ক্রীড়াঙ্গনের ‘আড়ালের’ কারিগররা
ফুটবলার সাবিনা, স্প্রিন্টার শিরিন, ক্রিকেটার জ্যোতিরা দেশের জন্য লড়েন মাঠে-ময়দানে। তাদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার নেপথ্য কারিগর কোচ-ট্রেইনাররা। অনেক সময় তাদের কৃতিত্বটা প্রকাশ্যে এলেও পেছন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ফিজিওরা থেকে যান আড়ালে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও নীরবে কাজ করছেন ৫ জন নারী ফিজিও। যারা কাজ করেন আড়ালে, থাকেনও আড়ালে!
নারী খেলোয়াড়, কোচ, আম্পায়ার ও সংগঠকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, কিন্তু ফিজিওর সংখ্যা একেবারেই কম। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য সক্রিয় ফিজিওর সংখ্যা বর্তমানে মাত্র পাঁচজন। তারা হলেন সুরাইয়া আক্তার নয়না, ফারজানা আমিন লিজা, লাইজু ইয়াসমিন লিপা, রেবেকা সুলতানা ও লুতফা আক্তার।
বিজ্ঞাপন
কোনো খেলায় যখন সাফল্য আসে তখন নারী ক্রীড়াবিদ, কোচ, সংগঠক, রেফারি ও আম্পায়াররা থাকেন আলোচনায়। ফিজিওরা কখনো আলোচনায় আসেন না। তারা অনেকটা নীরবে-নিভৃতে কাজ করেন।
সুরাইয়া আক্তার নয়না ও ফারজানা আমিন লিজা ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে কাজ করেন নারী উইংয়ে। লাইজু ইয়াসমিন লিপা বাফুফেতে নারী ফুটবল দলে, রেবেকা সুলতানা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের অধীনে বিভিন্ন গেমস ও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অবস্থিত ফেডারেশনগুলোতে এবং লুতফা আক্তার বিকেএসপিতে ফিজিও হিসেবে কাজ করেন।
২০০১ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক চাকরি শুরু করেন লুতফা। ক্রীড়াঙ্গনে তিনিই প্রথম নারী ফিজিও, এমনটাই দাবি তার, ‘বিকেএসপিতে আমি প্রথম নারী ফিজিও। এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী হিসেবে কাজ করছি। ফুটবল ফেডারেশন ও ক্রিকেট বোর্ড নারী ফিজিও নিয়োগ দিয়েছে বিকেএসপির পর। অন্য ফেডারেশনে নারী ফিজিও নেই। সেই হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে আমিই প্রথম নারী ফিজিও।’
বিজ্ঞাপন
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকেএসপিতে নারী ক্রীড়াবিদ ভর্তি শুরু হয় ১৯৯৭ থেকে। নারী ক্রীড়াবিদ ভর্তির কয়েক বছর পর থেকে নারী ফিজিওর যাত্রা শুরু। শুরুর দিকে নারী ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন তিন শতাধিক। তিনশ’র বেশি খেলোয়াড়কে লুতফার একার পক্ষে দেখভাল করা অনেক কষ্টসাধ্য। তারপরও সামলে নিচ্ছেন তিনি, ‘শিক্ষার্থীদের আঘাত-ইনজুরি নিয়ে আমার কাজ। একসঙ্গে কয়েকজনের ইনজুরি হওয়ার ঘটনা কম। এরপরও মাঝে-মধ্যে চাপ পড়ে। আবার অনেক সময় ছেলে শিক্ষার্থীদেরও দেখতে হয়।’
বিকেএসপির নারী ফিজিও লুতফার প্রাপ্তি, ‘১৫ বারের দ্রুততম মানবী যখন বলে “ম্যাডাম এই সাফল্য আপনারও”, সেটাই আমার বড় পাওয়া।’ শিরিনও তার ক্যারিয়ারের পেছনে লুতফার অবদান সম্পর্কে বলেন, ‘স্প্রিন্ট ইভেন্টে অনেক আঘাত-ইনজুরি হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমারও চোট ছিল। লুতফা ম্যাডামের নিবিড় পরিচর্যায় সমস্যায় পড়তে হয়নি। সুস্থ-স্বাভাবিক অ্যাথলেট শিরিন আক্তারের পেছনে তার অবদান অনেক।’
লুতফা বিকেএসপির ক্যাম্পাসেই থাকলেও ফুটবলে কাজ করা লিপা ও ক্রিকেটের সুরাইয়া-লিজার পরিধি একটু ভিন্ন। নারী ফুটবল দল বা ক্রিকেট দল যেখানে, তাদের সেখানে দৌড়াতে হয়। ২০০৮ সাল থেকে ক্রিকেট বোর্ডে ফিজিও হিসেবে কাজ করছেন সুরাইয়া। ফিজিওথেরাপিতে পড়াশোনা করে ক্রীড়াঙ্গনে আসার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে ভিন্নকিছু করবে। আমার স্বপ্ন ছিল দুনিয়াকে একটু ভিন্নভাবে দেখার। বিসিবিতে আমিই প্রথম নারী ফিজিও, ফলে এখানে আমার পথিকৃৎ হওয়ার সুযোগ ছিল। তাই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া।’
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকেএসপিতে নারী ক্রীড়াবিদ ভর্তি শুরু হয় ১৯৯৭ থেকে। নারী ক্রীড়াবিদ ভর্তির কয়েক বছর পর থেকে নারী ফিজিওর যাত্রা শুরু। শুরুর দিকে নারী ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন তিন শতাধিক। তিনশ'র বেশি খেলোয়াড়কে লুতফার একার পক্ষে দেখভাল করা অনেক কষ্টসাধ্য। তারপরও সামলে নিচ্ছেন তিনি।
নারী হিসেবে ফিজিওর দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জটা ঘরে-বাইরে দুই জায়গায়ই। এক দশকের অভিজ্ঞতায় সুরাইয়া বলেন, ‘এমনও হয়েছে বছরে ৬-৭ মাস পরিবারের বাইরে থাকতে হয়েছে। এটা নারী হিসেবে অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। আবার পেশাদার জগত পারফরম্যান্স-ভিত্তিক। খেলোয়াড়দের দ্রুত সময়ে ফিট করে তোলাই ফিজিওর সাফল্য হিসেবে গণ্য হয়।’
এক যুগের বেশি সময় নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করছেন সুরাইয়া। অনেক ক্রিকেটারের দুঃসময়ের সঙ্গী ছিলেন। এমন একটি উদাহরণও দিলেন তিনি, ‘২০১০ সালের দিকে শামীমা সুলতানা হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছিল। তখন তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখছিল অনেকে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে এখনও সে খেলছে, এটিই আমার ফিজিও হিসেবে সার্থকতা।’
ক্রীড়াঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সাফল্য সাফ ফুটবলে নারীদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই ফাইনালে দলের মূল ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্নার খেলা ছিল প্রায় অনিশ্চিত। ফিজিও লিপার প্রচেষ্টায় ফাইনালে খেলেছিলেন স্বপ্না ৷ এটাই লিপার সন্তুষ্টি, ‘আমার চ্যালেঞ্জ ছিল তাকে ফিট করে তোলা। সে ফিট হয়ে খেলেছে এটাই আমার প্রাপ্তি।’ সাফজয়ী কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন বাংলাদেশের সাফ জয়ে ফিজিও লিপার অবদান দেখছেন, ‘একটি টুর্নামেন্টে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ইনজুরি-আঘাত থাকে। ফিজিও লিপা সেগুলো সুন্দরভাবে দেখা-শোনা করে। আমার প্রয়োজনমতো সে খেলোয়াড়দের ফিট করে দিয়েছে। ফলে সাফল্যে তারও অনেক অবদান।’
২০১৬ সাল থেকে নারী ফুটবল দল আবাসিক ক্যাম্প শুরু করে। দুই-তিন বছর চুক্তিভিত্তিক কয়েকজন নারী ফিজিও কাজ করেছেন। ২০২০ সাল থেকে স্থায়ীভাবে কাজ করছেন লিপা। সিনিয়র-জুনিয়র মিলে বেশ কয়েকটি নারী দল। তাই কাজের চাপও অনেক লিপার, ‘ফুটবলাররা ইনজুরিতে পড়লে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। রিপোর্ট আলাদা আলাদা সংরক্ষণ করতে হয়। কাছাকাছি সময়ে একাধিক টুর্নামেন্ট থাকলে ডাটা সংরক্ষণও আলাদা করতে হয়।’
নারী হিসেবে ফিজিওর দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জটা ঘরে-বাইরে দুই জায়গায়ই। এক দশকের অভিজ্ঞতায় সুরাইয়া বলেন, ‘এমনও হয়েছে বছরে ৬-৭ মাস পরিবারের বাইরে থাকতে হয়েছে। এটা নারী হিসেবে অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। আবার পেশাদার জগত পারফরম্যান্স-ভিত্তিক। খেলোয়াড়দের দ্রুত সময়ে ফিট করে তোলাই ফিজিওর সাফল্য হিসেবে গণ্য হয়।’
ফুটবলে লিপা এক হাতে সব সামলাতে হলেও ক্রিকেটে সুরাইয়ার সঙ্গে আছেন লিজা। ফিজিওথেরাপির অন্য সেক্টরের চেয়ে স্পোর্টসকে আলাদা করে দেখেন তিনি, ‘অন্য ফিজিওথেরাপির চেয়ে স্পোর্টসের থেরাপিতে স্টাডি, সময় ও এনার্জি তিনটাই বেশি প্রয়োজন।’
এত পরিশ্রমের পরও সাফল্যের আলোচনায় থেকে যান আড়ালে। এ নিয়ে অবশ্য আফসোস নেই তার—‘ফিজিও আমার পেশা। স্পোর্টস আমার প্যাশন।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় খুব পরিচিত মুখ রেবেকা। কখনো হ্যান্ডবল, কখনো হকি, কখনো ব্যাডমিন্টনে পাওয়া যায় তাকে। লিপা, লিজারা স্থায়ীভাবে বিসিবি, বাফুফে ও বিকেএসপিতে থাকলেও রেবেকা সেভাবে নেই। মুক্ত থাকাতেই তার যেন আনন্দ, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো খেলায় সীমাবদ্ধ নই। যখন যেখানে প্রয়োজন ও ভালো লাগে যাই। নিজে আলাদা কাজও করতে পারি। স্বাধীনভাবে ভালোই আছি।’
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের অধীনে গেমসের সময় বিভিন্ন খেলার ক্যাম্প পরিদর্শন করেন রেবেকা। ১-২ বছর পরপর গেমস হওয়ায় রেবেকাকে কাজ করতে হয় একেক মাসে একেক ফেডারেশনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। তাই নারীদের পাশাপাশি পুরুষ ক্রীড়াবিদ নিয়েও তাকে কাজ করতে হয়।
ঘরোয়া হকিতে বড় দুই দলের খেলা মানেই তুমুল উত্তেজনা। সেটা অনেক সময় গড়ায় হাতাহাতিতেও। তুমুল হট্টগোলের মধ্যেও প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স নিয়ে দৌড়ান রেবেকা। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে সব পুরুষের ভিড়ে একমাত্র নারী ফিজিও হিসেবে রেবেকা শুশ্রূষার কাজ করছেন অবলীলায়, ‘২০১০ সালে উশু থেকে আমার পথচলা শুরু। অনেক খেলায় কাজ করি। ক্রীড়াঙ্গনকে একেবারে আপন মনে হয়। নারী হলেও পুরুষদের আলাদাভাবে দেখি না, আমাকেও তারা সেভাবে দেখে না।’
দেশের অন্যান্য অনেক অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও নারী-পুরুষ বৈষম্য কিছুটা হলেও আছে। এক যুগের বেশি সময় কাজ করা সুরাইয়া খানিকটা আক্ষেপের কন্ঠে বলেন, ‘পুরুষ দলে পুরুষ ফিজিও আমার চেয়ে অভিজ্ঞতায় কম হলেও পারিশ্রমিকের অঙ্কে বেশি।’ দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ ক্রিকেটে এবং অনেক দেশের পুরুষ ফুটবল দলেও নারী ফিজিও কাজ করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি খানিকটা অসম্ভব হলেও নিজেকে এমন অবস্থানে নিতে চান সুরাইয়া, ‘আমি পেশাদার। কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে আমি পুরুষ নাকি নারী সেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়।’
ফিজিও বিষয়টি চিকিৎসা সম্পর্কিত। চিকিসক-ফিজিও অনেক সময় দ্বন্দ্বে জড়ায়। এ সম্পর্কে ফুটবল নিয়ে কাজ করা লিপা বলেন, ‘আমার জ্ঞান থাকলে সম্মান দিতে বাধ্য। উনি যখন কথা বলবেন আমার কথায় বুঝতে পারবেন যে নলেজ দিয়ে এগোচ্ছি।’ ক্রিকেটের সিনিয়র ফিজিও লিজা বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেটে চিকিৎসক-ফিজিও দারুণ সম্পর্ক। মাঝে মধ্যে কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের লোড দেওয়া নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলাপ হয়।’ একাডেমিক বিষয়ে সুরাইয়া বলেন, ‘ব্যাচেলর অব ফিজিও থেরাপিতে পড়ার দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে মাত্র একটি। এটি যেমন বাড়ানো দরকার তেমনি স্পোর্টসে যারা কাজ করছে তাদের বিদেশে ট্রেনিংয়ে পাঠানো দরকার।’
ক্রীড়ার নানা খাত দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এখানে যেন কোনো গতি নেই। গত দুই দশকে মাত্র চার-পাঁচজন নারী এই পেশায় এসেছেন। এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে বিসিবির ফিজিও লিজা বলেন, ‘আগে নারীদের খেলাধুলার বিকাশ ঘটাতে হবে। নারী ক্রিকেটের পরিধি বাড়ায় এখন একজন বিদেশি নারী ফিজিও ও দুইজন দেশি কাজ করছি। সামনে হয়তো বাড়তে পারে ক্রিকেট ও অন্য খেলায়ও।’
এক যুগের বেশি সময় কাজ করা সুরাইয়া খানিকটা আক্ষেপের কণ্ঠে বলেন, ‘পুরুষ দলে পুরুষ ফিজিও আমার চেয়ে অভিজ্ঞতায় কম হলেও পারিশ্রমিকের অঙ্কটা বেশি।’ দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ ক্রিকেটে এবং অনেক দেশের পুরুষ ফুটবল দলেও নারী ফিজিও কাজ করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি খানিকটা অসম্ভব হলেও নিজেকে এমন অবস্থানে নিতে চান সুরাইয়া, ‘আমি পেশাদার। কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে আমি পুরুষ নাকি নারী সেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্লাবগুলো ফিজিও সেভাবে নেয় না। বিসিবির ফিজিওরাই তত্ত্বাবধান করে প্রয়োজনে। অতিমাত্রায় ফিটনেস-নির্ভর খেলা ফুটবল লিগে আতাউর রহমান ভুইয়াঁ কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবে ফাতেমা-তুজ-জোহরা দুই মৌসুম ফিজিও হিসেবে কাজ করেছেন। সার্ভিসেস সংস্থাতেও নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য ফিজিও আছে।
পাঁচ নারী ফিজিওর মধ্যে সুরাইয়া, লুতফা ও রেবেকা তিনজনেরই স্বামী ক্রীড়াঙ্গনেই ফিজিও হিসেবে কাজ করেন। সুরাইয়ার স্বামী মোফাজ্জল হোসেন জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনে কাজ করতেন। স্ত্রী বিসিবিতে কাজ করায় তিনি স্পেশাল অলিম্পিকে যোগ দেন। লুতফার স্বামী লিংকনও বিকেএসপির ফিজিও। রেবেকার স্বামী আরিফ জোবায়ের বিওএ এবং বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় বিভিন্ন ফেডারেশনের প্রতিযোগিতায় কাজের পাশাপাশি মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের ফিজিও সেন্টারে বসেন।
লিপা ও লিজার স্বামী অন্য পেশায় আছেন। স্বামীর কাছ থেকে সহায়তা পান বলেই তারা কাজ করতে পারছেন বলে জানান। দুজনই জানান, স্বামী ও পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা না পেলে এই পেশা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। সংসার, বাচ্চা সবকিছু সামলে মাঠে দৌড়ানো সম্ভব হয় তাদের আন্তরিক সহযোগিতায়।
কোনো খেলায় যখন সাফল্য আসে তখন নারী ক্রীড়াবিদ, কোচ, সংগঠক, রেফারি ও আম্পায়াররা থাকেন আলোচনায়। ফিজিওরা কখনো আলোচনায় আসেন না। তারা অনেকটা নীরবে-নিভৃতে কাজ করেন। সাবিনা-জ্যোতি-শিরিনদের পেছনে অনেক অবদান আছে সুরাইয়া-লিপাদের। ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃতি প্রয়োজন তাদেরও।
কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক কামরুন্নাহার ডানা বলেন, ‘আশি-নব্বইয়ের দশকে আমরা নারী ক্রীড়াবিদরা নারী ফিজিও কাউকে পাইনি। এতে অনেক বিষয়ে আমাদের লুকাতে হয়েছে বা এড়িয়ে যেতে হয়েছে যা খেলায় প্রভাব পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে নারী ফিজিওরা আসছে। ক্রীড়াঙ্গনের নীতিনির্ধারকদের নারী ফিজিওদের সম্মান, মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। খেলোয়াড়দের মতো তারাও ক্রীড়াঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
এজেড/এইচজেএস