ব্যস্ততাপূর্ণ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স। হাজারো লোকের ভিড়ে স্টেডিয়াম চত্ত্বরে পঁচাশি বছর পেরুনো রোইং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ খোরশেদ আলমকে আলাদা করা যায় সহজেই। লাঠির উপর ভর দিয়ে ঠুক ঠুক করে স্টেডিয়াম এলাকায় চলাফেরা করেন। করোনার সময়ের মধ্যেও অনেক ঝুঁকির মধ্যে এভাবে কষ্ট করেন আসেন তিনি।  

এত ঝুঁকি - কষ্ট করে তাকে আসতে তো হবেই বাংলাদেশ নৌকাবাইচ (রোইং) ফেডারেশনের বৈঠা যে তার হাতেই। ফুটবল, ক্রিকেট বাদে অন্য ফেডারেশনগুলোতে সাধারণ সম্পাদকই মূলত ফেডারেশন পরিচালনা করেন। এই বয়োবৃদ্ধ লোকের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একটি ফেডারেশন চালানো যে কঠিন সেটা তার চালচলনই বোঝা যায়।

এরপরও তিনি দায়িত্ব উপভোগ করছেন বলে জানিয়েছিলেন কয়েক দিন আগে, ‘‘স্বাধীনতার আগে আমি লগি-বৈঠা আন্দোলন করেছি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি ও সম্পর্ক আছে। তিনি স্বাধীনতার পর বলেছিলেন, ‘তুই সব সময় বৈঠা নিয়ে আছিস, নৌকাবাইচ নিয়ে থাক।’ স্বাধীনতার পর থেকে আমি নৌকাবাইচের সঙ্গে যুক্ত হই এখনো আছি। বয়স হয়েছে, পরিবার চিন্তা করে। এরপরও আমার এখানে আসতে ভালো লাগে।’’ 

গত ত্রিশ বছর রোইংয়ের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ঘুরে-ফিরে ছিল প্রয়াত আব্দুল আউয়াল মজনু ও হাজী খোরশেদের মধ্যেই। মজনু প্রয়াত হওয়ার পর এ নিয়ে টানা দুই মেয়াদে হাজী খোরশেদ সাধারণ সম্পাদক। ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা খোরশেদের বয়স প্রায় নব্বই। এত বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি গত বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

কমিটির অন্য কেউ এ পদে কেন আগ্রহী নন এই প্রশ্নের উত্তরে সহ-সভাপতি মনিরুল আলম বলেন, ‘এটা সত্য ও বাস্তব তার জন্য বয়স একটি প্রতিবন্ধকতা। সে নিজে এই পদে থাকতে চান। রোইংয়ের সবাই তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। তার আগ্রহ ও অনুরোধের প্রেক্ষিতেই মূলত এই পদে তাকে দিয়ে আমরা অন্যরা মিলে একটি কমিটি গঠন করি।’ 

রোইং ফেডারেশনে নির্বাচন হলেও ব্রীজ ফেডারেশন চলছে অ্যাডহক ভিত্তিতে। ২০১৭ সালে ফের অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এমএ কুদ্দুস। সেই ২০১৭ সালেই তার বয়স ছিল প্রায় পঁচাত্তর। এখন তিনি আশির কাছাকাছি। দুই যুগ আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা ব্রিজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বকে চাপ মনে করেন না, ‘সংখ্যার বিচারে ৭৮ অবশ্যই বড়। তবে এই বয়সেও আমি ব্রিজ ফেডারেশন সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ, সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। পরিবারকে যেমন সময় দেই তেমনি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করি।’ 

প্রয়াত সংগঠক বাদল রায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোষাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় একটি নীতিমালার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জাতীয় ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদকের বয়স ৭২ বছরের বেশি হতে পারবে না। নিজে ৭৮ হলেও এই বিষয়টি সমর্থনযোগ্য মনে করেন তিনি, ‘এটি চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা করতেই পারে।’ 

যে কোনো সংগঠনের সর্বোচ্চ পদ সভাপতি। তিনি সভা আহ্বান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রুলিং ক্ষমতাও সভাপতির। রোইং ও ব্রিজ দুই ফেডারেশনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়সের ব্যবধান দুই দশকের বেশি হওয়ায় অনেক সময় চিন্তা-চেতনার পার্থক্য হয়।

ব্রিজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে সভাপতির বয়স একটু বেশি হওয়া উচিত মনে করেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে সভাপতি বয়সে একটু বেশি হওয়া  সাংগঠনিক কারণে ভালো। আমার সভাপতির বয়স এখনো ষাটের নিচে। তিনি আমাকে ৭৫ বছরের তরুণ বলে সম্বোধন করেন সব সময়।’ 

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়সের পার্থক্য হিসেবে বেশির ভাগ ফেডারেশনের সভাপতির বয়স বেশি সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে। হাতেগোণা কয়েকটি ফেডারেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স প্রায় কাছাকাছি দুই-এক বছরের কম বেশি। রোইং ও ব্রিজের মতো এত অসমতা অন্য কোনো ফেডারেশনে নেই।

এই অসমতার জন্য অন্য ফেডারশেনগুলো থেকে এই দুই ফেডারেশনের কার্যক্রমে কিছুটা ভিন্নতাও চোখে পড়ে। ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতি বছর এশিয়ান গেমসের ট্রায়াল নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি করোনা পরিস্থিতি ও এশিয়ান গেমসের গুরুত্ব বিবেচনা করে অক্টোবর-নভেম্বরে ট্রায়ালের প্রস্তাব করেছিলেন। সভাপতির এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্রিজ ফেডারেশনের কাছে এশিয়ান গেমসের জন্য খেলোয়াড় তালিকা পাঠাতে বলেছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ট্রায়ালের মাধ্যমেই খেলোয়াড় বাছাই করতে চান সাধারণ সম্পাদক, ‘বাংলাদেশকে যারা প্রতিনিধিত্ব করবে তারা অবশ্যই যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে হবে।’ চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সভাপতি অবশ্য আগের রেকর্ড বিবেচনার পক্ষে। 

এজেড/এটি