চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ১০ হাজার মিটার দৌড়ে জিতলেন পদক
এবারের জাতীয় অ্যাথলেটিক্স একগাদা চমক দেখিয়েছে। আজ শেষ দিনে নতুন চমক দেখিয়েছেন নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার নুপুর কর্মকার। মাইটকুমড়া মিতালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী ১০ হাজার মিটার দৌড়ে তৃতীয় হয়েছেন। এবারের জাতীয় প্রতিযোগিতায় তো বটেই সাম্প্রতিক সময়ে এত কম বয়সে কারো পদক জয়ের ঘটনা নেই।
এত অল্প বয়সে জাতীয় প্রতিযোগিতায় পদক পেয়ে খুব খুশি নুপুর, ‘দীলিপ স্যার আমাকে খেলায় এনেছেন। মেডেল পেয়ে খুব ভালো লাগছে। দিদির মতো খেলতে চাই।’
বিজ্ঞাপন
নুপুরের বড় বোন নন্দিনীও অ্যাথলেট। নন্দিনী কর্মকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে খেলেন। এবার বড় বোন পদক না পেলেও ছোট বোন পদক পেয়েছেন। নুপুর ও নন্দিনীর বাবা লোহাগড়া বাজারে ও তাদের মা বাসায় কাজ করেন। হতদরিদ্র নুপুরদের আবাসন সংকটও ছিল চরমে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প হওয়ার পর তারা এখন সেখানে থাকছেন।
দুই বোনেরই অ্যাথলেটিক্সে হাতেখড়ি নড়াইলের স্থানীয় প্রশিক্ষক দিলীপের হাত ধরে। দশ হাজার মিটার দৌড় শেষ করতে পারেন না অনেক সময় সিনিয়র অ্যাথলেটরাও। ছোট্ট নুপুরকে দশ হাজার মিটারে ভরসা রাখার কারণ সম্পর্কে দিলীপ বলেন, ‘ও বড় দূরত্বে ভালো দৌড়ায়। এজন্য দশ হাজারে দিয়েছি। দৌড়ানোর ধৈর্য্য রয়েছে ওর কখনো থামে না।’
বিজ্ঞাপন
এবারের মিটে নতুন চারটি ইভেন্ট সংযুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নারীদের ১০ হাজার মিটার দৌড়। চতুর্থ শ্রেণীর বালিকা জাতীয় প্রতিযোগিতায় এসেই পদক জিতল। ফলে প্রতিযোগিতার মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার অবকাশ থাকলেও নুপুরের কোচ দিলীপের যুক্তি, ‘এই ইভেন্ট প্রথম ও নুপুর প্রথম অংশ নিলেও টাইমিং কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড মানের হয়েছে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বলার সুযোগ নেই।’
নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্সের যুগ্ম সম্পাদক দিলীপ নিজে একজন স্কুল শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি নড়াইলে অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষণ দেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সার্ভিসেস বাহিনীর পদকে প্রাধান্য থাকে। এর মধ্যে নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা দু’টি পদক পেয়েছে। নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা ছাড়াও নড়াইলের সাংসদ সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি অ্যাথলেটিক্সে জোড় দিয়েছে বলে জানান দিলীপ, ‘মাশরাফির নড়াইল এক্সপ্রেসের অ্যাথলেটিক্সের দায়িত্ব দিয়েছে আমার উপর। আমি চেষ্টা করছি নড়াইল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার।’
৩ দিনে মোট ৪০টি ইভেন্ট হয়েছে। ২২টি স্বর্ণ, ১৫টি রৌপ্য ও ১২টি ব্রোঞ্জ মোট ৪৯টি পদক নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রতিযোগিতা শেষ করেছে পদক তালিকার শীর্ষে থেকে। ১১টি স্বর্ণ, ১৯ টি রৌপ্য এবং ১১টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৪২টি পদক নিয়ে ২য় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং ০৩ টি স্বর্ণ, ০১টি রৌপ্য ও ৫টি ব্রোঞ্জ সহ মোট ০৯টি পদক নিয়ে ৩য় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
তৃতীয় দিনে একটি জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। ৩,০০০ হাজার মিটার ইভেন্টে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রিংকী বিশ্বাস সময় নিয়েছেন ১০:২৫.৩০ মিনিট। এর আগে এই ইভেন্টে ২০২১সালে সর্বশেষ তারই রেকর্ড ছিল ১০:৪৩.৩০ মিনিটের। নিজের রেকর্ডই তিনি ভেঙেছেন আজ।
তিনদিন ব্যাপী প্রতিযোগিতার মোট ৩টি নতুন জাতীয় রেকর্ড। ১০০ মিটার (পুরুষ) নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুক্তরাজ্য বংশভূত প্রবাসী ইমরানুর রহমান ও হাইজাম্প মহিলা ইভেন্টে ১.৭১ মিটার লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উম্মে হাফসা রুমকী।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আসিফ ৫,০০০ হাজার মিটার ও ম্যারাথন ইভেন্টে স্বর্ণ এবং ৩,০০০হাজার মিটার ও ৪*৪০০ মিটার রিলে ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়ার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। একই সংস্থার রত্না ৮০০ মিটার, ১৫০০ মিটার ও ৫,০০০হাজার মিটার ইভেন্টে স্বর্ণ এবং ৩,০০০ মিটার ইভেন্টে রৌপ্য পদক পাওয়ায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন।
এজেড/এনইউ