যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক পদকে আছেন ‘বাংলাদেশি’ সাইক সিজার
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন জিমন্যাস্ট কাজী সাইক সিজার। তিনি ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এক যুগ পর আবার গেলেন অলিম্পিকের মঞ্চে। তবে এবার অন্য ভূমিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ জিমন্যাস্টিক্স দলের সহকারী কোচের দায়িত্বে আছেন সিজার। ইতোমধ্যে প্যারিস অলিম্পিকে তার শিষ্যরা জিতে নিয়েছে ব্রোঞ্জ পদক।
অলিম্পিকে পদক তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের দাপট থাকে সব সময়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসরে একটি পদকের মূল্য ও সম্মানও অনেক। সেই বহু কাঙ্ক্ষিত একটি পদকের নেপথ্যে রয়েছেন একজন বাংলাদেশি- এটা অনেক বড় ব্যাপার। সাইক নিজেও বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত এটি, অলিম্পিক পদকজয়ী দলের অংশ হতে পারা। বাংলাদেশের জন্যও দারুণ গর্বের বিষয়।’
বিজ্ঞাপন
জিমন্যাস্টিক্স বাংলাদেশে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় খেলা নয়। তবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় খেলার একটি এবং অলিম্পিকে অন্যতম আকর্ষণীয় ইভেন্ট। আর্টিস্টিক পুরুষ জিমন্যাস্টিক্স দলগত ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সালের পর পদক পুনরুদ্ধার করল এবার। তাই একটু বেশি খুশি দলটির সহকারী কোচ সাইক, ‘আমি কয়েক মাস আগে থেকে দলের সঙ্গে কাজ করছি। অলিম্পিকে পদকের একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ ছিল। ছেলেরা আমাদের নির্দেশনা অনুসরণ করেছে। তারা সফল হওয়ায় আমরা কোচিং স্টাফরাও সফল।’
অলিম্পিকে খেলা যেকোনো ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন। খেলোয়াড় ও কোচ উভয় ভূমিকায় অলিম্পিকে অংশগ্রহণের ঘটনা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে কমই ঘটে। বাংলাদেশে তো নেই-ই। এক্ষেত্রে সিজার চলে গেলেন বিশেষ অবস্থানে, ‘হ্যাঁ, আসলেই বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের। খেলোয়াড় ও কোচ উভয় ভূমিকায় অলিম্পিকে রয়েছি। আরও মজার বিষয়, দুই ভূমিকায় দুই দেশের হয়ে।’
বিজ্ঞাপন
প্যারিস অলিম্পিকে সবচেয়ে বড় কন্টিনজেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের। সেই কন্টিনজেন্টের একজন বাংলাদেশের সাইক।
সাইকের জন্মও ক্রীড়া পরিবারে। তার বাবা কাজী সিজার সত্তর-আশির দশকে ফুটবলার ছিলেন। নিজেদের ক্লাব আরামবাগ ছাড়াও সাধারণ বীমা, ব্রাদার্স ইউনিয়নেও খেলেছেন তিনি। সাইকের চাচা জলি আরামবাগ ক্লাবের খেলোয়াড়, কোচ ও সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন। কাজী সিজার ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রয় পাড়ি জমান। দুই বছর নিউইয়র্কে থেকে পরবর্তীতে ফ্লোরিডায় থিতু হন। সাইকের বেড়ে ওঠা ফ্লোরিডাতেই।
সাইকের বাবা কাজী সিজারও এসেছেন প্যারিসে। অলিম্পিকে ছেলে পদকের অংশীদার হওয়ায় তিনি অত্যন্ত গর্বিত, ‘মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে সাইক জিমন্যাস্টিকস প্র্যাকটিস করছে। জিমন্যাস্টিকস শুরু করার পর থেকে সেটাই ওর ধ্যান-জ্ঞান। অনেক জন্মদিন বা অনুষ্ঠানে সে যায়নি অনুশীলনের জন্য। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রয় হাইস্কুলের শেষদিন খুব স্মরণীয়, সেটাতেও না গিয়ে সে অনুশীলন করেছে। কোচ হিসেবেও এখন সে একই নীতি অনুসরণ করছে। এত ত্যাগ ও সাধনার ফলেই এই সাফল্য এসেছে।’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে সাইক সিজারের। যুক্তরাষ্ট্রয় বেড়ে উঠলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সম্পৃক্ততা আছে তাঁর। ২০১১ সালে সাউথ সেন্ট্রাল এশিয়ায় বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন তিনি। পরের বছর খেলেছিলেন লন্ডন অলিম্পিকে। অলিম্পিকে চোটের জন্য প্রত্যাশিত ফল পাননি। এরপর ২০১৪ সালে ইনচোন এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সাইক।
২০১৫ সাল থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রথমে ফ্লোরিডা ইভিও জিমন্যাস্টিক্স দলের হয়ে কাজ করেন দুই বছর। নানা স্তরে কয়েক বছর কোচিং করানোর পর এখন যুক্তরাষ্ট্রন জাতীয় জিমন্যাস্টিক্স দলের সঙ্গে কাজ করছেন। অলিম্পিকের মতো আসরে তাকে কোচিং স্টাফ হিসেবে নির্বাচন করেছে যুক্তরাষ্ট্রন জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন। এ প্রসঙ্গে সাইক বলেন, ‘খেলোয়াড়ের মতো কোচ হিসেবেও সব সময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। তাই যুক্তরাষ্ট্রন জাতীয় দল এবং পরিশেষে অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়া।’
বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিক্স নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানে কোচ বা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার ব্যাপারে তার মন্তব্য, ‘আমি বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিক্সের পাশেই রয়েছি সব সময়। প্যারিসে এসেও বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে দেখা যাক কী হয়।’
আরও পড়ুন
জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনেরও সহ-সভাপতি। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্যারিস অলিম্পিক দেখতে এসেছেন। সাইকের পদকের অংশীদারত্ব ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বশির আহমেদ বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের, সিজার অলিম্পিক পদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো। বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন সব সময় সিজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। গত বছরও সিজার আমাদের আমন্ত্রণে তরুণ জিমন্যাস্টদের কিছু সময় দিয়েছিলেন। আগামীতেও সিজার ও জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন একসঙ্গে থাকবে।’
২০১৬ রিও অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছিলেন রাশিয়ান জিমন্যাস্ট মার্গারিতা মামুন। তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশি। বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন স্বর্ণজয়ী মার্গারিতা মামুনকেও বাংলাদেশে এনেছিল। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃতি জিমন্যাস্টদের সম্মান জানায়। এটা বেশ প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।
এজেড/এএইচএস