাংলাদেশ গেমস। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গেমসে অংশ নিয়ে বেশ খুশি মুরহাদ, ‘কাল মার্চ পাস্টে অংশ নিয়েছি। আমার খুবই ভালো লেগেছে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকস দেখেছি। ২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথও দেখেছি। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল এই রকম মার্চ পাস্টে অংশ নেওয়ার। আমি বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিতে পারায় খুব ভালো লাগছে।’
বিজ্ঞাপন
লন্ডন প্রবাসী হলেও লিগ আর গেমসের পার্থক্য ঠিকই বুঝছেন মুরহাদ, ‘গেমস মানে একটা উৎসব। সবাই আন্তরিক এবং ভালো খেলার পরিবেশ।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চান মুরহাদ, ‘আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। এজন্য লন্ডন থেকে এসেছি। সামনের মাসে লন্ডন ফিরতে চাই। লন্ডনে টেবিল টেনিস অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমি ফ্রান্স, জার্মানিতে গিয়ে খেলে নিজেকে আরও প্রস্তুত করে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’
বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সহ-সভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই ২০ বছর বয়সী মুরহাদ ঢাকায় এসেছেন। খোন্দকার হাসান মুনীর বলেন, ‘মুরহাদ মেধাবী খেলোয়াড়। তাকে নিয়ে ফেডারেশনের পরিকল্পনা রয়েছে। পাসপোর্ট করাচ্ছে সে। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক সনদ ও আরও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ইতোমধ্যে রয়েছে।’
মুরহাদ বাংলাদেশ পুলিশ দলকে দলগত ইভেন্টে ইতোমধ্যে পরের রাউন্ডে উঠিয়েছেন। পাললিকের হয়ে লিগ খেলার সময় মোবাইল ও ক্রেডিট কার্ড হারিয়েছেন। বাংলাদেশ গেমসে মানুষের সম্পৃক্ততার সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এবার একটু সাবধানী মুরহাদ, ‘ এখন আরও সতর্ক হয়েছি। ক্রেডিট কার্ড চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পাওয়া গেছে। আশা করি হাতে আসবে খুব শীঘ্রই।’
লন্ডনে বেড়ে উঠলেও তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোরের ক্যাম্প নিয়ে অসন্তোষ নেই মুরহাদের, ‘ইউরোপেও আমি ক্যাম্প করেছি। সেখানেও এখানকার মতোই ব্যবস্থা। এখানে সবই ভালো, শুধু একটু মশা বেশি।’
ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে কম্পিউটার সায়েন্স ও গেম ডেভলপমেন্ট স্নাতক পড়ছেন মুরহাদ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলেও বাংলায় সেভাবে কথা বলতে পারেন না মুরহাদ। বাবা-মা সিলেটের হওয়ায় ওখানকার স্থানীয় ভাষায় কিছুটা ভাব বিনিময় করতে পারেন।
এজেড/এমএইচ