বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যের বড় মঞ্চ এসএ গেমস। সর্বশেষ কাঠমান্ডু এসএ গেমসে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ডিসিপ্লিন ছিল কারাতে। সেই কারাতে এবার এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলেছে নির্দিষ্ট সময়ে কারাতেকা পৌঁছাতে না পারায়। এই লজ্জাজনক ঘটনার পাশাপাশি রয়েছে ফেডারেশনের কর্মকর্তার বহিষ্কার এবং সেই বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়াও। 

বিদেশে খেলতে গিয়ে না ফেরা, খেলোয়াড়-কর্মকর্তা সাজিয়ে অন্যদের বিদেশ পাঠানোর ঘটনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বহু পুরনো। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে মোস্তাফিজুর রহমানকে সহ-সভাপতি পদে অব্যাহতি এবং আগামী পাঁচ বছর কারাতে সংক্রান্ত সকল কর্মকান্ড থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে কারাতে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি। 

চলতি বছর মার্চ এবং মে’তে ইউরোপের মাল্টা এবং ইতালিতে আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ মার্শাল আট কনফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদকও। ইউরোপের ঐ দুই আসর থেকে অনেকের না ফেরার অভিযোগ উঠে ক্রীড়াঙ্গনে। সেই দুই আসরে মোস্তাফিজের নাম ছিল দলনেতা হিসেবে।

সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মার্শাল আর্ট কনফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজ কারাতে ফেডারেশনেরও সহ-সভাপতি। মার্শাল আর্ট এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলেও কারাতে ফেডারেশন অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটি মোস্তাফিজের উপর অভিযোগের সত্যতা খুজে পেয়ে রিপোর্ট প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৮ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত রিপোর্টের আলোকে মোস্তাফিজকে সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি এবং আগামী পাচ বছরের জন্য কারাতে সংক্রান্ত সকল কর্মকান্ড থেকে নিষিদ্ধ করে।

মোস্তাফিজ নিজের ওপর আনীত অভিযোগ মিথ্যা ঔ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত তার আবেদন বিবেচনায় এনে ১৬ অক্টোবর একটি রুল জারি করে কারাতে ফেডারেশনের উপর। সেই রুলে মোস্তাফিজের উপর আনীত বহিষ্কারাদেশ এবং কার্য নির্বাহী কমিটির পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না সেটা চার সপ্তাহের মধ্যে ফেডারেশনকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। 

আদালতের নির্দেশনার পরবর্তীতে ফেডারেশনের অবস্থান এবং মার্শাল আর্ট সংক্রান্ত বিষয় কারাতে ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক ক্য শৈ হ্লা’র সঙ্গে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। আদালতের নির্দেশনা কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ছাড়াও ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও প্রাপক। এই ব্যাপারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইন কর্মকর্তা কবিরুল হাসান বলেন,‘ আদালতের নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের চার সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে জবাব দিতে হবে।’ 

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঘটা এশিয়ান গেমস কেলেঙ্কারির বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ফেডারেশন। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ এবং হাংজু এশিয়ান গেমসের শেফ দ্য মিশন একে সরকার বলেন,‘ আমরা তাদের চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের জানাতে বলেছিলাম। তারা আমাদের একটি চিঠিতে ব্যবস্থা গ্রহণে কিছুটা সময় চেয়েছে।’ 

কারাতে ফেডারেশনের আরেক সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টু ও যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল এশিয়ান গেমসে কোচ এবং ম্যানেজারের ভুমিকায় ছিলেন৷ ফেডারেশনে দুই কর্মকর্তার অবহেলায় বাংলাদেশকে এশিয়ান মঞ্চে লজ্জায় ডুবিয়েছে। যেখানে এই বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার কথা সেখানে ধীরে চলো নীতি নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে।

আরেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজের বহিষ্কার ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কারাতে অঙ্গনে কানাঘুষাও রয়েছে, মোস্তাফিজ ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী না হতে পারেন এজন্যই নাকি ফেডারেশনের এমন সিদ্ধান্ত। গুঞ্জনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এজেড/এফআই