সার্চ কমিটির মেয়াদ শেষ, ক্রীড়াঙ্গনে কতটুকু সংস্কার হলো?
ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের লক্ষ্যে ২৯ আগস্ট গঠিত হয়েছিল সার্চ কমিটি। সেই অফিস আদেশে ২ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব পেশ করার ডেডলাইন ছিল। পাঁচ সদস্যের সেই কমিটিতে ১ অক্টোবর এক সদস্য রদবদল হয়। ১ অক্টোবরের অফিস আদেশে কোনো সময়সীমা ছিল না। ২০ মার্চ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০ এপ্রিলের মধ্যে সার্চ কমিটির কাজ সম্পন্ন করার জন্য একটি চিঠি দেয়। এরপর মন্ত্রণালয় আরেক চিঠিতে ১০ মে পর্যন্ত সার্চ কমিটির মেয়াদ বাড়িয়েছিল। গতকাল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, এই কমিটির মেয়াদ আর বাড়ছে না।
সার্চ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা চলছে ক্রীড়াঙ্গন সংস্কার কতটুকু হলো? সার্চ কমিটির আহ্বায়ক সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জোবায়েদুর রহমান রানা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ফেডারেশনের কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা আমরা সম্পূর্ণ করেছি। যে ফেডারেশনগুলোর কমিটি বাকি রয়েছে সেগুলোর তালিকা আমরা আগামীকাল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে হস্তান্তর করব। এর মধ্য দিয়ে কমিটি গঠনের কর্মকাণ্ড শেষ হবে।’
বিজ্ঞাপন
দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা ৫৫। ফুটবল, ক্রিকেট বাদে বাকি ৫৩ ফেডারেশন নিয়ে কাজ করেছে সার্চ কমিটি। ইতোমধ্যে ২৮ ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়েছে। শুটিং ফেডারেশন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকি ২৪ ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাবনা আগামীকাল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে উপস্থাপন করবে সার্চ কমিটি।
সার্চ কমিটি গঠনের অফিস আদেশে ছিল- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ আলোকে ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও প্রতিনিধি মনোনয়ন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন পেশ। কারণ গঠনতন্ত্রের দুর্বলতার ব্যবহারে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন অনেকে অনেক ফেডারেশনের পদে বসেন। আবার ক্রীড়াঙ্গনের অনেক পুরোনো লোকও গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা না থাকায় পদ ছাড়েন না। এই বিষয়গুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনাও ছিল সার্চ কমিটির কার্যপরিধিতে। এই বিষয়ে এখনও সরকার/ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে কোনো সুপারিশ বা প্রস্তাবনা দিতে পারেনি সার্চ কমিটি।
বিজ্ঞাপন
গঠনতান্ত্রিক বিষয়ে সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা বলেন, ‘অফিস আদেশে মূলত গঠনতন্ত্র ও নীতিমালা পর্যালোচনা করে সুপারিশ থাকলেও পরবর্তীতে কমিটি গঠনের কাজও করতে হয়েছে। কমিটি গঠনের পাশাপাশি ৫৩ ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র নিয়ে আমাদের কাজ করা আছে। বলা যায় গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত ৬০ শতাংশ কাজই আমরা করে রেখেছি। গঠনতন্ত্র নিয়ে জেলা-বিভাগীয় কমিটিগুলোর সঙ্গে বসতে চেয়েছিলাম। এখনও সব জেলায় কমিটি না হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা করতে চেয়েছিলাম, কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া নয়।’
ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে মুখের বদল হয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা গঠনতন্ত্র পরিবর্তন না হলে ক্রীড়াঙ্গনের স্থায়ী পরিবর্তন আসবে না। তাই সার্চ কমিটি কিছু বিষয় নিজেদের প্রস্তাবনায় রেখেছেন। ‘সভাপতি-সেক্রেটারি গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে একই ব্যক্তি দুইয়ের অধিক নয়। এটার পাশাপাশি আমরা অন্য পদেও দুইবারের বেশি নয়। যেমন কেউ দুইবার সদস্য থাকলে তাকে যুগ্ম সম্পাদক আবার কেউ দুইবার যুগ্ম সম্পাদক থাকলে সাধারণ সম্পাদক বা সহ-সভাপতি অন্য পদে নির্বাচন করতে হবে’, বলেন সার্চ কমিটির আহ্বায়ক। ফেডারেশনগুলোর নির্বাহী কমিটিতে ৭৩ বছরের বেশি কেউ কোনো পদে থাকতে পারবেন না এমন ভাবনাও রয়েছে কমিটির।
এগুলো এখন তাদের ভাবনা-আলোচনা পর্যায়ে। পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় এবং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় জমা দিতে পারছেন না। ফলে এই বিষয়ে অসম্পূর্ণতা রয়েই গেল, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যদি চায় আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি। আর যদি তারা নিজেরাই করতে চায় সেটাও পারে। আমাদের সহায়তা চাইলে করব।’
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা গতকাল সাঁতার কমপ্লেক্সে বলেছেন, ‘গঠনতন্ত্র ও স্ট্রাকচারাল রিফরমেশন করতে হবে। সেটা হয়তো এনএসসি থেকে ওই সংক্রান্ত একটা কমিটি করে কাজ করব।’ সেই কমিটির কি নাম এবং কাদের নিয়ে হবে সেটা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের। আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সকল ফেডারেশন পুনর্গঠন হয়নি। গঠনতন্ত্র/নীতিমালা সংস্কার প্রস্তাব ও বাস্তবায়নে কত সময় লাগবে সেটা বড় ধরনের প্রশ্ন-ই।
এজেড/এইচজেএস