চলতি মাসের শেষের দিকে নেপালে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ টিটির বাছাই টুর্নামেন্ট। গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করছে না বাংলাদেশ। ফলে বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আসরে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে টিটির।

২৭ মে সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে ৩০ জনের মতো খেলোয়াড় নিয়ে ক্যাম্প শুরু করেছে টেবিল টেনিস ফেডারেশন। অনুশীলন ও ক্যাম্প চলমান থাকলেও বিশ্বকাপ টিটির বাছাইয়ে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তটা বেশ বিস্ময়কর। এ নিয়ে টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন মাকসুদ আহমেদ (সনেট) বলেন, 'আমরা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এমন আসরে দল পাঠাতে খেলোয়াড়দের সিলেকশন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খেলোয়াড়রা সিলেকশন (প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচের মাধ্যমে যাচাই) নয় পূর্বতর র‌্যাংকিং অনুযায়ী দল প্রেরণের জন্য অনড় অবস্থানে ছিল। খেলোয়াড়রা র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতেই দল চূড়ান্ত করার জন্য স্বাক্ষর করে চিঠি দিয়েছে। আমরা ক্যাম্প ও অনুশীলন করাচ্ছি কার কী অবস্থা সেটা যাচাই না করে আগের রেকর্ড অনুযায়ী দল পাঠাতে পারি না।’

জাতীয় টিটি দলের ক্যাম্পে থাকা অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় জাভেদ আহমেদ র‌্যাংকিংকে প্রাধান্য দেয়ার যৌক্তিকতা দেখিয়ে বলেন, 'আমরা কিছু দিন আগে প্রেসিডেন্টস কাপ টুর্নামেন্ট খেলেছি। সেখানে খেলোয়াড়রা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। এখন আবার নেপালের টুর্নামেন্টের জন্য একটা সিলেকশন খেলা, আবার নেপাল থেকে এসে আরেকটা সিলেকশন খেলা খেলোয়াড়দের জন্য চাপ। এজন্য আমরা খেলোয়াড়রা ফেডারেশনকে প্রায় সবাই অনুরোধ করেছিলাম সিলেকশনের পরিবর্তে র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতেই দল ঠিক করতে। কিন্তু আমরা ফেডারেশনকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।'

দেশের টিটির অন্যতম তারকা ও একাধিকবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরি সামগ্রিক বিষয়টি সমন্বয়হীনতার অভাব দেখছেন, 'সিলেকশন কিংবা র‌্যাংকিং বিষয়টি খেলোয়াড় এবং ফেডারেশন উভয় পক্ষ এক সঙ্গে বসে সুন্দর সমাধান করা যেত। খেলোয়াড়দের জন্যই ফেডারেশন। সেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফেডারেশনের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া কাম্য নয়। র‌্যাংকিংয়ে এখন যারা শীর্ষে (হৃদয়, রামহিম, জাভেদ, সোমা, মৌ, খৈ খৈ, রেশমি) রয়েছে তারাই মূলত বাংলাদেশের সেরা খেলোযাড়। টিটি খেলে খেলোয়াড়রা তেমন অর্থকড়ি বা সুযোগ-সুবিধা পায় না খেলোয়াড়রা। ফলে খেলোয়াড়দের দাবিগুলো ফেডারেশনের গুরুত্ব দিয়ে সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করা উচিত ছিল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ নেই এটা সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের টিটির ক্ষতি।'

নেপালে অনুষ্ঠিতব্য টিটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা ছিল। এমন আসরে না যাওয়ায় বাংলাদেশের টিটির জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতিকর। বিষয়টি স্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি শৃঙ্খলার স্বার্থে। নীতি এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে আমরা আপোস করতে চাইনি। খেলোয়াড়দের জন্য এটি একটি বার্তা। আমরা খেলোয়াড়দের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও নিয়মের বিষয়গুলো রপ্ত করাব। তাদেরকে আমরা দায়ও দিচ্ছি না কারণ তারা সিলেকশন বা পরীক্ষা সংস্কৃতির মধ্যে আগে অভ্যস্ত ছিল না।' ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নির্ভর অনেক ডিসিপ্লিনে র‍্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে (কিংবা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে নানা সময়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে নারী ফুটবলে কোচের সঙ্গে বিদ্রোহ করে ১৮ জন সিনিয়র ফুটবলার অনুশীলন বর্জন করেছিলেন। বাফুফে ১৮ জন বাদ দিয়েই নারী দলকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেলিয়েছে। সেখানে বয়স ভিত্তিক পর্যায়ের খেলোয়াড়রাই মূলত অংশগ্রহণ করেছে। টিটি ক্যাম্পেও জুনিয়র অনেক খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের সিলেকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঠালেও অন্তত বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব থাকত। সেই পথে না হাটার কারণ নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য, 'আমাদের কাছে স্বাক্ষরিত যে চিঠি রয়েছে সেখানে সিনিয়রদের পাশাপাশি জুনিয়রদেরও স্বাক্ষর রয়েছে।’ ফেডারেশনের অনুমান, জুনিয়র খেলোয়াড়রা সিনিয়রদের দ্বারা প্রভাবিত। আবার খেলোয়াড়দের ভাষ্য, ফেডারেশন নিজেদের দৃঢ়তা দেখাতে দল পাঠায়নি। বাংলাদেশের টেবিল টেনিসে খেলোয়াড়-ফেডারেশন সংকট নতুন কিছু নয়। 

এজেড/এইচজেএস