ক্রীড়াবিদদের আতুরঘড় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, সাঁতারসহ অসংখ্য খেলার তারকা ক্রীড়াবিদের জন্ম এই প্রতিষ্ঠান থেকেই। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকেএসপি থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় উঠে আসলেও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় সংখ্যা আশানুরুপ কমই। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া সেই দিকটি অনুভব করে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউট’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউট এখনো একটি ধারণা। সেই ধারণাকে বাস্তবায়ন করতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের একটি কমিটি করেছে। বিকেএসপির পরিচালক প্রশিক্ষণ কর্ণেল মিজানুর রহমান আহ্বায়ক, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সদস্য সচিব আর কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিকেএসপির সাবেক পরিচালক ফারুকুল ইসলাম, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, বিকেএসপির হেড কোচ ড.মেহেদী হাসান, লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক ক্রীড়া পরিচালক মশিউর রহমান, বিসিবির ফিজিওথেরাপিস্ট মোজাদ্দেদ সানি। সাত সদস্যের এই কমিটি সম্প্রতি একটি অনলাইন সভাও করেছে।

কমিটির আহ্বায়ক বিকেএসপির পরিচালক প্রশিক্ষণ কর্ণেল মিজানুর রহমান বলেন, 'বিকেএসপিতে এইচএসসি পর্যন্ত ক্রীড়াবিদরা থাকেন। এরপর বিভিন্ন সংস্থায়-ফেডারেশনের অধীনে চলে যায়। নানা সীমাবদ্ধতায় অনেক ফেডারেশন ক্রীড়াবিদদের নিয়মিত অনুশীলনে রাখতে পারে না। ফলে অনেক ভালো ক্রীড়াবিদ আন্তর্জাতিক বা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারেন না অনুশীলন ও পরিচর্যার অভাবে। স্পোর্টস ইন্সটিউট প্রতি খেলার সম্ভাবনাময় সেরাদের নিবিড় অনুশীলন ও পরিচর্যার জন্য গড়ে তোলা হবে।'

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই আধুনিয়াকন ও সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার কথা। তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও কার্যত সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হয়নি। বিকেএসপির সাবেক কোচ ও বর্তমান বিসিবি’র পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম স্পোর্টস ইন্সটিউট সম্পর্কে বলেন, 'বিকেএসপি ১৫০০ খেলোয়াড় নিয়ে কাজ করছে। স্পোর্টস ইন্সটিউট একেবারে বিশেষায়িত খেলোয়াড়দের জন্যই হবে। সেখানে প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধা হবে সম্পূর্ণ বিজ্ঞান নির্ভর। কোচের মানও হবে অত্যন্ত উন্নত।’

অনুশীলন সরঞ্জাম ও বিজ্ঞান নির্ভর কোচিংয়ের একটু ব্যাখ্যাও দিলেন বিশিষ্ট ক্রিকেট কোচ, 'আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যে সরঞ্জাম ও প্রস্তুতি প্রয়োজন এর সবই থাকবে। প্রতিটি খেলার জন্য বিশেষায়িত বিদেশি কোচও থাকবেন। অনুশীলন, সরঞ্জামের পাশাপাশি পুষ্টি, চিকিৎসা, আবাসন সব কিছুই হবে যৌক্তিকমানের।’

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বাংলাদেশ স্পোর্টস ইন্সটিউট ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা- বিকেএসপি থাকতে নতুন আরেকটি স্পোর্টস ইন্সটিউটি কেন? বিকেএসপির হেড কোচ ও ইন্সটিউট কমিটির সদস্য ড.মেহেদী হাসানের ব্যাখ্যা, 'বিকেএসপি ফেডারেশনগুলোর পাইপলাইন হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলাদা একটি ইন্সটিউটি অবশ্যই থাকা দরকার। যারা একেবারে উচ্চ পর্যায়ের ট্রেনিং পাবে।'

বিকেএসপিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের উপর বিকেএসপির সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকে। জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়রা সাধারণত কোনো সংস্থা/ক্লাবের এবং সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের। স্পোর্টস ইন্সটিউটের সেই খেলোয়াড়ের উপর কর্তৃত্বের বিষয়ে বিকেএসপির হেড কোচ বলেন, 'মাত্র একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামনে আমরা আরো চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে আরো অনেক খুটিনাটি বিষয়ে উঠে আসবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য পেতে হলে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ জেতা আমেরিকা, চীনসহ সবারই আলাদা বিশেষায়িত এ রকম ইন্সটিউট রয়েছে।’

বিকেএসপি নানা সমস্যায় জর্জরিত। সেখানে পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত স্পোর্টস ইন্সটিউট করতে ক্যাম্পাস, অর্থ, জনবল অনেক কিছুই প্রয়োজন। এই বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, 'এটি করতে অবশ্যই আর্থিক সাহায্য ও ভিত্তি প্রয়োজন হবে। সরকারের নির্দেশে আমরা একটি কাঠামো দাড় করাব। আমাদের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।'

বিকেএসপির সাবেক পরিচালক ফারুকুল ইসলাম অনলাইন সভায় উপস্থিত ছিলেন। বিকেএসপিতে দীর্ঘদিন কাজ করা এই সংগঠক অবশ্য আরো একটা সভার পর মন্তব্য করতে চাইলেন, 'অনলাইন প্রথম সভায় একেবার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সশরীরে একটি সভা হলে তখন অনেক বিষয় সুচারুরূপে উঠে আসবে।'

২১ আগস্ট ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অফিস আদেশের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করেছে। এক মাসের মধ্যে ইনস্টিটিউটের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি, অর্ন্তভূক্ত বিভাগ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সুবিধাদি-ফলাফল নিয়ে সুপারিশ প্রদান করতে বলা হয়েছে। প্রথম সভায় একেবারে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আরো কয়েকটি সভা করে এই প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগাম ও প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট প্রদান করবে এই কমিটি। প্রয়োজনে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারে।

এজেড/এইচজেএস