এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদক বক্সিংয়ে। ১৯৮৬ সিউল এশিয়ান গেমসে বক্সার মোশাররফ ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এরপর আর এশিয়ান পর্যায়ে পদক নেই বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আলোচিত বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। রাঙামাটি থেকে উঠে আসা সুর কৃষ্ণ এখন দেশের বক্সিংয়ের আইকন। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কয়েকবার। দেশের একমাত্র স্বীকৃত পেশাদার বক্সার। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম পেশাদার বক্সিংয়ে হয়েছেন সেরা। এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের সুপার লাইটওয়েট ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট জিতেছেন এই বক্সার। তিনিই এবার মুখ খুললেন ফেডারেশনের বিপক্ষে।

নিজের ফেসবুকে রীতিমত বিস্ফোরক মন্তব্যই করেছেন সুর কৃষ্ণ চাকমা। বিদেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন– এমন অভিযোগও করেছেন এই বক্সার। অভিযোগ এনেছেন বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে নিয়েও।  নিজের ফেসবুক ওয়ালে এক স্ট্যাটাসে ক্ষোভ নিয়েই সুর কৃষ্ণ লিখেছেন, ‘২০১৩ সাল থাকে ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ গেমস সহ যত জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি সে সব প্রতিযোগিতায় একেকটা মেডেল ছাড়া ফেডারেশন থেকে কিছুই পাইনি।’ তার ভাষ্য, ‘আমি এ কথাগুলো বলছি শুধু মাত্র পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে।’  আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের ব্যর্থতা নিয়েও মন্তব্য করেছেন এশিয়ার সেরা হওয়া এই বক্সার, ‘২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বক্সিং ফেডারেশনের কোন সাধারণ সম্পাদক একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারে নাই। বছরের পর বছর জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য বসে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদি কোন প্রশিক্ষণ হয় না। প্রফেশনাল বক্সিংটা আসার কারণে বাংলাদেশের বক্সিংটা মানুষ জানতেছে। এখানে ফেডারেশনের কোন ভূমিকা নেই।’

ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে এই প্রতিবেদক সুর কৃষ্ণের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর জানা যায় তার আক্ষেপের আরো কথা, 'ফেডারেশনের কাজ খেলোয়াড় তৈরি করা। সেখানে আমি বাধাগ্রস্থ হয়েছি। আমার সেরা ফর্মের সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও দমে যাইনি। খেলায় ফিরেছি।' ক্রিকেটে সাকিব, হকির জিমি, ফুটবলের মামুনুল নানা সময় নিষিদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশের তারকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফেডারেশনের দূরত্বের কারণ সম্পর্কে সুর কৃষ্ণের মন্তব্য,‌ 'সেরা খেলোয়াড়দের ফেডারশেন অন্য দশ জনের মতোই মূল্যায়ন ও গুরুত্ব দেয়। অথচ তাদের অনেক চাপ সহ্য করতে হয়। এজন্য ফেডারেশনের উচিত আরো বেশি যত্ন নেয়া। সেটা না করে ফেডারেশন উল্টো এদের চাপে রাখে ও শাস্তি হয়।' রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দেশের সেরা বক্সার হয়েছেন। এই পর্যায়ে আসতে তার অনেক কষ্টের কথা বললেন, 'একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যক্তি হয়ে দেশের শীর্ষ খেলোয়াড় হওয়া অনেক কঠিন। প্রতি ধাপে ধাপে আমি সংকট উত্তরণ করে এই পর্যায়ে এসেছি।' 

সাবেক তারকা বক্সার মোশাররফ হোসেন সুর কৃষ্ণের সঙ্গে এক মত পোষণ করে বলেন,‌ 'ফেডারেশনের উচিত সাবেক খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করা। একজন খেলোয়াড় এক দিনে তৈরি হয় না। ফলে খেলোয়াড়দের শাস্তি বা কোনো সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে আরো অনেক চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।'

সুর কৃষ্ণ ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টে পতাকা বহন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেছে সুর কৃষ্ণ। 

জেএ /এইচজেএস