বাইকের মাইলেজ ড্রপ? কার্বুরেটরের যে যত্ন না নিলে ক্ষতি হবেই

মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ মাইলেজ কমে যাওয়া। বেশিরভাগ বাইকারই চান তাদের বাইকের মাইলেজ ঠিক থাকুক বা আরও বাড়ুক। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইলেজ কমার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকলেও অন্যতম প্রধান কারণ হলো কার্বুরেটরের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ফুয়েল ইনজেকশন (এফআই) প্রযুক্তির বাইক বাদে বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলকারী বেশিরভাগ বাইকই কার্বুরেটর ফুয়েল সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল।
কার্বুরেটর সাধারণত বাইকের অন্য যন্ত্রাংশের মতো সহজে নষ্ট হয় না, তবে সঠিক যত্নের অভাবে এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভেজাল জ্বালানির ব্যবহার একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় বাইকাররা নিজের অজান্তেই ভেজাল জ্বালানি ব্যবহার করেন, যা বাইকের ইঞ্জিনের পাশাপাশি কার্বুরেটরেরও মারাত্মক ক্ষতি করে; যা ফেলে দেয় বাড়তি ভোগান্তিতেও।
তবে সঠিক যত্ন নিলে কার্বুরেটরের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে শুধু মাইলেজই বাড়বে না, বরং জ্বালানি সাশ্রয় হবে এবং বাইকের পারফরম্যান্সও গতি পাবে।
কার্বুরেটরের কাজ কী?
কার্বুরেটরের প্রধান কাজ হলো ইঞ্জিনের জন্য বাতাস ও জ্বালানির নিখুঁত একটি মিশ্রণ তৈরি করা এবং তা ইঞ্জিনের সিলিন্ডারে সরবরাহ করা। ইঞ্জিনের সর্বোত্তম পারফরম্যান্সের জন্য জ্বালানি ও বাতাসের সঠিক অনুপাত নিশ্চিত করা জরুরি। এক কথায়, বাইকের মাইলেজ ঠিক রাখা এবং জ্বালানি সাশ্রয় করা কার্বুরেটরের কাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন
যেসব কারণে কার্বুরেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ভেজাল বা নিম্নমানের জ্বালানি: ভেজাল পেট্রোল বা অকটেন ব্যবহারে কার্বুরেটরের ভেতরের সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ, যেমন—জেট বা নিডল-এ ময়লা জমে। এর ফলে জ্বালানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স কমে যায়।
নিয়মিত পরিষ্কার না করা: দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে কার্বুরেটরের ভেতরে ধুলাবালি, তেল বা ময়লা জমে যেতে পারে। এর কারণে বাতাস ও জ্বালানির মিশ্রণে গড়মিল দেখা দেয়, যা মাইলেজ কমিয়ে দেয়।
পুরনো বা ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ: কার্বুরেটরের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরনো হয়ে গেলে সঠিক টিউনিং করা সম্ভব হয় না। এতে জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা হয়।
আর্দ্রতা বা পানি: বর্ষাকালে বা আর্দ্র পরিবেশে কার্বুরেটরের ভেতরে পানি বা বাষ্প জমে মরিচা ধরতে পারে, যা এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে।
ভুল টিউনিং: সঠিক টিউনিং না করা হলে বাতাস ও জ্বালানির অনুপাত ঠিক থাকে না। এর ফলে ইঞ্জিন চালু হতে সমস্যা, অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া বের হওয়া বা শক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
কার্বুরেটরের যত্ন নেবেন যেভাবে
নিয়মিত পরিষ্কার করা: কার্বুরেটর খুলে বিশেষভাবে তৈরি ক্লিনার (জেট ক্লিনার স্প্রে) দিয়ে এর ভেতরের প্রতিটি অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। এই স্প্রে কার্বুরেটরে জমে থাকা তেল, ময়লা, এমনকি মরিচা দূর করতেও বেশ কার্যকর।
ভালো মানের জ্বালানি ব্যবহার: কার্বুরেটর ও ইঞ্জিন ভালো রাখতে সব সময় বিশ্বস্ত পাম্প থেকে ভালো মানের জ্বালানি নিন। খোলা বা ভেজাল তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি মাইলেজ কমানোর অন্যতম প্রধান কারণ।
সঠিক টিউনিং করা: বাইকের ইঞ্জিনে সঠিক পরিমাণে বাতাস এবং জ্বালানির মিশ্রণ পাঠানো জরুরি। কার্বুরেটর টিউনিংয়ের মাধ্যমে এই মিশ্রণের অনুপাত ঠিক করা হয়। এই অনুপাত সঠিক না থাকলে ইঞ্জিন মসৃণভাবে চলে না, জ্বালানি বেশি খরচ হয় এবং মাইলেজ কমে যায়। তাই নিয়মিত টিউনিং মাইলেজ ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বদলে ফেলা: কার্বুরেটরের কোনো অংশ, যেমন—ফ্লোট, পিন বা জেট ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেরি না করে তা পরিবর্তন করুন। পুরনো বা ভাঙা যন্ত্রাংশ ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়।
পেশাদার মেকানিকের সাহায্য নেওয়া: যদি নিজে কার্বুরেটর পরিষ্কার বা টিউন করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী না হন, তবে একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ মেকানিকের সাহায্য নিন। একজন পেশাদার মেকানিক সঠিকভাবে সমস্যা নির্ণয় করে এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে পারবেন।
ডিএ