নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ টিটির বাছাইয়ে বাংলাদেশ চরম ব্যর্থ হয়েছে। নারী ও পুরুষ দুই বিভাগেই বাংলাদেশ দল পাঁচ দেশের মধ্যে পঞ্চম হয়েছে। ফলে চার দেশ পুরস্কার প্রদান মঞ্চে পদক হাতে দাঁড়ালেও বাংলাদেশই ছিল একমাত্র শূন্য হাতে। 

বাংলাদেশ টেবিল টেনিস দলের সাবেক কোচ মোঃ আলী এই ফলাফলে খুবই হতাশ। তিনি বলেন, 'বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। সেখানে উল্টো একেবারে শূন্য হাতে ফিরছে বাংলাদেশ। এটা আমাদের টেবিল টেনিসের জন্য খুব দুঃখজনক। পরিকল্পনাহীনতাই এজন্য বড় কারণ। টুর্নামেন্টের মাত্র সাত দিন আগে খেলোয়াড় জেনেছে খেলতে হবে।'

সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরি ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করলে আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে। তার মতে, 'বাংলাদেশ কিন্তু নেপাল, মালদ্বীপের সঙ্গে লড়াই করে হেরেছে। দু’টি খেলা ২-২ পর্যায়ে ছিল। বাংলাদেশ শেষে হেরেছে। সেখানে খেলোয়াড়দের টিপস, নির্দেশনা প্রয়োজন ছিল কোচ থেকে। যিনি কাঠমান্ডুতে কোচ হিসেবে গেছেন তার প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা রেখেই বলব এমন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে আরো অভিজ্ঞ ও দক্ষ কোচ প্রয়োজন ছিল। দেশে এ রকম কোচ রয়েছেন। তারা গেলে হয়তো দু’টি ম্যাচই ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।' ম্যাচ সিচুয়েশনে পরামর্শ প্রদানে অনভিজ্ঞতা ছাড়াও বিভিন্ন সেটে সঠিক খেলোয়াড় নির্বাচন না করার বিষয়ও হারের কারণ হিসেবে দেখছেন টিটি সংশ্লিষ্ট অনেকে।

বিকেএসপির কোচ মোস্তফা বিল্লাহ, মোঃ আলী সহ আরো অনেক কোচ রয়েছেন। বিশ্বকাপ টিটির বাছাইয়ে ফেডারেশন কোচ নির্ধারণ করেছে সৈয়দ মাহমুদুজ্জামান শাহেদকে। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সনেট কাঠমান্ডু থেকে বলেন, 'মোস্তফা অবশ্যই অভিজ্ঞ কোচ কিন্তু সে মূলত বিকেএসপির কোচ। বিকেএসপিতে তার ব্যস্ততা রয়েছে। ক্যাম্পে সব সময় থাকা ও আরো নানা বিবেচনায় আমরা শাহেদকে দায়িত্ব দিয়েছি। সে তার পর্যায় থেকে সর্বোচ্চটাই দিয়েছে। এটা বাস্তবিক টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সিচুয়েশনে অভিজ্ঞ কেউ থাকলে সেটা অবশ্যই খেলায় কিছুটা ভিন্নতা আসতে পারত।’

বাংলাদেশ টেবিল টেনিস দল গত কয়েক বছর খানিকটা সাফল্যের পথে হাটছিল। সেই আলোকে এবার বিশ্বকাপ টিটির বাছাইয়ে কাঠমান্ডুতে অন্তত পুরুষ দল ভারতের পর থাকবে এমন প্রত্যাশা ছিল। সেখানে নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভারত চার ম্যাচই হেরে সবার শেষে। দলের এই ব্যর্থতা খুব কাছ থেকে দেখেছেন সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, '২৭ মে থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিক ক্যাম্প ও অনুশীলন শুরু হয়েছে। বিগত সময়ে অনেক দিন খেলোয়াড়রা ক্যাম্প ও প্রতিযোগিতার বাইরে ছিল। এই টুর্নামেন্ট আমাদের বাস্তবতা নির্দেশ করল। খেলোয়াড়দের আরো প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আমাদের ফেডারেশনের জন্যও শিক্ষণীয় যে প্রতিযোগিতামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করা।’

বাংলাদেশ পুরুষ দল কখনো মালদ্বীপের বিপক্ষে হারেনি। সেই হার নিয়ে টেবিল টেনিস অঙ্গনে প্রচুর সমালোচনা চলছে। নারী দলের চেয়ে পুরুষ দলের উপর প্রত্যাশা ছিল বেশি। পুরুষ দলের অন্যতম খেলোয়াড় হৃদয় ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুতিহীনতাকে সামনে আনলেন, 'আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। জাতীয় ব্যাডমিন্টনের জন্য ইনডোরে অনেক দিন অনুশীলন করতে পারিনি।'

জাভেদ আহমেদ প্রায় এক যুগ টিটির জাতীয় দলে খেলছেন। মালদ্বীপের বিপক্ষে হারায় তার উপর সমালোচনা হচ্ছে বেশি। এজন্য খানিকটা বিমর্ষ এই খেলোয়াড়, 'কোনো খেলার খেলোয়াড়ই যখন মাঠে নামে জয়ের চেষ্টাই করে আর সেখানে দেশের হয়ে খেললে তো অবশ্যই শতভাগ উজাড় করে। আমরা এখানে সবাই সবার মতো চেষ্টা করেছি জেতার কিন্তু পারিনি; খেলা-ধূলায় এটা হয়।’

সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরি সামগ্রিক ব্যর্থতার জন্য ফেডারেশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, 'এ রকম ব্যর্থতায় আলোচনা-সমালোচনা হবেই। খেলোয়াড়রা পারেনি তারাও সমালোচনার মুখে পড়বে সেটাও স্বাভাবিক। তবে এবার যে ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে বাংলাদেশ দল কাঠমান্ডু বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গেল। এ রকম না হলে সুন্দর-স্বাভাবিক পরিবেশে গেলে ফলাফল অবশ্যই ভালো হতে পারত। সেই সামর্থ্য এই খেলোয়াড়দের রয়েছে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফেডারেশনের সমন্বয়হীনতার জন্য সিলেকশন-র‌্যাংকিং দ্বন্দ্বে একবার দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। আবার সেটা সপ্তাহ দু’য়েক পর বদলে দল পাঠায়। এতে ফেডারেশনও দায় এড়াতে পারে না।’

বাংলাদেশ টিটি দল আজ রাতে দেশে ফিরবে। সন্ধ্যা ছয়টায় ফ্লাইট তিন ঘন্টা বিলম্ব হয়েছে। এই টুর্নামেন্ট পর্যালোচনা করে টিটি ফেডারেশন সামনে আরো পরিকল্পিতভাবে পথ চলতে চায়।

এজেড/এইচজেএস