জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম অভিভাবক সংস্থা। ক্রীড়া সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান হলেও গত এক-দুই দশকে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারেই মনোযোগ ছিল সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের। ফলে ২০০৬ সালের পর থেকে কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

দীর্ঘ ১৯ বছর পর আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দুই জন কোচ নিয়োগ দিয়েছে। প্রশিক্ষক গ্রেড তিন পদে যোগ দিয়েছেন ওয়াহিদুল ইসলাম ও মো. রায়হান চৌধুরি। আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এনডিসি তাদের শুভেচ্ছা জানান। এর আগে সাবেক তারকা ক্রীড়াবিদরা কোচ ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। সময়ের পরিক্রমায় তারা একে একে অবসর নেওয়ায় পদ শূন্য হতে থাকে। সক্রিয় কোচের সংখ্যা সম্প্রতি দশেরও কম ছিল। এনএসসি একাধিকবার কোচ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি। বয়সসীমা, ডিপ্লোমা সনদ ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চাকরি বিধিমালা ১৯৯৫ অনুসরণ করে এবার শেষ পর্যন্ত দুইজন কোচ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২৬ কোচের শূন্য পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। পদের বিপরীতে জমা পড়ে ১৭৮টি আবেদন। যাচাই-বাছাই শেষে ৮ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। লিখিত ও মৌখিক পর্ব পেরিয়ে রায়হান ও ওয়াহিদুল চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। রায়হান হ্যান্ডবল ও ওয়াহিদুল ইসলাম কাজ করবেন সাঁতারের প্রশিক্ষক হিসেবে। দুই জনেরই জাতীয় পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি ডিপ্লোমা সনদও আছে। সরকার ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিধিমালা অনুযায়ী বয়সসীমার মধ্যে থাকায় তারা যোগদান করতে পেরেছেন। দুই জনই স্ব স্ব ডিসিপ্লিনে ভালো ক্রীড়াবিদ তৈরির পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বর্তমানে ক্রীড়া খাতে জনবল বৃদ্ধি করতে চায়। কোচের বাকি থাকা অবশিষ্ট শূন্য পদে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে জানা গেছে। কোচরাই খেলোয়াড় তৈরি করেন। ফুটবল, ক্রিকেট, আরচ্যারি বাদে দেশের অন্য সকল ফেডারেশনের কোচ রাখার সামর্থ্য নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে কোচ না রাখতে পারলে সেই খেলার খেলোয়াড়দের তুলে আনা ও জাতীয় পর্যায়ের কোচিংয়ে একটা বড় ঘাটতি থেকে যায়। সেটা পূরণে এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বদ্ধপরিকর। শুধু কোচ নয়, প্রশাসনিক অন্যান্য পদেও নিয়োগ ও যোগদান প্রক্রিয়া এখন চলমান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে।

১০ জুন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ জাতীয় স্টেডিয়াম ঢাকায় আয়োজন করতে চায় বাফুফে। সম্প্রতি এএফসি ম্যাচ কমিশনার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শেষের তাগিদ দিয়েছেন বাফুফেকে। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আজ ঠিকাদারদের তলব করেছিল। ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মো. আজমুল হক বলেন, ‘ফ্লাডলাইট বাদে বাকি সকল ঠিকাদারই চলতি মাসের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করেছেন। ২৮ এপ্রিলের মধ্যে ফ্লাডলাইট বাদে বাকি সবকিছু একেবারে পরিপূর্ণ থাকবে। ১০ মে’র মধ্যে চার টাওয়ারে ফ্লাডলাইট সম্পূর্ণ সচল এবং খেলার আগেই গ্যালারি শেডে লাইটের কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’ 

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ঠিকাদাররা সঠিক মান রক্ষা করে না। অল্প কিছুদিন পরই আবার সংস্কার ব্যয় করতে হয়। এতে খেলাধুলা আয়োজনে নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়ে ফেডারেশনগুলো। ক্রীড়াবিদরা সঠিক পারফরম্যান্স করতে পারেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রের অর্থও ব্যয় হয় অনেক। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বর্তমান পরিচালক তাই ঠিকাদারদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনো প্রকল্পের কাজ কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে করছে আমরা সেটা পর্যালোচনা করছি। নির্দেশিত মান অনুসরণ না করলে সেই প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত হবে এবং সেই প্রতিষ্ঠান আর কাজ পাবে না। আমরা মানের ক্ষেত্রে আপোষহীন।’

এজেড/এএইচএস