পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামটি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করছে টেবিল টেনিস (টিটি) ও ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। টেবিল টেনিসের অংশে সব সময় খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও কোচদের ব্যস্ততা লেগেই থাকে। নিচতলার কোর্টে এক চিত্র থাকলেও দ্বিতীয় তলায় ফেডারেশনের অবশ্য অন্য চিত্র। 

দ্বিতীয় তলার এক পাশে বেশ কয়েকটি কক্ষ নিয়ে ফেডারেশন। টেবিল টেনিস বা কোনো ক্রীড়া সংস্থা এটি বোঝার উপায় নেই। সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের নেই কোনো নামফলক। অন্য ফেডারেশনগুলোতে সাধারণ সম্পাদক/সভাপতির এবং বর্তমান নির্বাহী কমিটির তালিকা থাকে। এর কিছুই নেই টেবিল টেনিস ফেডারেশনে। 

টেবিল টেনিস ফেডারেশনের বিপরীত পাশেই অবস্থান ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের। সংগঠকদের অর্ন্তদ্বন্দ্ব ও নানা জটিলতায় থাকলেও এই ফেডারেশনটি ইতিহাস সংরক্ষণে বেশ গোছালো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের এককে নারী, পুরুষ চ্যাম্পিয়নের আলাদা আলাদা বোর্ড রয়েছে। ব্যাডমিন্টন থেকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা রয়েছে আরেকটি বোর্ডে। এছাড়া সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির তালিকাও টাঙানো রয়েছে সুসজ্জিতভাবে।  

দেশের নানা ফেডারেশনগুলোর মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্বের তালিকায় শীর্ষ ফেডারেশনগুলোর একটি হকি। সেই হকি ফেডারেশনও কীর্তিমানদের সম্মান জানায়। হকি ফেডারেশনের সভাকক্ষে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল হকি ব্যক্তিত্বের ছবি রয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠাকাল অদ্যবধি সকল সাধারণ সম্পাদকের ছবি। অন্যদিকে টেবিল টেনিসের রফিকুল ইসলাম টিপু ও শামসুল আলম আনুর মতো নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের কোনো চিহ্নই নেই ফেডারেশনে।

অ্যাথলেটিক্স ও সাতার ফেডারেশনে জাতীয় চ্যাম্পিয়নের তালিকা বোর্ড টাঙানো নেই। তবে প্রতি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দুই ফেডারেশনই ছোট্ট পুস্তিকা প্রকাশ করে। সেখানে বিগত চ্যাম্পিয়নদের নাম ও টাইমিংও উল্লেখ থাকে। টেবিল টেনিস ফেডারেশনে জাতীয় চ্যাম্পিয়নদের জন্য কোনো বোর্ড তো নেই, এমনকি নেই কোনো প্রকাশনাও। কে কত সালে চ্যাম্পিয়ন সবই স্মৃতি নির্ভর। যা অদূর ভবিষ্যতে বিতর্ক সৃষ্টির উপক্রম রয়েছে।

ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের চ্যাম্পিয়ন ও সাধারণ সম্পাদকদের তালিকা বোর্ড

টেবিল টেনিস ফেডারেশনের বর্তমান কমিটিতে রয়েছেন একাধিক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় ও বিভিন্ন টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি সাইদুল হক সাদীর। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে থেকে নিজের অপারগতার বিষয়টি স্বীকার করলেন টিটির এই কিংবদন্তী, ‘কর্মকর্তাদের অনার্স বোর্ড, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তালিকার বোর্ড অবশ্যই থাকা উচিত। নানা সময়ে আমরা আলোচনাও করেছি। যদিও বাস্তবায়ন হয়নি।’

টেবিল টেনিস তো বটেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম কিংবদন্তী জোবেরা রহমান লিনু। এই কিংবদন্তীর কোনো ছবি বা নামও নেই ফেডারেশনে। বিষয়টি হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন লিনু, ‘আমার গিনেস বুকের সার্টিফিকেট বা আরও প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি ফেডারেশনে থাকতেই পারত। যারা যারা চ্যাম্পিয়ন বা বিশেষ কীর্তি গড়েছে টিটিতে তাদের একটা তালিকা থাকা উচিত যাতে নতুন প্রজন্ম উজ্জ্বীবিত হয় এবং ফেডারেশনে যারা আসবে তারা টিটি সম্পর্কে যেন ধারণা পায়।’

লিনু নিজেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি দায়িত্ব থাকার পরেও কেন এটি করতে পারেননি এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম খুব স্বল্প সময়ের জন্য। ছয় মাসের মতো দায়িত্বে ছিলাম। সেই সময় অনেক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে, ফলে এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারিনি এবং সময়ও পাইনি।’

প্রথম আদিবাসী হিসেবে টেবিল টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রামহিম লিয়ান বম। টেবিল টেনিসের ইতিহাসে অন্যতম কনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন মোহতাসিন আহমেদ হৃদয়। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের এমন সুন্দর তালিকা দেখে খানিকটা আফসোসই করেছেন নিজেদের বোর্ড না থাকায়। তবে সম্প্রতি ফেডারেশন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানালেন ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সাদী, ‘আমরা ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি কয়েকটি বোর্ড করার। এজন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির মেয়াদকাল চাওয়া হয়েছে।’ 

ফুটবল ও ক্রিকেট বাদে দেশের সকল ফেডারেশনই সাধারণ সম্পাদক নির্ভর। তবে টেবিল টেনিস খানিকটা ব্যতিক্রম। বেশ কয়েক বছর এক সহ-সভাপতির ওপরই ফেডারেশন নির্ভরশীল ছিল। সভাপতি না থাকায় তিনি ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আট মাস আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি মনোনীত হয়েছেন।

এজেড/এএইচএস